শেষের পাতা
শিশু হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড
পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না, তদন্তে কমিটি
স্টাফ রিপোর্টার
২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবাররাজধানীর শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউতে লাগা অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের সময় লেগেছে প্রায় ১ ঘণ্টা। এসময়ে হাসপাতালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। শুক্রবার দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট। পরে বেলা ২টা ৩৯ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরাও যোগ দেন। প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সম্পর্কে পুরোপুরি তথ্য না দিতে পারলেও ফায়ার সার্ভিস ধারণা করছে এসি বিস্ফোরণ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। তবে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আগুন লাগার আগে হাসপাতালের আইসিইউতে যেসব শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তাদের জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আইসিইউতে চিকিৎসা নেয়া শিশুদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগুনের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটিতে আছেন একজন মেনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি । তারা তিনদিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবেন। তিনি বলেন, এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সেবা চালু করা। আমাদের নিজস্ব টেকনিক্যাল টিম, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার, ডিপিডিসি ও ফায়ার সার্ভিস চেক করে যদি সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে আমরা নিচতলার সেবা চালু করতে চাই। এভাবে ধীরে ধীরে আমরা সকল ফ্লোরের সেবা চালু করতে চাই। সেবা শুরু করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছু এখন বলতে পারছি না। গত মঙ্গলবারও শিশু হাসপাতালে আগুন লেগেছিল।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে আগুনের বিষয়টি বড় কিছু না। খাবার গরম করার চুলায় রোগীর স্বজনের কাপড়ে আগুন লেগেছিল। যা নার্সসহ স্টাফদের চেষ্টায় সঙ্গে সঙ্গে নিভানো হয়। আজকের যে আগুন সেটির বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিচালক বলেন, হাসপাতালে দুই শতাধিক এসি রয়েছে। শীত শেষে গরম আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি এসি সার্ভিসিং করা হয়। সেদিনের আগুনের পরেই আমাদের নার্সরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেছে। আজকের আগুনে ধোঁয়া বেশি হওয়ার কারণে সেখানে কেউ যেতে পারেনি। যার কারণে আমরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করতে পারিনি। ফায়ার সার্ভিসকে জানাতে হয়েছে। দ্রুত ফায়ার সার্ভিস চলে আসায় কোনো হতাহত হয়নি। সবাই নিরাপদে আছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর জানিয়েছে, শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না।
আগুন নিয়ন্ত্রণ শেষে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, দেশের এত বড় একটি শিশু হাসপাতাল অথচ এখানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছাড়া আর কিছুই নেই। যার ফলে কার্ডিয়াক আইসিইউতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় লেগেছে। কার্ডিয়াক আইসিইউতে থাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। তবে, তদন্তের পর ঘটনা সম্পর্কে পুরোপুরি জানা যাবে। তিনি বলেন, এখানে পানির ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় পাশের মানসিক হাসপাতালের পানির রিজার্ভ ট্যাংকি থেকে পানি আনা হয়। ছিল না পর্যাপ্ত ফায়ার হাইড্রেন্ট। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর আমাদের ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালায়। তবে আমরা কোনো ভুক্তভোগীকে পাইনি। আগুন লাগার পরপরই আইসিইউতে থাকা সবাইকে সরিয়ে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বজনরা। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা ধারণা করছি আইসিইউর ভেতরে এসি ছিল, সেটা থেকে হয়তো আগুন লেগেছে। তবে তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, আগুনের সঙ্গে সঙ্গে বেশকিছু যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিছু ভালো আছে। পাশাপাশি আইসিইউ রুমে যে অক্সিজেন সংযোগ ছিল সেটি আগুনের কারণে পুড়ে যায়। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা সময় লেগেছে। পরবর্তী সময়ে ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় অক্সিজেন লাইনটি বন্ধ করা হয়েছে।
বাহ্ সরকারি পর্যায়ে এই অবস্থা তাহলে আর কি বলার আছে।ব্রাভো।তার উপর শিশু হাসপাতাল।কিন্তু কাউকে দায়ীও করা যাবেনা।উন্নয়ন একেই বলে।