ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

এক্সক্লুসিভ

গুঁড়িয়ে দেয়া হলো বঙ্গবাজার

স্টাফ রিপোর্টার
১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার
mzamin

আয়নাল হোসেন। বঙ্গবাজার অস্থায়ী কাপড়ের মার্কেটে আয়নালের একটি শিশুদের পোশাকের দোকান ছিল। ঈদের ছুটিতে গ্রামে থাকা অবস্থায়ই বুলডোজার দিয়ে তার দোকান গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে মঙ্গলবার ঢাকা ছুটে এসে দোকানের মালামালের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাননি। নেই দোকানের বাঁশ খুঁটিও।  দোকান ও মালামাল হারিয়ে পাগলপ্রায় আয়নাল হোসেন। এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করেও মালামালের কোনো সন্ধান পাননি। আয়নাল বলেন, আমার মালপত্র সব লুট হয়ে গেছে। ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।  দোকান ভাঙা হবে আগে থেকে এমন কোনো নোটিশও পাইনি।

বিজ্ঞাপন
জানতে পারলে গ্রামের বাড়িতে যেতাম না। বঙ্গবাজারে দুই দশক ধরে ব্যবসা করে আসছেন লক্ষ্মীপুরের মো. ইসমাইল। গত বছর বঙ্গবাজার মার্কেটে লাগা ভয়াবহ আগুনে তার দোকানের সবকিছু পুড়ে  ছাঁই হয়ে যায়। নিঃস্ব ইসমাইল সেই ধকল কাটাতে বঙ্গবাজারে অস্থায়ী দোকানো ব্যবসা করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সোমবার তার অস্থায়ী দোকানটি উচ্ছেদ করা হয়। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ইসমাইল। দোকান ভাঙার খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইসমাইল। 

এসময় তিনি বলেন, আমরা আসলে কিছু বলতে পারছি না। দোকান উচ্ছেদে আমাদের বুক ফেটে যাচ্ছে। দোকান উচ্ছেদে আমরা পথে বইসা গেলাম। দয়া করে আমাদের কথাগুলো  একটু প্রচার করিয়েন। ইসমাইলের মতো অনেক ব্যবসায়ী দোকান উচ্ছেদের ঘটনায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই দোকান উচ্ছেদের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, সোমবার থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সম্পত্তি বিভাগের উদ্যোগে বঙ্গবাজারে অস্থায়ী দোকান ভাঙার কাজ শুরু হয়। মঙ্গলবারও উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখে ঢাকা সিটি করপোরেশন। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গবাজারের অস্থায়ী মার্কেটের সব জিনিসপত্র এরই মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। কেবলমাত্র পুরো মাঠ জুড়ে বাঁশের কাঠামো রয়েছে। উচ্ছেদের দায়িত্ব পালন করছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই)। 

ভেকুর সাহায্যে সামনের দিক থেকে বাঁশের ও কাঠ দিয়ে তৈরি করা অস্থায়ী দোকান ভেঙে এক পাশে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর সেসব বাঁশ ও কাঠ স্থানীয় ভাসমান মানুষজন যে যেভাবে পারছে নিয়ে যাচ্ছে। রিকশা, ভ্যানগাড়ি এমনকি সিএনজির উপরে তুলেও বাঁশ নিয়ে যেতে দেখা যায়। গত বছরের ৪ই এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যায় পাইকারি কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজার। এরপর সেখানে অস্থায়ীভাবে বসে দোকান। এবার ঈদে খুব একটা বেচাবিক্রি না হলেও পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন দোকানিরা। আজ তা ভেঙে দেয়া হলো। পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারকে আধুনিক রূপদান এবং সেখানে ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। বঙ্গবাজারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হচ্ছে বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান। ১০ তলা বিশিষ্ট ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর ও বেজমেন্ট ছাড়াও থাকবে মোট ৮টি ফ্লোর। 

১.৭৯ একর জায়গার ওপর নির্মিত হতে যাওয়া বহুতল ভবনে থাকবে তিন হাজার ৪২টি দোকান। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০ থেকে ১০০ স্কয়ার ফুট। ভবনটিতে থাকবে ৮টি লিফট, এর মধ্যে ৪টি থাকবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য। আর বাকি ৪টি কার্গো লিফট থাকবে মালামাল ওঠা-নামানোর জন্য। এ ছাড়া থাকছে গাড়ি পার্কিং, খাবারের দোকান, সমিতির অফিস, নিরাপত্তাকর্মী এবং সেখানকার কর্মীদের আবাসন ব্যবস্থা। ভবনটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৮ কোটি টাকা। দোকান ভেঙে ফেলার বিষয়ে সেখানের ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিক কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে, তারা পরিবার নিয়ে চিন্তিত। এই ব্যবসা কোথায়, কীভাবে করবেন, তা তারা এখনো জানেন না।

পাঠকের মতামত

যুগ যুগ ধরে এই বাজারটির একটি স্থায়ী ব্যবস্থার অতি প্রয়োজন।

মাকছুদুর রহমান
১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ২:৪৭ অপরাহ্ন

আগুন কে' কেন লাগিয়েছে দেশের মানুষ এখনো বুঝেন নাই!!!

মাসউদ
১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ৭:৪৯ অপরাহ্ন

মহৎ উদ্দেশ্যেই নতুন স্থাপনার উদ্যেগ নেওয়া হয়। কিন্তু এখানে বানিজ্যের পশরা সাজিয়ে বসে স্বার্থান্বেষী ইতরেরা।

Mohammad Jahirul Isl
১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ৬:২৪ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status