ঢাকা, ১৫ মে ২০২৪, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

যুক্তরাষ্ট্রে নিহত জনির সিলেটের বাসায় মাতম

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার
mzamin

আমেরিকার বাফেলো শহরে নিহত সিলেটের আবু সালেহ মো. ইউসুফ জনির বাসায় শোকের মাতম চলছে। কান্না থামছে না পিতা-মাতার। সবসময় হাসিখুশি থাকা ছেলেটি সুখের সন্ধানে আমেরিকা গিয়ে লাশ হলো। এমন ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। নিহত জনির চাচা শাহাবউদ্দিন আহমদ গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাদের কাছে আমেরিকা থেকে খবর আসে; জনি দুর্ঘটনায় পড়েছে। কী দুর্ঘটনা সেটি বোঝার আগেই খবর আসে; জনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনা শোনার পর থেকে আমরা নির্বাক হয়ে যাই। এমন খবরের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি জানান- বাবুল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে রঙের কাজ করতো সে। বাবুলকে যখন ওখানকার সন্ত্রাসীরা হত্যা করছিলো এ দৃশ্য দেখে এগিয়ে আসে জনি।

বিজ্ঞাপন
পরে দু’জনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার খবর শুনে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন পিতা নুরুল ইসলাম মেম্বার। ছেলের মৃত্যুর শোকে তিনি কাতর হয়ে পড়েছেন। ক’দিন আগেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। এমন ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। জানালেন; যারা জনিকে খুন করেছে তাদের যেন শাস্তি হয়। তার ছেলে সবসময় হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করতো। গোটা পরিবারকে সে একাই সামলে রাখতো বলে জানান তিনি। আবু সালেহ মো. ইউসুফের মূল বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটের ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের তিনছটি গ্রামে। তার পিতা নুরুল হক মেম্বার এলাকায় পরিচিত লোক। তিনি পরপর দু’বার জনপ্রতিনিধি ছিলেন। প্রায় ৩০ বছর আগে তারা নগরের ইসলামপুর (মেজরটিলা) এলাকার ডি ব্লকের ১১৯/২ বাসা নির্মাণ করেন। নুরুল হক মেম্বার ও তার ভাইয়েরা মিলে চারতলা ভবন করে চারতলায় চার ভাই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। নুরুল হকের তিন ছেলে এক মেয়ে। এরমধ্যে সবার বড় হচ্ছে ইউসুফ জনি। তার বোন সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। তার ছোট ভাই ঢাকার একটি কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন- ইউসুফ জনি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতো। ওই কোম্পানিতে চাকরিরত অবস্থায় প্রায় বছর খানেক আগে পরিবার নিয়ে সে আমেরিকা পাড়ি জমায়। সেখানে বাফেলো সিটিতে সে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলো। সঙ্গে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতো। কুমিল্লার বাবুলের সঙ্গে রঙের কাজের সূত্রে পরিচয় জনির। তার সঙ্গেই বাফেলোতে বসবাস ও কাজ করছেন। আমেরিকায় যাওয়ার পর থেকে সে আর দেশে আসেনি। তবে; বড় ভাই হিসেবে ওখান থেকে পরিবারের সব খবর রাখতো। ইউসুফ জনির মা নাজিনা বেগম জৈন্তাপুর সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। পরিবারের বড় ছেলে ইউসুফ জনি তার ছিল আদরের ধন। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে তিনিও বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ছেলের কাছে আবদার ছিল; নাতনিদের নিয়ে দেশে আসার জন্য। জনিও বলেছিলো আসবে। কিন্তু মায়ের সেই আবদার আর রক্ষা করতে পারলেন না জনি। আমেরিকার বাফেলো সিটিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি পরপারে পাড়ি জমালেন। পিতা-মাতা একটাই সান্ত্বনা ছেলের লাশ তারা একবার দেখতে চান। দেশে এনে যেন কবর দেয়া হয় জনির। সেই ইচ্ছা তাদের। পারিবারিক সূত্র জানায়- হত্যার শিকার ইউসুফ জনি ও বাবুল উদ্দিন বাফেলোর জেনার স্ট্রিটে ১০০ ব্লকে একটি বাসার রঙয়ের কাজে ছিলেন। এ সময় কয়েকজন যুবক বাবুল উদ্দিনের কাছে চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় তারা বাবুল উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করলে তাকে রক্ষা করতে ইউসুফ জনি এগিয়ে গেলে অস্ত্রধারীরা তাদের দু’জনকে গুলি করে হত্যা করে। মর্মান্তিক এই হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বাফেলো বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকাহত দুটি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাফেলোর বাঙালি কমিউনিটি লিডার। পাশাপাশি বাফেলোতে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বাফেলোতে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিরা জানিয়েছেন- বাফেলোতে সবসময় ভয়ে থাকতে হয়। ওখানকার অস্ত্রধারীরা নানা অঘটন ঘটনায়। এ কারণে কোথায় কখন কী হয়; এ নিয়ে সবসময় শঙ্কায় থাকতে হয় বাঙালিদের। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

রাস্তায় রাস্তায় ট্যাংক/ হামাস-ইসরাইল তীব্র লড়াই

সমমনাদের সঙ্গে বিএনপি’র বৈঠক/ যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে নেয়ার পরামর্শ

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status