ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

ওসমানীর সাদেকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার
mzamin

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার কারাবন্দি ব্রাদার ইসরাইল আলী সাদেক, ব্রাদার আমিনুল ইসলামসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। দুদক আইনের বিভিন্ন ধারায় মহানগর জজ ও স্পেশাল সিনিয়র জজ হাবিবুর রহমান আদালতে মঙ্গলবার এ মামলার আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী ও হাসপাতালের আউটসোর্সিং বিভাগের সাবেক কর্মচারী কামাল বাজার এলাকার ইসলাম উদ্দিন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর নওশাদ আহমদ চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, যে এজাহার দাখিল করা হয়েছে সেটি আদালতের স্পেশাল পিটিশন মামলা নং-২/২০২৪ নামে নথিভুক্ত হয়েছে। সেটি এখন আদেশের জন্য রাখা হয়েছে। দুদক আইনে এ মামলাটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- হাসপাতালে স্টাফ নার্স কারাবন্দি ইসরাইল আলী সাদেক, স্টাফ নার্স কানাবন্দি আমিনুল ইসলাম, স্টাফ নার্স সুমন চন্দ্র দেব, পুলিশ কনস্টেবল জনী চৌধুরী, ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবীব, হাসপাতালের কর্মচারী আব্দুল জব্বার ও আব্দুল হাকিম সুমন। মামলায় ১২ জনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাদী ইসলাম উদ্দিন অভিযোগ করেছেন- দীর্ঘ ৭ বছর তিনি হাসপাতালের কোম্পানি যমুনা, সানমুন ক্লিনিং এন্ড সিকিউরিটি সার্ভিস এবং আউট সোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে পরিছন্নকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারা সেবামূলক এ হাসপাতালের সংঘবদ্ধ দুর্নীতি চক্রের সক্রিয় সদস্যও।

বিজ্ঞাপন
এই চক্রের সদস্যেরা দুর্নীতি করে অবৈধভাবে শ’ শ’ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত ইসরাইল আলী সাদেক, অপর আসামি রওশন হাবিব ও আব্দুল জব্বারের কাছে হাসপাতালের শ’ শ’ কর্মচারী জিম্মি রয়েছে। এজাহারে ইসলাম উদ্দিন আরও জানান, অভিযুক্তরা সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, হাসপাতালে ঘুষ বাণিজ্য, সরকারি ওষুধ চুরি, দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অনিয়ম দুর্নীতির মতো, অপরাধ করে এবং বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীদের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা বখরা আদায় করে। এমনকি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের ওয়ার্ড, কেবিন, বেড, বারন্দা বেড ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা করার কথা বলে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে। এ ছাড়া ভর্তি রোগীদের অপারেশনের সিরিয়াল পাইয়ে দেয়া ও দ্রুত অপারেশন করিয়ে দিবে বলে টাকা গ্রহণও করে। হাসপাতালে দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু করে হাসপাতালের কয়েকজনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। ইসলাম উদ্দিন অভিযোগে জানান, সিলেট বিভাগের প্রায় আড়াই কোটি গরিব, অসহায়, খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এ হাসপাতাল। অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে প্রতারণা, দুর্নীতি, টাকা আত্মসাৎ, চুরি, বাটপারি, টেন্ডার বাণিজ্য, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, বিনামূল্যে সরকারি ওষুধ প্রদান না করে, ওটি থেকে ওষুধ চুরি করে দালাল দিয়ে বাইরের ফার্মেসিতে বিক্রি করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। তাদের অন্যায় আচরণে, অপরাধে, দুর্নীতিতে, প্রতারণায় জনগণের কাছে সরকারি এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সুনাম দিন দিন ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে জানান তিনি। এজাহারে তিনি উল্লেখিত ৮ আসামির দুর্নীতির পৃথক বিবরণ ও তাদের অঢেল সম্পদের বিষয়টিও তুলে ধরেন। এদিকে- গত ৯ই জানুয়ারি ওসমানী হাসপাতালে গোয়েন্দাা অভিযান চালিয়ে ঘুষের টাকা লেনদেনের সময় স্টাফ নার্স আমিুনল ও সুমনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় হাসপাতালের দুর্নীতির হোতা সাদেককে প্রধান আসামি এবং গ্রেপ্তার হওয়া আমিনুল ও সুমনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ। এ মামলায় সাদেক প্রথমে পলাতক থাকলেও পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে। বর্তমানে সাদেক ও আমিনুল কারাগারে রয়েছে। মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি’র তরফ থেকে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ মামলা দায়েরের পর থেকে হাসপাতালের দুর্নীতির নানা চিত্র বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি দুদকের পাঠানো অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত রিপোর্ট ঢাকায় প্রেরণ করেছে। মামলার বাদী ইসলাম উদ্দিন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সাদেক ও ওই চক্রের সদস্যদের কাছে জিম্মি ছিল হাসপাতাল। সাদেক জেলে গেলেও তার সহযোগীরা আগের মতোই হাসপাতালে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে। তাদের কাছে হাসপাতালের সবাই জিম্মি বলে দাবি করেন তিনি। বাদীপক্ষ ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী কানন আলম জানিয়েছেন, আদালত মামলার এজাহার ও আমাদের বক্তব্য শুনে মামলাটি নথিভুক্ত করেছেন। ভুক্তভোগীর আর্জিসহ অভিযুক্তদের হাসপাতালের নানা দিক এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। সেবামূলক খাতে সীমাহীন দুর্নীতির বিচার দাবি করে আদালতে মামলাটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status