ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

মাদক বিক্রির হাট

ফাহিমা আক্তার সুমি
২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

রাজধানীর তেজগাঁও রেললাইনে মাদকের হাট নতুন নয়। এখানে প্রকাশ্যে বিক্রি হয় মাদক। সন্ধ্যা নামলেই জমজমাট হয় এই বাজার। নারী-পুরুষের পাশাপাশি যুক্ত থাকে  অল্প বয়সী শিশু কিশোররাও। আবার কেউ কেউ থাকেন পাগলের ছদ্মবেশে। তাদের অনেকের হাতে থাকে কাপড়ের ব্যাগ। তাতে রাখেন কাগজে মোড়ানো গাঁজার পুঁটলি। ক্রেতারাও ভাসমান এসব বিক্রেতার কাছ থেকে মাদক কিনে দ্রুত সটকে পড়েন। জানা যায়, দিনে মাদক কেনা-বেচা শুরু হলেও সন্ধ্যা নামলে আরও বেড়ে যায় মাদক কারবারীদের দৌরাত্ম্য। প্রকাশ্যে চলে মাদকের জমজমাট এই বাজার।

বিজ্ঞাপন
পুলিশের সাইরেনের আওয়াজ ও ক্যামেরা দেখলেই সতর্ক হয়ে যায় মাদক বিক্রেতারা।

সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান চললেও এখানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাদক। পুলিশের গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে মূল সড়ক দিয়ে যায়। এসব গাড়ি দেখলেই সতর্ক হয়ে এদিক-সেদিক নড়েচড়ে বসে তারা। কাওরান বাজার রেললাইন ও এফডিসি ঘুরে দেখা যায়, ঠিক সন্ধ্যায় রেললাইনের মুখে দাঁড়িয়ে শিশু কোলে এক নারী। তার মতো একটু দূরে দূরে দাঁড়িয়ে আছেন আরও ৯-১০ জন। ওই পথ দিয়ে হেঁটে যেতেই নারী বললেন, ওই কয়ডা লাগবে? কয় টাকার? দেখা গেল, বিক্রেতাদের হাঁকডাকের মধ্যে মাদক কিনে দ্রুত সরে যাচ্ছে ক্রেতারা। কেউ পায়ে হেঁটে আসেন, কেউ মোটর সাইকেলে আবার কেউ প্রাইভেটকারে আবার কেউ প্রাইভেটকার থেকে নেমে গাঁজা রাখা পুরো ব্যাগটি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এই মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কাছ থেকে ধনী-গরিব সবাই মাদক ক্রয় করে। সন্ধ্যার পরে বেশি লোক আসে। ৫০-১০০ টাকার পুঁটলা বিক্রি হয়। আবার কেউ কেউ বেশি টাকায় ক্রয় করে।
মাদক বিক্রেতা সজীব মানবজমিনকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আমরা এখানে ঘোরাঘুরি করি। আমাদের কাজই এটা। এগুলো পুঁটলা হিসেবে বিক্রি হয়। এক পোঁটলা ১০০ টাকা। আবার ৫০ টাকারও আছে। এখানে পুরুষ-মহিলা সবাই এগুলো বিক্রি করে। প্রতি প্যাকেটে আড়াইশ’ টাকা লাভ হয়। এদিকে একশ’ গ্রাম পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দাম। ওই ১০০ গ্রামে দশ হাজার টাকা পাবেন। পাঁচ হাজারে পাঁচ হাজার টাকাই লাভ। তিনি বলেন, অনেকে এখান থেকে নিয়ে এলাকায় বিক্রি করে। এখানে রাত দশটা-এগারোটা পর্যন্ত বেচাকেনা হয় জমজমাট। গাঁজা সবাই খায়। সব ভালো ভালো লোকে কিনে নিচ্ছে এগুলো। এই ব্যবসায় কোনো লস হয় না। এটা তো কাঁচামালের ব্যবসা। গাঁজা বিক্রি করার টাকায় সংসার চালাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এই মাদকগুলো আসে। সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের লোক এসে দিয়ে যায়।  

রেললাইন ধরে আরেকটু সামনের দিকে গেলেই বাচ্চা কোলে এক নারী দৌড়ে আসেন। তার আরেক হাতে কাপড়ের একটি লাল ব্যাগে গাঁজার ছোট ছোট পুঁটলা রাখা। কাছে আসতেই ওই নারী বলেন, একশ’ করে। কয়টা লাগবো আপনার? এখানে কোনো ঝামেলা নেই, কয়ডা নিবেন? অনেকদিন ধরে আছি এই ব্যবসায়। কেউ কিছু কইতে পারবো না। অল্প বয়সী আরেক বিক্রেতা রেললাইনের পাশে লাল ব্যাগ হাতে নিয়ে বসে আছেন। লোকজন দেখলেই তাকে ডাকতে দেখা যায় ‘একশ’ একশ’।
রেললাইনের পাশে রিকশা থামিয়ে তার উপরে বসে আছেন মিলন নামে এক চালক। তিনি বলেন, সারা দিনে অনেক পরিশ্রম করি। পরিবারের সবাই গ্রামে থাকে। রাতে দুই একটা সিগারেটে ভরে অল্প শুঁকনা খাই। এখানে বিকাল থেকেই নারী-পুরুষ মিলে মাদক বিক্রি করে।

কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী হাকিম বলেন, ওদের যন্ত্রণায় রেললাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে পারি না। মানুষ দেখলেই হাঁকডাক শুরু করে। রোজার আগে আরও বেশি খারাপ অবস্থা ছিল। মানুষ দেখলেই বলে কয়টা নিবেন?  এরা তো খুচরা বিক্রেতা। এদের যারা এই পথে নামিয়েছে তারা তো সামনে আসে না।

একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাত গভীর হলে মাদকের বেচাকেনা আরও জমজমাট হয়। রেললাইনের মুখ থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসায়ীরা বসে থাকে। লোক আসলেই তাদের ডাকতে থাকে। শুধু শ্রমিকেরা নয়, এখান থেকে অনেক নামিদামি মানুষেরা মাদক কিনছে। অল্প বয়সী শিশু- কিশোররাও মাদক কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত। কখনো কখনো পুলিশ দেখলে কাওরান বাজারের দিকে দৌড়ে পালায়। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিসি) পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. তানভীর মমতাজ মানবজমিনকে বলেন, দিনে-রাতে যারা বিক্রি করছে তারা খুচরা বিক্রেতা। আমরা কিন্তু কাজ করছি অনেক পেছন থেকে। আমি যদি ওইখান থেকে কাজ না করতে পারি এগুলোকে বন্ধ করতে পারবো না। মূল গডফাদার, সরবরাহকারী কিংবা যিনি ব্যবসায়ী তাদেরকে আমরা হিট করার চেষ্টা করছি। আমরা বিভিন্ন স্পটে রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কমলাপুর, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেখানে শোনা যাচ্ছে যে রাতে কিংবা দিনে মাদক বিক্রি হচ্ছে সেখানে অভিযান চালাচ্ছি, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। আমরা চেষ্টা করছি মূল জায়গা থেকে বন্ধ করতে তাহলে এটি ধীরে ধীরে কমে আসবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এসকল মাদক বিক্রেতা মাদক বিক্রির চেষ্টা করে আবার ধরাও পড়ে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status