উপজেলা নির্বাচনে সিলেট বিএনপি’র কঠোর নজরদারি

চলমান উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সিলেটের নেতাদের প্রতি কঠোর হয়েছে বিএনপি। গতকাল দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে প্রার্থী হওয়া ৯ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সিলেট বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, যেসব নেতারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদের    সঙ্গে থাকবে না বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। এজন্য নজরদারি বাড়ানো হবে। যদি প্রার্থী হওয়া বহিষ্কৃত নেতাদের পক্ষে বিএনপি’র কেউ প্রচারণা কিংবা সহযোগিতায় নামেন তাদেরও বহিষ্কার করা হবে। এক্ষেত্রে বিএনপি কাউকে ছাড় দেবে না বলে জানিয়েছেন নেতারা। এবারের প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে কয়েকটি উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। শুরু থেকেই বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা বলে আসছেন এ দফার উপজেলার নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। এ কারণে সিলেট বিএনপি’র বেশিরভাগ ইউনিটের নেতারা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। কেউ কেউ ফরম সংগ্রহ করতে টাকা জমা দিলেও পরবর্তী নির্বাচনী লড়াই থেকে বিরত থাকেন।

এক্ষেত্রে জেলার নেতারাও কঠোর ভূমিকা পালন করেন। 

সিলেট জেলার কেবলমাত্র বিশ্বনাথ উপজেলা ছাড়া এখন পর্যন্ত সব উপজেলাতেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। সিলেট জেলা বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক লোকমান আহমদ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, প্রায় ৩ বছর ধরে জনগণের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু দল নির্বাচনে না যাওয়ায় আমরাও যাইনি। ফলাফল কী হবে সেটি তো জানা রয়েছে। এ কারণে আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই। একই কথা জামায়াতের নেতাদের। সিলেটের কয়েকটি উপজেলায় জামায়াতের প্রার্থীরা শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন। প্রার্থী হলে জয়ের সম্ভাবনা ছিল। শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমাদানকারী জামায়াত নেতারা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। সিলেটে প্রথম ধাপে যে ৪টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে সেগুলোতে জাতীয় পার্টি কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের নেতারা মুখোমুখি হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর এলাকা বিশ্বনাথ। প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’র একাধিক নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলের নেতারা জানিয়েছেন, ইলিয়াস আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে বারণ থাকা সত্ত্বেও নেতারা ভোটের মাঠে নেমেছেন। এজন্য গতকাল প্রার্থী হওয়া নেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব স্বাক্ষরিত সিলেট বিভাগের প্রার্থী হওয়া বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক গোউছ খান, বিশ্বনাথ স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক কাউছার খান, খাজাঞ্জি ইউনিয়ন বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রব তাপাদার, উপজেলা বিএনপি’র মহিলা বিষয়ক সম্পাদক স্বপ্না শাহীন বেগম, শাল্লা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি গণেশ চন্দ্র দাস, দিরাই উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাপ মিয়া, বড়লেখা উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক রাহেলা আক্তার হাসনা, সুনামগঞ্জ মহিলা দলের সহ-সভাপতি ছবি চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া। 

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক পত্রে ৯ নেতা-নেত্রীকে বহিষ্কারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী। তিনি গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। সাজানো, পাতানো নির্বাচন বয়কট করছে বিএনপি। এই অবস্থায় যারা দলের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির খড়গ নামছে। গতকাল দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিভিন্ন ধাপে আর যারা প্রার্থী হবেন তাদের উপর একইভাবে শাস্তির খড়গ নেমে আসবে বলে জানান তিনি। কাইয়ূম চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রার্থী যারা হয়েছেন তারা তো দলের নন। এখন তাদের পক্ষে বিএনপি’র যেসব নেতারা প্রচারণা কিংবা নির্বাচনী কাজে সংযুক্ত হবে তাদের বিরুদ্ধেও দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এজন্য জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে নজরদারি অব্যাহত থাকবে। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, মাঠ প্রস্তুত থাকার পরও দলের সিদ্ধান্ত মেনে সিলেটের অনেক নেতা প্রার্থী হননি। দলের সিদ্ধান্তের প্রতি অবিচল থেকেছেন। যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এরপরও তারা সরে যাননি। এ কারণে তাদের উপর দল থেকে শাস্তির খড়গ নেমেছে। এই সময়ে দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে সকল পর্যায়ের নেতাদের আহ্বান জানান তিনি।