ঢাকা, ৫ মে ২০২৪, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

মনুনদী রক্ষা বাঁধের উন্নয়ন কাজ বন্ধের নেপথ্যে...

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

ধীরগতিতে চলা মনুনদীর বাঁধ উন্নয়ন কাজ হঠাৎ করে এখন অনেকটাই বন্ধ। নানা কারণে চলমান নদী শাসনের কাজ বন্ধ হওয়াতে চরম দুশ্চিন্তায় নদী 
তীরের বাসিন্দারা। আসন্ন বর্ষায় ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা নদীর অর্ধশতাধিক স্পট নিয়ে বাড়ছে তাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। মনুনদী শাসনের জন্য ৯শ’ ৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার টাকার একটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প ২০২০ সালে অনুমোদনের পরও নানা জটিলতায় তার সুফল এখনো না পাওয়াতে ক্ষোভের অন্ত নেই উপকারভোগীদের। জানা যায় চলমান ‘মনুনদীর ভাঙন রোধে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ প্রকল্পের বাঁধের কাজ বন্ধ থাকার নেপথ্যে ভূমি অধিগ্রহণ আর তার জটিলতা নিরসনে মামলা ও আদালত কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার পরোয়ানা জারি। প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা ছাড়ে ধীরগতি, সীমান্ত এলাকায় ১৪শ’ মিটার কাজে প্রতিবন্ধকতা, তৈরিকৃত সিসি ব্লক প্লেসিংয়ে সমস্যা, বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণে জটিলতা, মনু ব্যারেজের সকল গেট বোরো চাষের জন্য বন্ধ থাকায় উজানের পানি বৃদ্ধির কারণে কাজের ব্যাঘাত। এ ছাড়াও প্রকল্পটিতে যে ভূমি অধিগ্রহণের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল। এসব কারণে  মৌলভীবাজারে ‘মনুনদীর ভাঙন রোধে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ বাঁধের কাজ বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে বাঁধের নকশা বরাবর অন্যের মালিকানাধীন ভূমি থাকায় এবং ওই সকল জমির স্থানীয় মালিকদের বাধা প্রদানে ওই জায়গায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পাউবো’র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এমনটি বলছে পাউবো’র মৌলভীবাজার কার্যালয়।

বিজ্ঞাপন
জানা যায় প্রকল্পটির আওতায় অনুমোদিত নকশা মোতাবেক ৮৫.৯১০ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্বাসন/পুনরাকৃতিকরণ কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে। মনুনদীর দু’পাড়ের বাঁধের কাজে নকশা মোতাবেক যে অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন হচ্ছে তা ওই জমির মালিকগণ স্বেচ্ছায় দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় কাজ বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনুমোদিত প্রকল্পে ওই জমি অধিগ্রহণের আওতাভুক্ত নয়। ইতিমধ্যে ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্বাসন/পুনরাকৃতিকরণ কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। তবে ওই ৩৭ কিলোমিটার কাজ বাস্তবায়নকালে ৩টি স্থানের বাঁধ সংলগ্ন রেকর্ডভুক্ত জমির মালিকগণ বাপাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সম্প্রতি ১টি স্থানে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার পরোয়ানা জারি করেছেন। পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন- বাঁধের জন্য সাড়ে ৪শ’ একর জমি অধিগ্রহণে আরও ৩শ’ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ পেলে এই সমস্যা দূর হতো। প্রকল্পের বাঁধ পুনর্বাসন/পুনরেকত্রীকরণ কাজ বাস্তবায়ন এলাকায় দণ্ডায়মান বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় তা অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবগত করা হলেও প্রয়োজনীয় অর্থের অনুুমোদিত ডিপিপিতে সংস্থান না থাকায় কাজ বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া জমি অধিগ্রহণ সমস্যা নিরসন না হওয়াতে বাঁধ সিফটিংসহ তীর প্রতিরক্ষা কাজের তৈরিকৃত সিসি ব্লক প্লেসিং করা সম্ভব হচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। তারা বার বার পাউবোকে জায়গা বুঝিয়ে দিতে তাগিদ দিচ্ছেন। এদিকে সীমান্তবর্তী ৩টি প্যাকেজের আওতায় ১৪শ’ মিটার নদী তীর সংরক্ষণমূলক কাজ বাধার কারণে বন্ধ রয়েছে। কাজ বাস্তবায়নের অনুমোতির জন্য যৌথ নদী কমিশন ভারত বরাবর প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংবলিত ডিও দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত অনুমতি না পাওয়ায় ওই স্থানের কাজ স্থগিত রয়েছে। অপরদিকে সেচ মৌসুমে বোরো ধান চাষের জন্য মনু ব্যারেজের সকল গেট বন্ধ থাকায় উজানে বাড়তি পানি থাকায় রাজনগর উপজেলাধীন স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ এবং চর অপসারণের কাজ বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত হয়। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান মনুনদীর চলমান এই প্রকল্পের বিদ্যমান নানা সমস্যা সমাধানে পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে রাজধানীতে একটি বৈঠক হয়েছে। জানা যায় ৯ শ’ ৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার টাকায় ওই কাজটি অনুমোদন পায় ২০২০ সালের জুন মাসে। কাজ  শুরু হয় ২০২১ সালের ৩০শে এপ্রিল। ২০২৩ সালের জুনে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ধাপে ধাপে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বর্ধিতকরণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রকল্পের নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা বলছেন কাজের ধীরগতি হওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল মানবজমিনকে জানান জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে মনুনদীর উন্নয়ন কাজ কোথাও বন্ধ, কোথাও ধীরগতিতে চলছে। নদীর বাঁধ এলাকার জমির বিভিন্ন মালিকানা থাকায় তাদের আপত্তি নিষ্পত্তি না করে কাজ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন- বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সরজমিন এসে সমস্যাটি দেখে সংশ্লিষ্টদের জানাবেন। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের ঝুঁকির বিষয়টি নিয়েও তারা ভাবছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চান। 
 

পাঠকের মতামত

যেখানে কাজ বন্ধ রয়েছে সেখানে গার্ড ওয়ালের মাধ্যমে সমাধান করার জোর দাবি জানাচ্ছি, তাহলে রক্ষা পাবে নদীর বাঁধ ও অনেক বসতবাড়ি।

মারজান খান
২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৭:৪৭ অপরাহ্ন

কাজের কাজ কিছুই হবেনা, এত্তো গুলো টাকা পানিতে যাবে আর কর্তাদের পকেট ভারী হবে।

ফয়েজ আহমেদ
২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ২:২৮ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status