ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার
mzamin

গরমে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। হাসপাতাল   গুলোতে এ ধরনের রোগীর উপস্থিতি কম নয়। আইসিডিডিআর,বি’তে এখন গড়ে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ ডায়রিয়ার রোগী আসছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন গত ৩ বছর ধরে এই সময়ে রোগী আরেকটু বেশি আসতো। সামনে যদি গরম বাড়ে এবং ঈদে বাড়িফেরা মানুষ এই শহরে ঢুকলে রোগীর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

ঢাকায় যারা ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি’) বা কলেরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন এ ধরনের রোগী আসছেন ঢাকার বাইরের পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও। চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়ার প্রকোপ সেভাবে বাড়েনি। তবে ঈদ পরবর্তী সময়ে সপ্তাহখানেকের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যেতে পারে। 

চিকিৎসকরা বলছেন, স্বাস্থ্য সচেতন না থাকা এসব রোগের প্রধান কারণ। একদিকে হঠাৎ গরম শুরু হয়, অন্যদিকে এসময়ে জীবাণুযুক্ত পানি পান, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস ও শিশুদের নিরাপদে না রাখা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া গরমে অনেকের মাঝে পানিশূন্যতাও তৈরি হয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন
এজন্য প্রয়োজন গরমে বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করা, ফলমূলের শরবত পান, পচা-বাসি ও বাইরের খাবার না খাওয়া এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকা।
কলেরা হাসপাতালে একাধিক রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই গরমে শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক রোগী এসে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডায়রিয়ার ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর বমি, ঘন ঘন মলত্যাগ, পেটে ব্যথা ও শরীর দুর্বল হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে গায়ে জ্বর থাকতেও দেখা যায়। তারা জানান, অনেক রোগীকে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি’র অ্যাসিটেন্ট সায়েন্টিস্ট শোয়েব বিন ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গত ক’দিনের অসহনীয় গরমে রোগীর চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী ভর্তি হন। এখন তা ৫০০ ছাড়িয়েছে। এখন যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে তা অব্যাহত থাকলে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ আরও বাড়বে।
ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে যা করণীয়: আইসিডিডিআর,বি’ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডায়রিয়া থেকে সুরক্ষিত থাকতে প্রথমত পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। পানি ফোটানোর সময় বলক উঠার পর আরও পাঁচ মিনিট চুলায় রাখুন এবং ঠাণ্ডা করে পান করুন। ফোটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি পানি বিশুদ্ধকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করা যেতে পারে। আমরা সাধারণত রাস্তার পাশের বা উন্মুক্ত স্থানের খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু মুখরোচক এসব খাবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খুব অস্বাস্থ্যকর। যা সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে দিতে পারে। এসব খাবার ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এ ছাড়া প্রতিবার খাবার আগে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। পায়খানার পর অথবা শিশুর পায়খানা পরিষ্কার করার পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। 

চিকিৎসকরা জানান, কারও ডায়রিয়া হলে ১ প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। ১০ বছরের বেশি বয়সীদের ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর ১ গ্লাস বা ২৫০ মিলিলিটার খাবার স্যালাইন খেতে হবে। শিশুদের ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর যত কেজি ওজন তত চা-চামচ বা যতটুকু পায়খানা হয়েছে আনুমানিক সেই পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শিশু বমি করলে ধীরে ধীরে যেমন- ৩ বা ৪ মিনিট পর পর ১ চা-চামচ করে খেতে দিতে হবে। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খেতে দিতে হবে। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো কোনো অবস্থাতেই বন্ধ করা যাবে না। ছয় মাসের বেশি বয়সী রোগী খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খাবেন। রোগীকে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল খাবার যেমন-ডাবের পানি, চিড়ার পানি, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া রোগীকে সাধ্যমত কোমল পানীয়, ফলের জুস, আঙুর, বেদানা খাওয়াতে হবে। ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে প্রতিদিন একটি করে জিংক ট্যাবলেট পানিতে গুলিয়ে ১০ দিন খাওয়াতে হবে। তারপরও রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে বা বেশি খারাপ হলে দ্রুত কাছাকাছি কোনো হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে হবে। চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে হবে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status