প্রথম পাতা
ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ ৪ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবারব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ বাড়ছে সরকারের এ ঋণ গ্রহণ মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকনির্ভর। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ২২শে এপ্রিল পর্যন্ত বাণিজিক ব্যাংক থেকে সরকার নিয়েছে ৬৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধ করেছে ১৯ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। এতে নিট ঋণ বেড়েছে ৪৫ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেখানে ঋণ বেড়েছিল ১০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ৭ মাসে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার চেয়ে পরিশোধ বেশি ছিল ১২০ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্রের চেয়ে এখন ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সুদহার বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার বিল বন্ডের সুদ আয়ের বিপরীতে কোনো কর দিতে হয় না। এখানে কেনারও নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই। যে কারণে এখন বিনিয়োগকারীদের অনেকে সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা তুলে বিল ও বন্ডে রাখছেন। ফলে অন্য সব ব্যবস্থার চেয়ে এখানে সুদহার বাড়ছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ধার কেন বেড়েছে, এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংকের এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সরকার সাধারণত বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রির মাধ্যমে ধার নিয়ে থাকে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আগের মতো সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড কিনছে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এসব বিল ও বন্ড কিনতে হয়। তিনি বলেন, সরকারকে ঋণ দিলে এসব বিষয় নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা করতে হয় না। ব্যাংকগুলোর জন্য এটা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ ঋণ পরিশোধ নিশ্চিত করা হয়। এসব কারণে রাষ্ট্রায়াত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোও ঋণ দেয়ার বদলে সরকারি বিল ও বন্ড কেনার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বর্তমানে ৯১, ১৮২ ও ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদের হার ১১.৩৫ শতাংশ থেকে ১১.৫০ শতাংশ। এ ছাড়া ২ থেকে ২০ বছর মেয়াদি বন্ডে বিনিয়োগ করে ১২ শতাংশ থেকে ১২.২৫ শতাংশ সুদ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে সাধারণ ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সুদ নিতে পারছে সর্বোচ্চ ১৩.৫৫ শতাংশ।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেয়া হবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়া হবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
আগের অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আলোচ্য সময়ে সরকারের ব্যাংকঋণের নিট পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে।