ঢাকা, ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

ঈদ সংখ্যা ২০২৪

এক ঝোলে কতো ‘পদ’!

ইশতিয়াক পারভেজ
১০ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার
mzamin

প্রচণ্ড খুধা! প্রায় দুই দিন ঠিকভাবে খাওয়া হয়নি। সঙ্গে থাকা সহকর্মীর তো পাগল প্রায় অবস্থা। ঠিকভাবে ঘুম না হলেও তার চলে কিন্তু খাওয়া চাই।  যে  হোটেলে উঠেছি, সেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু রান্না করে দিতে লাগবে বেশ সময়। উপায় না দেখে ছুটলাম ট্যাক্সি ডেকে। আমরা আছি ম্যাকলিওডগঞ্জ পাহাড়ের চূড়ায়। সেখানে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তার ধারে নিচের দিকে চৌকে পৌঁছালাম। একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে খাবার ম্যানু দেখতে দেখতে অর্ডারও হয়ে গেল। ভারতে আসলে প্রায় সবারই বাটার চিকেনের নেশাটা পেয়ে বসে।

বিজ্ঞাপন
তবে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে এই খাবার এড়িয়ে চলি। কিন্তু সহকর্মী বাটার চিকেন ও মাটন কারি আর ফ্রাইড রাইস অর্ডার করলেন। আমি সঙ্গে জুড়ে দিলাম মাটন ফ্রাই, ডাল আর সাদা ভাত। খাবার আসতেই খাওয়া শুরু। কিন্তু তিনটি কারির রঙ দেখে মনে মনে যা ধারণা করেছিলাম তা সত্যি হতে খুব একটা সময় লাগলো না! হ্যাঁ, বাটা চিকেন, মাটন কারি আর মাটন ফ্রায়েড আসলেই একই সাধ। সাদা ভাতের সঙ্গে ফ্রাইড রাইসের পার্থক্য শুধু এক জায়গাতেই তা হলো ডিম আর সবজি দিয়েছে একটিতে অন্যটিতে নেই। হ্যাঁ, এবার ভারত সফরে খাবার নিয়ে হিমাচল প্রদেশ থেকেই যে অভিজ্ঞতায় বাড়তি মাত্রা যোগ হবে তা হয়তো কিছুটা অনুমান করতে পেরেছিলাম। এরপর প্রায় দুই মাসের সফর, ধীরে ধীরে চেন্নাই, পুনে, দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, আহমেদাবাদ ঘুরে মনে একটাই প্রশ্ন তৈরি হলো- ভারতে আসলে এক ঝোলে কতো পদ!

 


২০২৩ ভারতে ওয়ানডে বিশ^কাপ! দৈনিক মানবজমিন-এর সিনিয়র ক্রীড়া প্রতিবেদক হিসেবে এই আসর কভার করতে আসা। এবার ভারতে আসা নিয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। বিশেষ করে আইসিসি’র অ্যাক্রেডিটেশন, ভারতের ভিসা পাওয়া সব কিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন ছিল যে বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচ হিমাচলে তা কভার করা হবে কিনা তা নিয়ে ছিল বড় অনিশ্চয়তা। তবে ভাগ্য শেষ পর্যন্ত সহায়। ভিসাটা হয়ে গেল খুব দ্রুতই। সব কিছু গোছানোই ছিল। বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচ হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা স্টেডিয়ামে। হ্যাঁ, গোটা ভারতের মধ্যে এই শহরটির নাম শুনলে আমার মনের মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দের সুর বাজতে শুরু করে। ধর্মশালাল সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের সময়। সেবারো  টাইগারদের মিশন শুরু হয়েছিল ভারতের হিমাচল প্রদেশ থেকেই। তখন থেকেই কেমন একটা আবেগ আর ভালোবাসা কাজ করে ধর্মশালা নাম শুনতেই। যাইহোক কেন এমন আবেগ সেই কথায় নয় পরেই আসি। ভিসা পেতেই টিকিটও কাটা হয়ে গেল। ধর্মশালা যেতে হলে কয়েকভাবেই যাওয়া যায়। তবে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। আর ট্রেনে গেলে সময় লাগবে প্রায় তিন দিন। বাংলাদেশ থেকে প্রথমেই আমাদের দিল্লি যেতে হলো। এখান থেকে তিন ভাবে যাওয়া যায় বিমানে, বাসে আর ট্রেনে। বিকালে দিল্লিতে পৌঁছে ধর্মশালা যাওয়ার একমাত্র পথ রাতের বাস। কিন্তু সময় লাগবে প্রায় ১২ ঘণ্টা। আর বিমানের চড়তে হলে পরদিন সকাল ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তাই সেদিন রাতটা দিল্লিতেই থাকতে হলো।

ভোর রাতে বেরিয়ে পড়লাম দিল্লির এয়ারপোর্টের জন্য। ভোর পাঁচটায় ধর্মশালার ফ্লাইট। অন্যদিকে কোলকাতা থেকে দিল্লিতে এসেছে আমাদের আরও চারজন সাংবাদিক সহকর্মী। বিমানে চেপে সবাই এক সঙ্গেই পা রাখলাম ধর্মশালা বিমানবন্দরে। আমাদের সঙ্গে থাকা চারজনই এখানে প্রথমবার। বিমান থেকে নামতে নামতেই এই শহরের প্রাণ ভোলানো দৃশ্য থেকেই তাদের মধ্যে একটি ঘোর কাজ করছে। আর আমরা যারা আগেও এসেছি তাদের মনে হলো আপন কোনো শহরে ফিরে এলাম। বিমানবন্দর থেকে আমাদের হোটেল প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। তাই দু’টি গাড়ি ভাড়া করে আমরা রওনা দিলাম। পুরো পথটা জুড়ে সবার চোখ থেকে হারিয়ে গেল দীর্ঘ সময় ভ্রমণের ক্লান্তি। আমরা নিচ থেকে উঠতে শুরু করলাম পাহাড়ের চূড়ায়। গাড়িতে চড়ে আমার পাহাড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা বেশ পুরানো। তাই খুব একটা সমস্যা হচ্ছিলো না কিন্তু মনের মধ্যে একটি উত্তেজনা কাজ করে। এক একটি পাহাড়ি বাঁক যেন হৃদ কম্পন বাড়িয়ে দেয়। ধীরে ধীরে সমতল ছেড়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে চূড়ায় যেতে যেতে সবাই যেন একটি ঘোরের মধ্যেই চলে গেল। তবে যতই উপরে উঠি ততই একটা চাপা ভয়ও কাজ করে। কারণ পাহাড়ি রাস্তার এক পাশে তাকালেই বুক ধড়ফড় করতে শুরু করে। কারণ সেখানে হাজার মাইল খাল। অবশেষে আমরা পৌঁছে গেলাম ম্যাকলিওডগঞ্জ। হ্যাঁ, এখানেই কিন্তু তিব্বতের রাজধানী। বলতে পারেন ভারতের এক প্রদেশে আরেক দেশ! যেই গল্পটাও আপনারা জানেন আর আমিও কিছুটা জানাবো। আগে জেনেই নেই কীভাবে ভারতে এক ঝোলেই হচ্ছে বহু পদ। এক হোটেলের ম্যানেজারও বিষয়টি পরিষ্কার করে বললেন- করোনার সময় থেকেই আসলে খাবার ব্যবস্থাতে এই পরিবর্তনটা আনা হয়েছে। সকালেই রান্না করা হয় বড় হাঁড়িতে ঝোল। যাকে তারা বাটার মসহালা বলে।

 

ঝোলের রহস্য ভেদ
ভারতে সবশেষ এসেছিলাম ২০১৯ এ। সেবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে এসেছিল। তখনো ভারতের খাবার নিয়ে কোনো অভিযোগের তেমন সুযোগ ছিল। তবে এবার যেন সব কিছু বদলে গেছে। দাম বেড়েছে, তেমনি রেস্টুরেন্টও বেড়েছে অনেক। ছোট-বড় খাবারের দোকানের সংখ্যা বেড়ে প্রায় তিন গুণ। আমরা যে হোটেলে উঠেছি সেখানে ভিতরে আছে কিচেন।  যেকোনো খাবার রান্না করে দিবে। আমাদের হোটেলে নাম ফরেস্ট ভিডিও। নামটাতেই বুঝতে পারছেন একপাশে বন আর অন্যপাশটা পাহাড়ে ঘেরা। হোটেলের ম্যানেজার সুরেশ^রি দিদি বলে দিলেন বাইরে খেতে ঝামেলা হলে তাকে কল করলেই রান্না করে রাখবেন। তবে ধর্মশালা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শেষ করে হোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। যে কারণে বাইরে থেকেই খাবার খেয়ে ফিরতে হয়। প্রথম এক সপ্তাহেই অবিষ্কার করলাম খাবার রান্নায় সময় বাঁচাতে দারুণ বুদ্ধি বের করেছে রেস্তরাঁগুলো। আর এই এক ঝোলেই মাছ, মাংস, চিংড়ি ও সবজি সব রান্না করা হয়। শুধু নামগুলোই ভিন্ন। যতই চটকদার নাম হোক ঝোল কিন্তু একটাই। হ্যাঁ, তাই অর্ডার দেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আপনি পাবেন না। খাবার পরিবেশ করা হবে বেশ অনেকটা সময় নিয়ে। যদিও এখনো বড় বড় বেশ কিছু রেস্তরাঁ ভারতে আছে যারা নিজেদের মান ধরে রেখেছেন। তবে বেশির ভাগই এখন এই পদ্ধতি অবলম্বন করে।
শুধু যে বাটার মসলাতে এই রান্না তা নয়। বিরিয়ানির ক্ষেত্রেও একই কারসাজি। যেমন ধরেন ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত খাবারের মধ্য একটা হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি। এ ছাড়াও আছে কাসমেরি বিরিয়ানি, নবাবি চিকেন ও মাটন মিরিয়ানি। তবে সময় বাঁচাতে সিদ্ধ সাদাভাতটাই শেষপর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে বাহারি বিরিয়ানি। সকালেই বড় পাত্রে করে বাসমতি চাল সিদ্ধ করে রাখা হয়। ব্যাস আপনি সাদা ভাত অর্ডার করেন আর যেকোনো চটকদার নামের বিরিয়ানি। সেই চাল আর ঝোলেই রান্না করা হয়ে যাবে। এতে করে আপনি খাবারের সাধের কোনো পার্থক্য খুঁজে পাবেন না। শুধু কি মাছ, মাংস, বিরিয়ানি! নানা রকম ডালেও যে একই পদ্ধতি। ডাল তরকারি, ডাল মাখানি, ডাল ফ্রাই সবই যে সকালেই রান্না করা একই ডাল আর ঝোলে তৈরি করা হয়। রঙ পরিবর্তন হলেও সাধের কোনো পরিবর্তন আপনি খুঁজে পাবেন না। 
এই সফরে আমাদের দ্বিতীয় ঠিকানা ছিল হিমাচলের পর চেন্নাই। সেখানেও এমন করে পুনে, মুম্বই, দিল্লি, আহমেদাবাদ ও কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে ফিরেছি। প্রতিটি শহরে খাবারের এই নতুনত্ব আপনাকে হয়তো ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করবে কিন্তু স্বাদটা খুঁজে পাবেন না। হ্যাঁ, এই জন্য যে হতাশ হবেন এমন নয়। প্রতিটি শহরেই আছে বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবারের জায়গা যেখানে আপনি চাইলে ভারতের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো খুঁজে পাবেন। যেমন দিল্লির জামে মসজিদ এলাকাতে তো খাবার খেয়ে আপনি তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন নিশ্চিত। কলকাতায় তো খাবারে আপনি বাংলাদেশের স্বাদই খুঁজে পাবেন। দিল্লির বড় মসজিদ এলাকাতেও ঐতিহ্যবাহী অনেক খাবারের দোকান। এ ছাড়াও ধর্মশালার ম্যাকলিয়ডগঞ্জে এমন প্রচুর জায়গা রয়েছে যেগুলো সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করে। দ্য নোরলিঙ্গ রেস্তরাঁ সুস্বাদু তিব্বতি খাবার পরিবেশন করে, অন্যদিকে দোক্কায়াবি-র দ্য সেভেন্ হিলস প্রীতিকর কোরিয়ন রান্নার খাবার পরিবেশন করে। চকলেট লগ হলো কিছু শেঁকা খাবারের জন্য একটি চমৎকার জায়গা। তবে প্রতিটি জায়গাতেই খাওয়ার আগে অবশ্য সতর্ক থাকতে হবে। নয়তো চটকদার নাম দেখে খাবার অর্ডার করে ঠকতে পারে নিশ্চিত।



হিমাচল যেন এক টুকরো তিব্বত
২০২৩, অক্টোবর মাস, গরমকাল। ম্যাকলিওডগঞ্জে হোটেল থেকে শুরু করে পর্যটন ব্যবসায়ীরা ডিসেম্বর, জানুয়ারির শীত মৌসুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু যেহেতু সেখানে বিশ^কাপ তাই তারা দর্শকদের কথা ভেবে হোটেলগুলো প্রস্তত করে রেখেছে। ২০১৬ তেই জানতাম দলাই লামা নির্বাসনে থাকা তিব্বত সরকার পরিচালনা করেন ধরর্মশালায় বসে।  ধর্মশালা একটা মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট, এ ছাড়াও হিমাচল প্রদেশের শীতকালীন রাজধানী হিসেবেই পরিচিত। তবে বিশে^র অন্যতম সুন্দর ক্রিকেট স্টেডিয়ামটির অবস্থান এখানে। বিশ^কাপে এখানেই আফগানিস্তানকে হারিয়ে দারুণ শুরু করেছিল সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ। এরপর টানা ৬ হার যে বিভীষিকাময় বিশ^কাপ উপহার দেয় টাইগাররা। এই স্টেডিয়ামকে ঘিরে রেখেছে ধলাধার পর্বতমালা। যার চূড়ায় চূড়ায় সাদা বরফ, আর সূর্যের আলো সৌন্দর্য পিপাসুদের মনের ক্ষুদা বাড়িয়ে দেয় হাজার গুণে। তবে গরমের মওসুম বলে এবার খুব একটা ঠান্ডা নেই রাতে ছাড়া। খুব দূরে পাহাড়ের চূড়াতেই জমেছে বরফ। তাই ধর্মশালার আসল মোহনীয় রূপটার কিছুটা হলেও যেন ঘাটতি থাকে গরমের সময়ে। 
খেলা কভার করতে আসলে আসলে খুব বেশি ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ থাকে না। আসা-যাওয়ার পথে যতটা দেখা যায় আরকি। তবে ঘুরে বেড়াতে হলে ভোর বেলাটাকে বেছে নিতে হয়। এমনই একদিন বেছে নিলাম যেদিন টাইগারদের খেলা ও অনুশীলন নেই। সকালে বেরিয়ে পড়লাম ভাগসু জলপ্রপাত দেখতে। ম্যাকলিয়ডগঞ্জের নিকটেই অবস্থিত এবং দর্শকদের পিকনিকের জন্য একটি চমৎকার জায়গা প্রদান করে। অধিকাংশ ভ্রমণকারীরাই ভ্রমণযাত্রার আনন্দময় দৃষ্টিময়তা উপভোগ করার জন্য এই জলপ্রপাতে হেঁটে যাওয়াটাই পছন্দ করেন। পাশাপাশি এটি পদযাত্রী বা ট্রেকারদের জন্যও একটি দারুণ জায়গা। এগুলো ছাড়াও, জলপ্রপাতের ঠিক আগে ভাগসুনাথ মন্দির, এটিও বেশ জনপ্রিয়। সেতুসহ এটি একটি হিন্দু মন্দির, এটিকে খুবই পবিত্র বলে মনে করা হয়।


তবে ম্যাকলিয়ডগঞ্জ হলো নির্বাসিত তিব্বতি সরকারের সদর দপ্তর। সেখানেই থাকেন দলাই লামা। যদিও এবার তিনি সেখানে নেই। কিন্তু মন্দিরটা দেখার খুবই ইচ্ছে হলো আরও একবার। তাই ভাগসু জলপ্রপাত দেখে চলে এলাাম ম্যাকলিয়ডগঞ্জ। ধরমশালার এক শহরতলী দলাই লামার সরকারি বাসভবন। যে কেউ এই অঞ্চলে বেশ কিছু তিব্বতীয় অধিবাসীদের দেখতে পাবেন এবং এখানে আসলে তিব্বতীয় সংস্কৃতির প্রাধান্যই বেশি রয়েছে হয়েছে।

ধর্মশালায় ভূতের ভয় আসলে কী!
ধর্মশালা শহরটাকে ঘিরে রেখেছে ধলাধার পর্বতমালা। এখানে গরমের দিনেও রাত নামতেই নেমে আসে প্রচণ্ড ঠান্ডা। ঘিরে ধরে কুয়াশা। আমাদের প্রায় প্রতিদিনই খাবারের জন্য এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যেতে হতো। মূলত ম্যাকলিয়ডগঞ্জেই বেশির ভাগ খাবার দোকান। হোটেল থেকে যেখানে যেতে যেমন গাড়িতে করে পাহাড় বেয়ে উপরে যেতে হয় তেমন নামার সময়ও আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে নামতে হয়। রাত হয়ে গেলে গা ছমছম করা একটি ভাব চলে আসে। রাতের অন্ধকারে পাহাড়ি রাস্তাতে যেন অজানা একটি ভয় কাজ করে। সেই ভয়টা বাড়িয়ে দিলেন পরিচিতি এক ট্যাক্সি ড্রাইভার। বেশি রাত হলে পাহাড়ি রাস্তা ধরেই স্থানীয় বাসিন্দাদেরও চলাফেরা কমে যায়। বিশেষ করে পায়ে হেঁটে কেউ জঙ্গল আর পাহাড়ি রাস্তায় চলাফেরা করেন না। কেন প্রশ্নটা করতে তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। এরপর তিনি যা বললেন তাতে হঠাৎ করেই যেন শরীরে একটা শীতলতা বয়ে গেল। চারপাশে তাকাতেও যেন ভয় লাগতে শুরু করে। এখানে রাতে পাহাড়ে নাকি এমন কিছু দেখা যায় দেখলে মানুষ ভয়ে জ্ঞান হারায়। বিশেষ করে জঙ্গলে দিকটাতে নাকি একজন মহিলাকে একটি বাচ্চা কোলে হাঁটতে দেখা যায়। কিন্তু সামনে গেলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বহুবছর আগে নাকি এক নারী পাহাড়ে তার স্বামীকে খুঁজতে গিয়ে বাচ্চাসহ পড়ে মারা যায়। সেই থেকেই  সেই নারীকে বাচ্চাসহ পাহাড়ে ঘুরতে দেখা যায়। এ ছাড়াও জঙ্গল থেকে হিংস্র প্রাণীও রাস্তায় চলে আসে। 
তবে হিমাচল প্রদেশের যে রূপ বিশেষ করে ধর্মশালাতে যারা এসেছেন তারা জানেন এমন ভয়ের গল্পগুলোও তাদের নির্জন পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে বাধা হতে পারে না। 

পাঠকের মতামত

সুন্দর লেখা। খাবারের স্বাদ হয় । সাধ নয়। অর্থ ভিন্ন।

Laila
১০ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ৯:১২ অপরাহ্ন

ঈদ সংখ্যা ২০২৪ থেকে আরও পড়ুন

   

ঈদ সংখ্যা ২০২৪ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status