ঢাকা, ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

ঈদ সংখ্যা ২০২৪

রেমাক্রি ও অন্যান্য

নাজমা জামাল ফেরদৌসি

(১ মাস আগে) ১২ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৪:৩৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

mzamin

‘দেখা হয় নাই চক্ষুমেলিয়া’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই লাইনটার যথার্থতা অনুভব করেছি নিজ দেশ বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যের স্থান বান্দরবান দেখার পর। সত্যিই বান্দরবান না দেখলে বাংলাদেশের সবুজ পাহাড়ের গাঢ় ভালোবাসা অতুলনীয় তা বোধগম্যই হতো না। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি চিরঋণী ও চিরকৃতজ্ঞ। ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু।’ ঘর হতে বের হয়ে প্রথমে আমরা যাত্রা করেছি ঢাকা থেকে বান্দরবানের বাস দেশ ট্রাভেল্‌স এ। রাত ১১টায় রওনা হয়ে ঘন কুয়াশার মধ্যেই একবার বিরতিতে আমরা যখন বান্দরবান শহরের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি আর্মিদের চেকপোস্ট থেকে প্রত্যেক যাত্রীর তথ্য নিতে দুইজন জওয়ান বাসে আমাদের এনআইডি কার্ড দেখতে চাইলো। বলে রাখা ভালো বান্দরবান আর্মি নিয়ন্ত্রিত স্থান। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে এই জেলা আমাদের কাছে বান্দরবানে প্রবেশের জন্য অভ্যর্থনাই মনে হয়েছে। যাই হোক, বাস থেকে নেমে আমরা প্রথমে নাস্তা ও ফ্রেশ হওয়ার জন্য হিল ভিউ হোটেলে উঠি। সেখানে নানরুটি আর সবজি দিয়ে নাস্তা সেরে নেই। তারপর আগেই ঢাকা থেকে বুকিং দেয়া জীপগাড়িটিতে আমরা চারজন সদস্য উঠে পড়ি।

বিজ্ঞাপন
আমাদের ভ্রমণের মূল উদ্দেশ ছিল ঝর্ণাঘেরা রেমাক্রী ও নাফাখুম। তাই প্রথমদিন থানচির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। আমাদের সঙ্গে জীপের চুক্তি ছিল আমরা যাত্রাপথেই বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে দেখতে যাবো। আমাদের তরুণ ড্রাইভার তার দক্ষহাতে পাহাড়ি রাস্তার আঁকাবাঁকা পথে গাড়ি নিয়ে যখন চলছে তখন মনে হলো বিধাতা তার নিপুণ কারুকাজ যেমন প্রকৃতি সাজাতে করেছেন তেমনি মানুষকেও সেই প্রকৃতির ছায়ায় লালন করে চলেছেন। প্রথমে আমরা থামলাম একটা চেকপয়েন্টে। সেখানে আর্মিরা আমাদের আবার এনআইডি চেক করলো। আমরা অপরূপ পাহাড়ের বিশালতা দেখে মুগ্ধ হয়ে ছবি তুললাম। তবে থানচি থেকে রেমাক্রী যে আরও কতসহস্রগুণ সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের অপেক্ষায় ছিল তা জানা ছিল না। তারপর আবার আঁকাবাঁকা পথ। এবার থামলাম শৈলপ্রপাত। নামের মতোই মিষ্টিসুন্দর একটি মেয়ে যেন এই শৈলপ্রপাত জায়গাটি। ঢুকতেই দেখলাম পাহাড় আর পাথরের মাঝে বয়ে যাওয়া ছোট্ট একটি ঝর্ণা। চারপাশে সবুজ পাহাড় তার পাদদেশে বড় বড় পাথর আর কুলকুল ধ্বনিতে বয়ে চলা ঝর্ণা যেন চৌরাশিয়ার বাঁশির শব্দ ভেসে এলো মনে। আমি যেন প্রকৃতির সুরসংগীতে প্রবেশ করলাম। সেখানে দেখলাম মানুষের হাতের  শৈলী বাঁশের তৈজসপত্র। এককথায় অসাধারণ। আর ওখানকার মারমা মেয়েদের হাতে বোনা শাল আর কটাথাগুলোতো দারুণ। মানুষ যে প্রকৃতির মাঝে তার আপন সৃষ্টিশীলতাকে খুঁজে পায় এটা তার প্রমাণ। এখানে আমরা একদম তরতাজা সবরিকলা খেলাম। আবার জীপে উঠে বসলাম। এবার নামলাম অসাধারণ সেই চিম্বুক পাহাড়ের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে। এখানে টিকেট ছিল। আমরা ভিতরে একটি বিশাল ভিউপয়েন্ট দেখলাম। যেখানে দাঁড়িয়ে  একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সূর্য এখানে হাসি দিয়ে গাছ, পাখি আর কীটপতঙ্গের উন্মত্ততা উপভোগ করে। আমি যখন এই ভিউপয়েন্টে কিছুসময়ের জন্য দূর-দূরান্তে আমার দৃষ্টিকে আবদ্ধ করেছি তখন এক স্বর্গীয় সুখে আমার হৃদয়ের কুঠুরিগুলো আলোকিত হয়ে গেল। এখানে আছে সুন্দর একটি বসবার স্থান। কিছুক্ষণ বসে আমরা আবার রওনা হলাম। এরপরের স্থান খুবই অদ্ভুত। এই জায়গার নাম টাইটানিক ভিউ। পর্যটকদের জন্যই এই ভিউটি তৈরি করা হয়েছে। অসাধারণ ভিউ এটি। এখান থেকে দূর পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য অতুলনীয়। এরপর আমরা গেলাম ডাবল হ্যান্ড ভিউ। দুইটা হাতের মতো স্থাপনা মনে হয় যেন একে অন্যকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অসাধারণ উপলব্ধি হয় এখানে দাঁড়ালে। একপ্রান্তে একজন এবং অন্য প্রান্তে আরেকজন দাঁড়ালে মনে হয় একে-অন্যকে ছুঁয়ে দেখি। কি অসাধারণ প্রকৃতি সবুজে ঘেরা তার মাঝখানে মানুষের বিশালতার চিহ্ন। সত্যিই অসাধারণ। আমাদের জন্মভূমি যে এত সুন্দর তা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে না গেলে আর সেই জায়গার জীববৈচিত্র্য, জীবন সংগ্রাম আর প্রকৃতির মেলবন্ধন না দেখলে অনুভব করা অসম্ভব। এরপর আমাদের যাত্রা শুরু হলো নীলগিরির উদ্দেশে। এটি একটি আর্মি পরিচালিত দর্শনীয় স্থান। বলতেই হচ্ছে আমাদের দেশের এই দর্শনীয় ও মনোমুগ্ধকর স্থানকে সৌন্দর্যমণ্ডিত রাখায় তাদের অবদান অনস্বীকার্য। এখানে ঢুকতে হলে টিকিট দিয়ে ঢুকতে হয়। নীলগিরি থেকে বান্দরবানের পুরো জায়গাটি খুবই সুন্দর দেখা যায়। এরপর আমরা রওনা হই বিজিবি রিসোর্টের উদ্দেশে। বিজিবি রিসোর্ট এবং তার পরবর্তী অংশ থাকছে পরবর্তী পর্বে। 

২- প্রথমপর্বেই বলেছিলাম বাংলাদেশের রূপ বৈচিত্র্য পৃথিবীর মধ্যে  অন্যতম। এর আনাচে-কানাচে আছে স্বর্গীয় সৌন্দর্য। আমার সৌভাগ্য যে, আমি আমার মাতৃভূমির অপরূপ রূপ দেখেছি। প্রথম দিন বান্দরবানের ট্যুরিস্ট স্পটগুলো দেখে এবার রওনা হলাম থানচি উপজেলার বিজিবি রিসোর্টের উদ্দেশে। অসাধারণ দৃশ্য দেখতে দেখতে আঁকাবাঁকা পথ ধরে থানচির বলিপাড়া চেকপোস্টে আমরা নামলাম এবং আমাদের পরিচয় রেজিস্ট্রি করতে দশ থেকে পনের মিনিট সময় ব্যয় করলাম। এই ফাঁকে একটু কফি খেয়ে নিলাম। বাচ্চারা জুস ও বিস্কুট। চেকপোস্টটিও খুব সুন্দর করে সাজানো। কাজ শেষ করে আমরা আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। এবার গন্তব্য বিজিবি রিসোর্ট। বিজিবি রিসোর্টের কাছে এসে আমাদের বিশ্রামের জায়গা দেখে আনন্দ আর শিহরণ হয়ে গেল। আমাদের কটেজটা একটা বড় পাহাড়ের উপরে। আমাদের কটেজের নাম বড়পাথর। এই বড়পাথর কটেজটি সবচেয়ে বড় এবং এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। রুমের ভিতরে আধুনিক সব ব্যবস্থাসহ খুবই মনোরম চারপাশের দৃশ্য দেখলে মনটা শান্তিতে ভরে ওঠে। এখানে দুপুরে আমরা দেশি মুরগি, আলু ভর্তা, সবজি আর ডাল দিয়ে লাঞ্চ সেরে একটু রেস্ট নিলাম। বিকালে থানচি বাজার থেকে পানিতে হাঁটার জন্য বিশেষ জুতা কিনলাম। প্রথমদিনে দীর্ঘ যাত্রা ও ভ্রমণ শেষ করে অপেক্ষা করলাম পরদিনের। কারণ পরদিন যাবো নৌকা করে রেমাক্রী। খুব ভোরে উঠে খিচুড়ি দিয়ে সকালের নাস্তা শেষ করলাম। তারপর সবচেয়ে আর্কষণীয় ভ্রমণ নৌকায় করে ঝর্ণা দ্বারা তৈরি স্বচ্ছ টলটলে পাথরপরিমণ্ডিত নদী সাঙ্গুনদী ভ্রমণ। সাঙ্গুনদীর নৌকার মাঝিরা যারা গাইড হিসেবে কাজ করে তারা সবাই প্রায় কিশোর বয়সের। আশ্চর্য দক্ষতা তাদের এত দুর্গম নদীতে নৌকা চালানোর কারণ একটু অসচেতন হলেই তীক্ষ্ম পাথরে নৌকা কেটে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঘাট থেকে যখন নৌকা ছাড়লো তখন দু’পাশের সুউচ্চ পাহাড় আর স্রোতস্বিনী নদীর পাথরের উপর বয়ে চলা দৃশ্য দেখলে যে কেউ গান গাইতে বাধ্য। গান গাইতে থাকলাম  ‘ঐ দূর পাহাড়ের ধারে..,’ সত্যিই অসাধারণ।

 রেমাক্রীর খুব কাছাকাছি এসে একটা জায়গায় দেখতে পেলাম রাজা পাথর আর রানী পাথর। ওইখানের পাহাড়িরা পাথরগুলোর পূজা করে। এখানে পানির স্রোতের যে কলকল ধ্বনি মনে হয় কোনো সংগীত বেজে যাচ্ছে আর চৌরাশিয়ার বাঁশি ভেসে আসছে। স্বচ্ছ পানির নিচে পাথরের অবস্থান আর সবুজ শ্যাওলা মিলে এক অপূর্ব দৃশ্য অবলোকন করতে করতে এগিয়ে আমাদের নৌকা ত্যাগ করতে হলো। কারণ এই জায়গায় নৌকা নিয়ে এত লোক যাওয়া বিপজ্জনক। তাই আমাদের নামতে হলো। শীতল পাথরের উপর হাঁটু পর্যন্ত ভিজিয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম। এই অনুভূতির বর্ণনা শুধু কাছে গিয়েই অনুধাবন করা সম্ভব। হেঁটে একটা গ্রামে এসে একটা দোকানে বসলাম আর পাহাড়ি পেঁপে খেলাম। পাহাড়ি চায়ে একটু লবণ দেয়া হয় কিন্তু সুস্বাদু লাগলো। এখান থেকে আবার নৌকা করে রেমাক্রী ঝর্ণার কাছে গেলাম। স্বর্গীয় দৃশ্য বললেও কম বলা হবে। এখানকার ঝর্ণা আর আশেপাশের গ্রাম ও পাহাড়িদের মাছ ধরার দৃশ্য এককথায় অসাধারণ। এখানে সবাই ঝর্ণার পানিতে গোসল করলাম। ঝর্ণাধারায় শীতকালেও যে ডুবে থাকতে ভালো লাগে তা রেমাক্রী ঝর্ণার কাছে না গেলে জানতাম না। এখান থেকে বাচ্চারা উঠতেই চাচ্ছিল না। অনেকক্ষণ মজা করে আমরা ভিজা শরীরেই দুপুরের খাবার খেতে শিলগিরি রিসোর্ট এ। এখানে খেলাম পাহাড়ি মুরগি আর ভর্তা, ডাল, রুইমাছ। বলে রাখি পাহাড়ি ঝাল কাঁচামরিচ  খেলে খাবার যেন নতুন স্বাদ পায় এখানে। এত ভালো লাগলো খাবারগুলো। তারপর একটা পাহাড়ি লুঙ্গি কিনে নিলাম। যা পাহাড়ি মেয়েদের বিশেষ পোশাক। রেমাক্রী শুধু বর্ণনা করে বোঝানো সম্ভব নয়। এর সৌন্দর্য্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। বাংলাদেশ এ একসাথে পাহাড় আর ঝর্ণা রেমাক্রীতেই দেখা যায়। এরপর আমরা বিজিবি রিসোর্টে ফেরার জন্য রওনা দিলাম। বিজিবিতে ফিরে বিকালে রেস্ট নিয়ে আমরা গেলাম আরেকটা ট্যুরিস্ট স্পট তমাতুঙ্গি। এরপরের পর্বে থাকছে বাকিটা।  

৩- দ্বিতীয় দিন রেমাক্রী ঘুরে মন যেন আর কিছুকেই টানছিল না। কারণ রেমাক্রী এত সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর ছিল যে, আরও একদিন রেমাক্রী থেকে যেতে মন চাইছিল। ফিরতি পথে রেমাক্রী যেন আরও সুন্দর হয়ে গেল। ফিরতি পথে সূর্যের নরম রোদ পড়ন্ত বিকালে পাহাড়ের গাঁয়ে গাঁয়ে উঁকি দিয়ে আমাদের বিদায় জানাচ্ছিল। জল ছলাৎ জল ছলাৎ শব্দে নদীর আকর্ষণ আর পাথরের দৃঢ়তা দেখতে দেখতে আবার বিজিবি রিসোর্টে ফিরে এলাম। বিজিবি রিসোর্টে ফিরে এলে এত মনোরম পরিবেশে সব ক্লান্তি যেন চায়ের টেবিলেই শেষ হয়ে যায়। বিকালে চাঁদের গাড়ির গাইড আমাদেরকে নিয়ে গেল তমাতুঙ্গী। নামটা যেমন আকর্ষণীয় তেমনি তার স্থান। যদিও বেশির ভাগ দর্শনীয় স্থান আমরা কিছু অসচেতন নাগরিক নিজেদের গাফিলতির কারণে অসুন্দর করে একধরনের সুখ অনুভব করি। চারদিকের বিখ্যাত পাহাড় দেখা যায় এখানে। আর স্পটটি করা হয়েছে তিনটা এরো চিহ্ন দিয়ে। একটি চিহ্ন নির্দেশিত বেঞ্চটিতে বসে কেওক্রাডং দেখা যায়। অপর প্রান্তে সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চে অ্যারো নির্দেশিত তাজিনডং এবং পরবর্তী আরেকটি স্থান থেকে দেখা যায় ডিমপাহাড়। বান্দরবান থেকেই বাংলাদেশের সুউচ্চ পর্বতমালা দেখা যায় আর এটি থানচি উপজেলাতে গেলেই দেখা যায়। এখানে বসে সূর্যাস্ত দেখা যায়। সূর্য ডুবে যাওয়ার দৃশ্য আমাদের প্রত্যেকের কবিমনে কী যে এক ভাবনার জন্ম দেয় তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আর সেটা যদি হয় পাহাড়ের সবুজ বুকের পাশে। কী অসাধারণ সে দৃশ্য। বলে রাখি আমরা চাঁদের গাড়িতে দাঁড়িয়ে থেকে উঁচু-নিচু পাহাড়ের বুকে কাটা রাস্তায় যখন যাচ্ছিলাম মনে হচ্ছিল জীবনে এডভেঞ্চার খুব প্রয়োজন। জীবন ও জীবিকার তাগিদে আমরা ইট-কাঠের দালানে এই এডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব নয়। এজন্যই প্রকৃতিপ্রেমীরা বারবার প্রকৃতির কাছে ছুটে যায়। আর সেটা যদি হয় নিজ দেশের এমন মনোমুগ্ধকর জায়গায়। তমাতুঙ্গী থেকে ফিরে এসে বিজিবি রিসোর্টে বিশ্রাম নিয়ে বিকালে রেস্টুরেন্টে বুকিং দিয়ে এলাম পাহাড়ি জনপ্রিয় খাবার বাঁশ বিরিয়ানির। সন্ধ্যায় আমরা টং মা হাং রেস্টুরেন্টে রাতের ডিনার করতে গেলাম। ডিনারে ছিল আকর্ষণীয় পাহাড়ি খাবার বাঁশ বিরিয়ানি। বাঁশের ভিতর বিরিয়ানি ও মুরগি রান্না অভিনব ও মজাদার। গরম গরম বিরিয়ানি খেয়ে হেঁটে আবার বিজিবি রিসোর্ট। দিনে ও রাতে বিজিবি রিসোর্ট এককথায় অসাধারণ। বিজিবি রিসোর্টের সৌন্দর্য আলাদা করে বলতেই হবে। আর এর তত্ত্বাবধায়ন এতটাই আন্তরিক আর নিরাপত্তাব্যবস্থা এতটাই ভালো যে, পর্যটকদের জন্য এটা অবকাশ যাপনের একটি অনন্য সাধারণ জায়গা। এই জায়গাটি আমার এতটাই ভালো লেগেছে যে, বিজিবি রিসোর্টে রাত্রিযাপন ও ভোরের সৌন্দর্য অবলোকন নিয়ে থাকছে আমার চতুর্থ ও শেষ পর্ব। আশা করি সবার বাংলাদেশের রূপবৈচিত্রের আকর্ষণ হৃদয়ে স্পন্দিত হবে নিঃসন্দেহে। 

৪- 

বান্দরবানের ট্যুরিস্ট স্পট ও রেমাক্রি 

বাংলাদেশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের  এক অনন্য উদাহরণ এই বান্দরবান। বান্দরবানের পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে সবুজ অরণ্য, পাখপাখালী আর প্রাণবৈচিত্র্য এককথায় অসাধারণ। তবে আরও আকষর্ণীয় এই এলাকার মানুষের জীবনধারণের কৌশল ও বৈশিষ্ট্য। এখানকার বাজার, পাহাড়ের গায়ে জুম চাষ, ফল বিক্রেতা কিংবা মাছ ধরা ও দুর্গম পাহাড়ের কলাগাছ বা পেঁপে গাছ থেকে পেঁপে কেটে এনে বিক্রী করা, হাতে বোনা পোশাক সবকিছুতেই নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। তাই নারীরা এখানের সমাজব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমরা তৃতীয়দিন শেষ করে চতুর্থ দিন আরেকবার থানচি বাজার ও  বিজিবি রিসোর্ট ঘুরে দেখলাম। এবার বিজিবি রিসোর্ট নিয়ে বলতে চাই। আমরা যখন বিজিবি রিসোর্টে প্রথম জীপে করে নামলাম তখন এই রিসোর্টটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হয়ে পড়লাম। পাহাড়ের উঁচুতে কটেজগুলো। আমরা যেটাতে ছিলাম সেই কটেজগুলো লাল রঙের এবং মনোরম। কারণ এই কটেজ থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এবং চারপাশের সবুজে ঘেরা পাহাড় দেখা যায়। এখানকার ব্যবস্থাপনাও এককথায় চমৎকার। এখানে একপাশে কটেজ। পাহাড়ের ঢালে সবুজ রঙের কিছু কমমূল্যের কটেজ রয়েছে। ডানে আছে পুলিশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আরও কিছু কটেজ। কিছুদূর সামনে গেলে ঝুলন্ত ব্রিজ।  আরও ডানে আছে হেলিপ্যাড। সব মিলিয়ে কটেজের সাজসজ্জা এতটাই চমৎকার ও আর্কষণীয় যে, আরও কিছুদিন থেকে যেতে মন চাইছিল। এখানে রাতে বারবিকিউ এর পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও রয়েছে। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় সিঁড়ি। খুবই দৃষ্টিনন্দনভাবে পুরো প্রকৃতিকে তার আসল রূপে রেখে সাজানো হয়েছে। যে কটেজে আমরা ছিলাম তার দু’টো বড় কক্ষ রয়েছে। একটি বেডরুম যার ভিতর এসি থেকে সব অত্যাধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। রুমের ভিতরে রয়েছে চা খেতে খেতে বাহিরের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। আমরা বিজিবি রিসোর্ট থেকে দুপুরে রওনা দিলাম বান্দরবনের উদ্দেশে। যাত্রা শুরুতে জীপ গাড়িতে থানচি এসেছিলাম। কিন্তু যাবার সময় যাত্রা শুরু হলো চাঁদের গাড়িতে। যাওয়ার পথে চিম্বুক, শৈলপ্রপাত ও আরও কিছু জায়গায় আবার কিছুক্ষণ সময় কাটালাম। আবার কিছু ফল কিনলাম ও খেলাম। সবচেয়ে অবাক হলাম শৈলপ্রপাতে হাতে  তৈরি বাঁশের মগ, জগ ও গ্লাস দেখে। বান্দরবানের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েদের পোশাক থামি, বাঁশের তৈরি জগ গ্লাস ও শালসহ কিছু উপহারসামগ্রী কিনলাম। বাংলাদেশের অনেক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের সবুজ সৌন্দর্য আর পাহাড়ি এলাকার মিষ্টিমধুর জীববৈচিত্র্য সত্যিই মনের মাঝে এক অতিপ্রাকৃত সুরধ্বনির সৃষ্টি করে। এখানে দেখেছি গোয়েল (এক প্রকারের কালো গরু), বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ আর পাহাড়ি জনপদ। পৃথিবীর সৌন্দর্যের বর্ণনা বিশেষ করে মাতৃভূমির অপরূপ সৌন্দর্য বর্ণনা করা এককথায় অসম্ভব। তারপরও চেষ্টা করলাম ক্ষুদ্র প্রয়াসে। ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি... সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি’। 

পাঠকের মতামত

খুব সুন্দর করে লিখেছ।

Zinat Afrose
১০ মে ২০২৪, শুক্রবার, ৯:৪০ অপরাহ্ন

ঈদ সংখ্যা ২০২৪ থেকে আরও পড়ুন

   

ঈদ সংখ্যা ২০২৪ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status