ঢাকা, ৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অনলাইন

কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে পুলিশের ওপর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপ রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার

মানবজমিন ডিজিটাল

(১ সপ্তাহ আগে) ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ২:১২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৪ পূর্বাহ্ন

mzamin

কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা প্রতিরোধে পুলিশের ওপর কোন রাজনৈতিক চাপ না থাকলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপ রয়েছে। যাদের অনেকে রাজনীতির সাথে যুক্ত।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকার এফডিসিতে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলন নিয়ে 'ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি' আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান এমন মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেছেন, "মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও যাত্রাবাড়িসহ ৫০টি থানার মধ্যে ১০টি থানায় কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব বেশি। আমরা অনেকগুলো কিশোর গ্যাং চিহ্নিত করেছি কিন্তু সরাসরি কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার ধরা যাচ্ছে না। আইনের মারপ্যাচে তাদের পৃষ্ঠপোষকরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে। তবে কিশোর গ্যাং নিমূর্লে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন গাফিলতি নেই। কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা প্রতিরোধে পুলিশের ওপর কোন রাজনৈতিক চাপ না থাকলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপ রয়েছে। যারা অনেকে রাজনীতির সাথে যুক্ত। রাজধানীতে ২১ জন  কাউন্সিলরের কিশোর গ্যাংয়ের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকলেও তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে কিশোর অপরাধে পরিবার ও সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার অভাবে কিশোররা অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

বিজ্ঞাপন
ঢাকা শহরে শিশু কিশোরদের সামান্য খেলার মাঠের জন্য আন্দোলন করতে হয়। আজকের শিশুরাই আগামীর বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে অপরাধমুক্ত সোনার মানুষ গড়ে তুলতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িতরা বেশিরভাগই অপরাজনীতির শিকার। অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা ও ‘বড় ভাই’রা শিশু—কিশোরদের তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছে। অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থে অর্থের বিনিময়ে অপরাধ করাচ্ছে। জমিজমা, ঘরবাড়ি দখল করাচ্ছে। আবার পুলিশ আটক করলে তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনছে, প্রয়োজনে জামিনের ব্যবস্থাও করছে। ফলে এসব শিশু কিশোররা কিশোর গ্যাং কালচারে সম্পৃক্ত হয়ে বড় ভাইদের পক্ষে ভাড়ায় খাটছে। বড়ভাই নামধারী এসব প্রভাবশালীরা যাতে শিশু কিশোরদের চাঁদাবাজি, মিছিল—মিটিং, দখলবাজি, দলবাজিতে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কোনভাবেই কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সুশাসনের অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিও কিশোর গ্যাং কালচার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সর্বস্তরে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ভয়েস রেইস করতে হবে।

কিরণ আরো বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যের মদদদাতাদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোন চাপ থাকলে প্রয়োজনে প্রশ্রয়দাতাদের তালিকা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। প্রয়োজনে কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতাদের নামের তালিকা প্রকাশ করে এসব বড়ভাইদের মুখোশ উন্মোচন করা উচিৎ। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা স্বউদ্যোগে কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িতদের সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কিশোর গ্যাং নিমূর্লে সহযোগিতা করতে হবে। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, সরকারের এতো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন তৎপর থাকার পরও কেন আমাদের কিশোর গ্যাং নিয়ে আতংকিত থাকতে হয়? তবে আশার দিক হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে কিশোর গ্যাং মোকাবেলায় স্বরাষ্ট্র ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। যা কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 
তবে ত্রুটিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা, পারিবারিক বন্ধনের ঘাটতি, মাদকের সহজলভ্যতা, দারিদ্রতা, কর্মসংস্থানের অভাব, সুশাসনের ঘাটতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবসহ নানা কারণে শিশু কিশোররা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতাকে আরো বেশি উস্কে দিচ্ছে। বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, লাইকি, ইমুসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কিশোর অপরাধের মাত্রাকে ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে কিশোর গ্যাং কালচার তৈরি হচ্ছে। 
কিশোর তরুণদের জন্য বর্তমানে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওয়েব সিরিজ। কিছু কিছু অনলাইন প্লাটফর্মে তুমুল অশ্লীলতা, নোংড়া সংলাপ দিয়ে ওয়েব সিরিজ প্রদর্শিত হচ্ছে। এসব ওয়েব সিরিজগুলো সহজেই কিশোর—কিশোরীদের আসক্ত করে ফেলছে। বিটিআরসিকে এই ধরণের বিতর্কিত ওয়েব সিরিজগুলো সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার চেয়ে সামাজিক আন্দোলনই অধিক কার্যকর” শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রস্তাবের পক্ষে শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা কমার্স কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক জি এম তসলিম, সাংবাদিক জিয়া খান, সাংবাদিক অনিমেষ কর, সাংবাদিক কাওসার সোহেলী। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

পাঠকের মতামত

Publish the names of these godfather. We will appreciate it.

nurul choudhury
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১১:১৬ অপরাহ্ন

পুলিশের এই ধরনের বক্তব্য শুনে আমার কেমন জানি সুখ সুখ লাগছে

রফিকুল ইসলাম
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১০:৪৬ অপরাহ্ন

প্রভাবশালীদের ধরুন হুকুমের আসামি হিসাবে।

তৌফিকুর রেজা
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৯:৪৩ অপরাহ্ন

চাপের কারণে ভাল কাজ করতে না পারলে ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করুন, জাতি চিরদিন মনে রাখবে। যারা সাধারণ মানুষকে নীপিড়নের মধ্যে রাখতে চায় তারাই কিশোরদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে কিশোরদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছে।

জামশেদ পাটোয়ারী
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৫:৪৯ অপরাহ্ন

আগে ঐ প্রভাব শালীদের ধরুন । জনগণের বন্ধুত্বের পরিচয় দিন ।

Titu Meer
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৪:৪৩ অপরাহ্ন

কিশোর গ্যাং এর কারনে জাতির মেরুদণ্ড দংস হয়ে যাচ্ছে আপনি জননিরাপ্তা দিবেন নাকি প্রভাবশালীদের কথা রাখবেন ?

M Palash
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৩:০৫ অপরাহ্ন

Not politicians ? but related with politics ? What is meaning ? I think they are ( police ) also related with politics.

zahir
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ২:৩৮ অপরাহ্ন

চাপ প্রতিরোধ করতে না পারলে, সেটা পুলিশের ব্যর্থতা।

আজিজ
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ২:২২ অপরাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status