বাংলারজমিন
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রপ্তানির সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চায় চীন
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে
২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবারবাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ১০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানির সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চায় চীন। এই সঙ্গে পণ্যের কাঁচামাল ও প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল সংরক্ষণে বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ তৈরি করতে বিকেএমইএ’র সহযোগিতা চান তারা। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময়ে চীনের সহযোগিতা চান বিকেএমইএ নেতৃবৃন্দ। চীনের ৩৬টি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিকেএমইএ’র দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়গুলো উঠে আসে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন চায়না এন্টারপ্রাইজ এসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিয়াব)। এ ছাড়া এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন চায়না টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি, চায়না ন্যাশনাল গার্মেন্টস এসোসিয়েশন, ডং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চায়না ন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল কাউন্সিস ও আরও ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মোট ৪২ জন প্রতিনিধি। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় বিকেএমইএ’র প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের নিটওয়্যার খাত প্রযুক্তির মানোন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কারখানা বাংলাদেশে স্থাপনের জন্য চীনা প্রতিনিধিদলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ ছাড়া শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে চীনের আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের নিটওয়্যার শিল্পের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি আখতার হোসেন অপূর্ব। হাই-অ্যান্ড পোশাকের বাজার চ্যালেঞ্জ, নিটওয়্যার খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, চীন-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্ভাবনা, বাজারের প্রবণতা, আন্তর্জাতিক প্রকিউরমেন্ট প্র্যাকটিস এবং টেকসই সাপ্লাই চেইনের মতো বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি। একই সঙ্গে চীনা উদ্যোক্তাদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশে চীন কর্তৃক বন্ডেড ওয়্যার হাউজ তৈরি, বাংলাদেশ-চীন যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে কারখানা পরিচালনা ও নারায়ণগঞ্জের শান্তির চরে নিট পল্লী প্রতিষ্ঠায় অবকাঠামো নির্মাণে চীনের সহযোগিতা চান। বিকেএমই’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, আজকের আলোচনায় বন্ডেড ওয়্যার হাউজ, প্রযুক্তির উন্নয়নে দুই দেশের সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তৈরি পোশাক খাতে বিশ্বে নেতৃত্ব দানকারী দেশ দুটির এই সম্মিলন এই খাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার তৈরি পোশাক খাতে ব্যবসার সুযোগ সম্প্রসারণের মতো বিষয়গুলোও উঠে আসে। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি অমল পোদ্দার, মোরশেদ সারোয়ার সোহেল, মোহাম্মদ রাশেদ, পরিচালক আশিকুর রহমান, মোস্তফা মনোয়ার ভূঁইয়া, খন্দকার সাইফুল ইসলাম, রতন কুমার সাহা, আব্দুল হান্নান, খুরশিদ আহমেদ তুনিম। চায়না টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটির পরিচালক ওয়াং ঝেং বলেন, উন্নয়নের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার দরকার হয়। বাংলাদেশ ও চীনের জনসংখ্যা বেশি। এই দুই দেশের জনশক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী। আমরা বিকেএমইএ’র সঙ্গে কাজ করে আনন্দিত। চীন থেকে আপনারা যারা এসেছেন আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাবো আপনারা এখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন।
চায়না ন্যাশনাল গার্মেন্টস এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং জিয়াও ডং বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এই ধারায় আমরা আজ এখানে। এদেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এক্ষেত্রে দেশ দুটি একসঙ্গে সহযোগিতামূলক চর্চার মাধ্যমে এই খাতকে আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। এ লক্ষ্যে আমাদের আজকের এই সাক্ষাৎ ফলপ্রসূ হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। সিয়াবের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট ব্রাঞ্চের প্রেসিডেন্ট মাইক জি বলেন, চীন সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক এবং বাংলাদেশ দ্বিতীয়। কিন্তু এদের মধ্যে ব্যবধান অনেক। কিন্তু বাংলাদেশ তা কমানোর চেষ্টা করছে। তবে আমাদের সম্পর্ক প্রতিযোগীর নয় বরং সহযোগীর। বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যার হাউজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আমরা সমর্থন করি এবং এ বিষয়ে চীন সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করবো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা দরকার হলে আমরা বিকেএমইএ’র সঙ্গে যোগাযোগ করবো।