বাংলারজমিন
লালমোহনে রয়ে গেল ঝড়ের ক্ষতচিহ্ন
হাসান পিন্টু, লালমোহন (ভোলা) থেকে
৯ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবারঘণ্টাখানেকের কালবৈশাখী ঝড়। ওই ঝড়ে তছনছ হয়ে গেছে ভোলার লালমোহন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন খামার। সরকারি হিসেবে যার সংখ্যা আড়াইশত। এরমধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত পঞ্চাশটি ঘরবাড়ি। গত রোববার সকালে ঝড়টি বয়ে যায় লালমোহন উপজেলার উপর দিয়ে। তাণ্ডব চালিয়ে ঝড় ঠিকই চলে গেছে, তবে দগদগে ক্ষতচিহ্ন এখনো রয়ে গেছে এই উপজেলার আনাচে-কানাচে। অনেকে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনদের বাড়িতে। আবার কেউ বিধস্ত ঘরেই দিন পার করছেন। রোববারের ওই ঝড়ের প্রভাবে ঘরচাপায় ও বজ্রপাতে লালমোহন উপজেলায় এক ভিক্ষুকসহ প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন। তাদের পরিবারকে স্থানীয় সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের লেঙ্গুটিয়া গ্রামে ঝড়ের তাণ্ডবে উড়ে গেছে মো. ইউসুফ নামে এক ব্যক্তির পুরো বসতঘর। এখন কেবল খালি পড়ে আছে বসতভিটা। যার জন্য স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এখন পার্শ্ববর্তী এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। নতুনভাবে বসতঘর তোলার সামর্থ্য নেই ইউসুফের। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি সরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন।
একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরিগঞ্জ এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. বাছেদ মাতাব্বর জানান, ঝড়ের তাণ্ডবে আমার বসতঘরের উপর গাছ পড়েছে। গাছ পড়ে পুরো ঘরটি ভেঙে গেছে। কোনো রকমে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। তবে আমার তেমন আয় নেই। যার জন্য নতুন করে এই মুহূর্তে ঘর তোলা বা মেরামত করার সাধ্য নেই। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পাশের এক ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। আমি সরকারি সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছি। উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব চরউমেদ গ্রামের মো. শাহিন বলেন, গত চার বছর আগে দুই মামাসহ একটি লেয়ার মরুগির খামার দিই। ভালোই চলছিল খামারটি। তবে রোববারের ঝড়ে মুরগির খামারটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এতে করে তাৎক্ষণিক মারা গেছে অন্তত দুইশত মুরগি। ঝড়ে আমাদের ২৫ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আমরা সরকারি সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছি।
ওই এলাকার মো. জাহাঙ্গীর নামে এক কৃষক জানান, এই বছর প্রথমবারের মতো ভুট্টার চাষ করেছি। তবে ঝড়ে সব ভুট্টা নষ্ট হয়ে গেছে। এই ক্ষতি কাটাতে সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রোববার এই উপজেলার উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। ওই ঝড়ে কৃষি ফসল, ঘরবাড়ি, দোকানপাট এবং খামারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় এমপি স্যার ও ডিসি মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছি। ওই তালিকা জেলায় পাঠাবো। এরপর বরাদ্দ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে তা পৌঁছে দেয়া হবে। তবে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমরা কিছু জিআর চালের বরাদ্দ পেয়েছি। শিগগিরই তা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
ইউএনও আরও বলেন, অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ অফিসে কথা বলেছি। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।