বিশ্বজমিন
মিতসুকো তোতোরি জাপানের এক বিস্ময় নারী
মানবজমিন ডেস্ক
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবারমিতসুকো তোতোরি। জাপানে বহুল আলোচিত একজন নারী। বার বার সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন তিনি। চাকরি শুরু করেছিলেন একজন বিমানবালা হিসেবে। কিন্তু তর তর করে তার উত্থান হয়েছে। তিনি এখন জাপান এয়ারলাইন্সের নতুন প্রধান। গত জানুয়ারিতে তাকে এই পদে নিয়োগ দেয়া হয়। তখন তা নিয়ে ভীষণ আলোচনা হয়। বলা হয়, তিনি জাপানের করপোরেট জগতে বড় রকমের ঝাঁকুনি দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
মিতসুকো বিবিসিকে বলেন, আমি অস্বাভাবিক পরিবর্তন সম্পর্কে কিছু জানি না। সংক্ষেপে বলতে গেলে, মিতসুকো ব্যবসায়ীদের অভিজাত দলের কোনো মানুষ নন, যারা প্রথাগতভাবে নিজেদের ক্যারিয়ার শুরু করেন বড় কোনো পদে। জাপান এয়ারলাইনসের শীর্ষ পদে যে ১০ জন দায়িত্ব পালন করেন, তাদের ৭ জনই দেশের নামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু মিতসুকো পড়ালেখা করেছেন খুবই সাধারণ একটি কলেজে। মিতসুকো এই পদে যোগ দেয়ার মাধ্যমে জাপানের যে মাত্র ১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নারীর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, সেই তালিকায় যোগ দিলো জেএএল। মিতসুকো বলেন, এমন পদে আমি নিজেকে প্রথম নারী মনে করি না বা প্রথম সাবেক বিমানবালা এমন পদে এসেছেন- সেটাও মনে করি না। আমি একজন ব্যক্তি হিসেবে কাজ করতে চেয়েছি। সুতরাং আমি এভাবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবো- এমনটা কখনো প্রত্যাশা করিনি। জেএএল’র এই নারী প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, তবে আমি উপলব্ধি করি, সাধারণ মানুষ বা আমার সহকর্মীরা আমাকে নিয়ে এমনটা ভাবে না। মিতসুকোর নিয়োগের আগে টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরে অবতরণের সময় জাপানের এই প্রতিষ্ঠানের একটি উড়োজাহাজের সঙ্গে উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি ছোট্ট বিমানের সংঘর্ষ হয়। তবে বিমান থেকে সব যাত্রীকে নিরাপদে বের করতে বিমানবালাদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ওই ঘটনার দুই সপ্তাহ পর তিনি জেএএল’র প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান।
ওই ঘটনায় উপকূলরক্ষী বাহিনীর বিমানের ছয় আরোহীর পাঁচজনই নিহত হন। ক্যাপ্টেন গুরুতর আহত হন। তবে সংঘর্ষের কয়েক মিনিটের মধ্যে জেএএল’র বিমানের ৩৭৯ যাত্রীর সবাই নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। এরপরই জেএএল’র বিমানবালাদের কঠোর প্রশিক্ষণের বিষয়টি সামনে চলে আসে। একজন সাবেক বিমানবালা হিসেবে মিতসুকো বিমান চলাচলের প্রাথমিক নিরাপত্তার গুরুত্বের বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন। ১৯৮৫ সালে মিতসুকো বিমানবালা হিসেবে যোগ দেয়ার চার মাস পর জাপান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ মাউন্ট ওসুতাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় ৫২০ ব্যক্তি নিহত হন। মিতসুকো বলেন, জেএএল’র প্রত্যেক কর্মীকে মাউন্ট ওসুতাকায় ওঠার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। ওই দুর্ঘটনা সম্পর্কে যারা জানেন, তাদের সঙ্গে কর্মীদের কথা বলার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছিল। এই নারী প্রধান আরও বলেন, আমাদের নিরাপত্তা উন্নয়ন কেন্দ্রে ওই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ প্রদর্শনীর জন্য রেখেছি। শুধু বই পড়ে নয়, যাতে কর্মীরা ওই দুর্ঘটনা সম্পর্কে হাতে-কলমে সবকিছু জানতে পারেন, শিক্ষা নিতে পারেন। জেএএল’র শীর্ষ পদে মিতসুকোর নিয়োগ বিস্ময়কর ঘটনা বটে।
আরেকটা বিষয়ও কম বিস্ময়ের নয়। ২০১০ সালে জেএএল দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল প্রায়, যাকে জাপানের করপোরেট খাতে বিরাট এক ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তবে সেই অবস্থা থেকে প্রতিষ্ঠান দ্রুত বেরিয়ে এসেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় জেএএল আকাশে উড্ডয়ন অব্যাহত রাখতে পেরেছে। এরপর তারা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। জাপান সরকার এক দশক ধরে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদে নারীদের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছে। সরকার এখন চাইছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাতে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারী নেতৃত্ব থাকে। অবশ্য এই লক্ষ্য অর্জনে ২০২০ সময়সীমা থাকলেও ওই সময়ে লক্ষ্য অর্জনে সরকার ব্যর্থ হয়। মিতসুকো বলেন, এটা শুধু করপোরেট নেতৃত্বের মানসিকতার বিষয় নয়, বরং ব্যবস্থাপক পদে আসার বিষয়ে নারীদের মধ্যেও আস্থা থাকতে হবে। জেএএল’র প্রধান বলেন, আশা করি, জেএএল-এ আমাকে শীর্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি অন্য নারীদের উৎসাহিত করবে।