ঢাকা, ১ মে ২০২৪, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

গরমের সঙ্গে বাড়ছে লোডশেডিং

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার
mzamin

দেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। এর মধ্যে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। গরমের সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিংও। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে লোডশেডিং বেড়েছে বেশি।  ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় কোথাও কোথাও ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গরম আর লোডশেডিংয়ে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। জ্বালানি সংকট থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেয়ায় এই লোডশেডিং বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার বাসিন্দা হামদান মিয়া অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। ঈদের পর থেকে দিনে-রাতে চার পাঁচ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করলেও সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা রাত ১২টার পর থেকে। তখন ঘন ঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিং হয়। প্রতিবারে প্রায় এক ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে।

বিজ্ঞাপন
বিদ্যুৎ  না থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হয় ছোট শিশু ও বয়স্কদের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের কাকলী বেগম অভিযোগ করে বলেন, তাদের এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং অনেক বেশি। বিদ্যুৎ এসে মাত্র আধা ঘণ্টা থাকে। বিদ্যুৎ আসে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা পর। 

ময়মনসিংহ এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, কোথায় ৩০  থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত  বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। একদিকে প্রচ- গরম, তার সঙ্গে বিদ্যুতের লোডশেডিং। দিন দিন বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিস্থিতি খুব খারাপ হচ্ছে। তাদের এলাকায় ১০২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০ মেগাওয়াট। গরম বাড়লে সামনের দিনগুলোতে আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা করছেন এই কর্মকর্তা।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, জ্বালানির অভাবে বা আমদানি করতে না পারায় গত দুই বছর গরমের সময় লোডশেডিং বেড়েছিল। শহরের দুই থেকে তিন ঘণ্টার লোডশেডিং হলেও গ্রামে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিংয়ের অভিযোগ ছিল গ্রাহকদের। এবারো তেমন পরিস্থিতি হওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের কম। বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকছে। সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম উৎপাদন করছে অনেকগুলো কেন্দ্র। দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে না পারায় এবং জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ও মার্কিন ডলারের জোগান না থাকায় তেল-গ্যাস-কয়লা আমদানিতে ভাটা পড়েছে।  এপ্রিলে এসে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। তাতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। এমন পরিস্থিতিতে এ বছরের সামনের দিনগুলোতে গরম বৃদ্ধির সঙ্গে লোডশেডিং বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়,  এ বছর গরমে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে প্রাক্কলন রয়েছে। জ্বালানি তথা তেল, গ্যাস ও কয়লার সরবরাহ না বাড়ালে তখন লোডশেডিংজনিত সংকট আরও বাড়বে। 
পাওয়ার সেলের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার ৬৭ মেগাওয়াট। এটা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ।  গত বছর ১৯শে এপ্রিল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। দেশে বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৬৬ লাখ। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী শতভাগ।

পিজিসিবি’র হিসাবে দেখা যায়, গত  বুধবার  সন্ধ্যা ৭ টায় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৬ হাজার ৪১১ মেগাওয়াট। ওই সময়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। এই হিসাবে বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকলেও বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জের কোথাও কোথাও মানুষ লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়ার অভিযোগ এসেছে। 

ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী দুই সংস্থা ডিপিডিসি ও ডেসকো জানায়, সরবরাহ ঘাটতির কারণে লোডশেডিং হচ্ছে না। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছু কিছু এলাকায় বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সূত্র জানায়, তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না। তাই বিতরণেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আরইবিতে ৯ হাজার মেগাওয়াটের বেশি চাহিদা। কিন্তু এই পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।

বিশেষ করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু স্থানে অপেক্ষাকৃত বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের। লোডশেডিং কম বরিশাল বিভাগ ও ফরিদপুরে।
পিডিবি’র কর্মকর্তারা বলেন, চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। 

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দৈনিক অন্তত ২৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই চাহিদামাফিক গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে সক্ষমতার অর্ধেকও উৎপাদন হচ্ছে না। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তেল আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছে না। পিডিবি’র কাছে বড় অঙ্কের বকেয়া পড়েছে তাদের। ফলে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতেও খুব বেশি উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status