দেশ বিদেশ
আহ্ছানিয়া মিশনের এক সেন্টারেই ৭৫ শতাংশ মাদকাসক্ত রোগী সুস্থ
স্টাফ রিপোর্টার
(১ সপ্তাহ আগে) ১০ মে ২০২৪, শুক্রবার, ১২:২৪ অপরাহ্ন
আহ্ছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর কেন্দ্রে গত ২০ বছরে ২ হাজার ৭৮৯ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে মাদকাসক্ত ২ হাজার ১৪২ জন ও মানসিক সমস্যায় ৬৪৭ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
মাদকাসক্ত এসব রোগীর মধ্যে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ ইয়াবা ও ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ গাঁজা সেবনকারী। এ ছাড়া ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ ঘুমের ওষুধ, ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ হিরোইন, ১২ দশমিক ৬ শতাংশ অ্যালকোহল এবং ৪৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ একই সঙ্গে একাধিক মাদক গ্রহণকারী, বাকিরা অন্যান্য মাদক গ্রহণকারী। মানসিক রোগের মধ্যে সিজোফ্রিনিয়া ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ, বাইপোলার ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ডিপ্রেশন ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ওসিডি ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং বাকিরা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল।
বৃহস্পতিবার গাজীপুর আহ্ছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এসব তথ্য জানান ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ। সংস্থাটি বলছে, দিন দিন গাঁজা ও ইয়াবা সেবনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। পারিবারিকভাবে সচেতনতা বাড়ানো উচিত। মাদকাসক্তির লক্ষণ দেখামাত্রই সঠিক কাউন্সেলিং করা জরুরি।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন মাদকদ্রব্য অপব্যবহার বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে ২০০৪ সালের ৪ঠা মে গাজীপুরে আহ্ছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। এই প্রতিষ্ঠানটি ছাড়াও ঢাকা আহছানিয়া মিশন ২০১০ সালে আহ্ছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, যশোর, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জে আহ্ছানিয়া হেনা আহমেদ মনোযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে।
কেন্দ্রটি গত ২০ বছরে মাদকদ্রুব্য অপব্যবহারের ধ্বংসাত্মক প্রভাবের সঙ্গে লড়াইরত অগণিত ব্যক্তি এবং পরিবারের জন্য আলোর বাতিঘর হয়ে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সামগ্রিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় যত্ন ও চিকিৎসা সেবা প্রদান নয় বরং তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।
আহ্ছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ডাম হেল্থ অ্যাপের মাধ্যমে রোগী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইকবাল মাসুদ আরও বলেন, এই কেন্দ্রটি তিন ধরনের রোগী যেমন মাদকদ্রব্য নির্ভরশীল, আচরণগত এবং মানসিক সমস্যাগ্রস্ত তাদের ৬ মাস ভিত্তিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে। এ ছাড়াও পূর্ণ মেয়াদ চিকিৎসা সম্পূর্ণকারী ক্লায়েন্টরা পরবর্তীতে রিলেপ্স করলে রিভিউ ক্লায়েন্ট হিসাবে ৩ মাস ভিত্তিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারবে। যারা পূর্ণমেয়াদী চিকিৎসা গ্রহণ করে এখনও সুস্থ আছেন তারা সেন্টার থেকে বছরে সর্বোচ্চ ১২ দিন বিনামূল্যে থাকা, খাওয়া ও কাউন্সেলিং সেবা পাচ্ছেন। কেন্দ্রটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে। তাদের চিকিৎসা প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হলো ক্লায়েন্টের সমস্যাগুলো নিরূপণ ও ড্রাগ টেস্ট করা। এরপর ক্লায়েন্টের চিকিৎসা পরিকল্পনা করা হয়। ডিটক্সিফিকেশন বা নির্বিষকরণের মাধ্যমে ক্লায়েন্টের মূল চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধারাবাহিক ও নিয়মিত চিকিৎসা সেবার অংশ হিসেবে রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, চিকিৎসক দ্বারা নিয়মিত চেকআপের ব্যবস্থা, যে সকল রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস, অ্যাজমা ইত্যাদি রোগ ব্যাধি থাকে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা, অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ মনো চিকিৎসকের মাধ্যমে মাসে ২ বার মনো চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।