ঢাকা, ২১ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

বিএনপি’র বহিষ্কৃতদের কপালে ভাঁজ

কিরণ শেখ
১০ মে ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোটে হেরে বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। নির্বাচনে ৭ জন চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন ৩৫ জন। এ অবস্থায় নির্বাচনে পরাজিত নেতাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও হুমকির মুখে পড়েছে। 
তারা বলছেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন অংশগ্রহণ করেছিলেন। এজন্য তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন তাদের দলে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। এরপরও তারা দলে ফেরার সুযোগের অপেক্ষায় থাকবেন। যদিও বহিষ্কৃতদের আর দলে ফেরার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বিএনপি।

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’র ৮০ নেতা অংশ নিয়েছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৫, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০ জন রয়েছেন। এরই মধ্যে তাদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে মানিকগঞ্জ জেলা হরিরামপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান তুষার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচনে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা  করেছেন। কিন্তু ফলাফল তার পক্ষে আসেনি। ভোটে তিনি হেরেছেন। এই হারই তার জীবনে এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন তিনি না পারছেন নিজ দল বিএনপিতে ফিরতে, না পারছেন অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে।

জাহিদুর রহমান তুষার মানবজমিনকে বলেন, দল তো বহিষ্কার করেছে। এখন তো আর দলে ফেরা যাচ্ছে না। তবে আমি মানুষের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। বিএনপিতে ফিরছেন না, তাহলে কী অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন দলে ফেরা হচ্ছে না। আর অন্য কোনো রাজনৈতিক দলেও যোগ দিচ্ছি না। আমার ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। এখন সেটাই করবো। পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে থাকবো।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এজন্য ভোট বর্জনের ডাক দেয় দলটি। লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছে তারা। কিন্তু দলের এই সিদ্ধান্ত না মেনে অনেক নেতাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। শুরুতে তাদের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীরাও প্রচারণায় অংশ নেন। কিন্তু তাদের বহিষ্কার করার পরে নেতাকর্মীদের আর প্রচারণায় দেখা যায়নি।

এই নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা সিংগাইর উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তোফাজ। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন। কিন্তু ভোটে তার ভাগ্য বদলায় নাই। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। এরমধ্যে দলের পদও হারালেন এবং চেয়ারম্যান পদও হারিয়ে তিনি এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার কথা বলছেন।

তোফাজ্জল হোসেন তোফাজ মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচনে হেরেছি। এখন আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করবো। আর সময়ই বলে দিবে কী হবে।
অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়ার সুযোগ নেই। আমি এখন এভাবেই থাকবো। আর কখনো সুযোগ (বিএনপি) হলে যাবো।

তবে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, বহিষ্কারের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত আগে যেটা ছিল এখনো সেটাই আছে। পরবর্তীতে দল কী করবে তা আমি জানি না। তবে এই মুহূর্তে আমি কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। 

বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আব্দুল কুদ্দুছ। বিএনপি’র রাজনীতিতে যুক্ত এই নেতা মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৯ হাজার ১৪৪টি। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় দোয়াত-কলম প্রতীকে জয়ী হয়েছেন বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতা আমিনুল ইসলাম বাদশা। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৮ হাজার ৮৮৩টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভোট হয়েছে তিন উপজেলায়। এরমধ্যে দুটিতেই বেসরকারিভাবে জয় পেয়েছেন বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতারা। গোমস্তাপুর উপজেলায় ভোট করেছেন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সদস্য আশরাফ হোসেন আলিম। আনারস প্রতীকে তিনি ৪০ হাজার ৬২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। আনাসর প্রতীকে ৩৪ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়েছেন তিনি। আবদুল হামিদ ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র সদস্য। গাজীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলন। ঘোড়া প্রতীকে তার প্রাপ্ত ভোট ১৮ হাজার ৯৬৯। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। কাপ-পিরিচ প্রতীকে ১৩ হাজার ৩২২ ভোট পান তিনি। 

ইসির সূত্রমতে, প্রথম ধাপে দেশের ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১ হাজার ৬৩৫ জন প্রার্থী। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
 

পাঠকের মতামত

"বহিষ্কারের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত"- যাই হউক না কেন সঠিক এবং ঠিক যায়গায় টাকা পড়লে আবার দলে ফিরে আসবেন এই নেতারা।কোন চিন্তার কারন নেই। আগেও অনেক বহিষ্কার হয়েছে কিন্তু ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন- টাকার বিনিময়ে। তবে সেটা পাউণ্ডে হতে হবে। এখন আবার পাউণ্ডের ও ক্রাইসিস চলছে,এই একটা সমস্যা। সর্ব শেষ উদাহরন , ব্যারিস্টার খোকন। অব্যহতির তিন দিনের মাথায় নিজ পদে প্রত্যাপন।

শামীম
১০ মে ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৩৮ অপরাহ্ন

আমি নিশ্চিত । বিএনপি এদের ক্ষমা করে দিয়ে আবার দলে ফিরিয়ে নেবে । এসব বেইমানদের ফিরিয়ে নিয়ে দলকে আরো আবর্জনা ভরপুর করবে । বিএনপির আজকের অবস্থানের জন্য এ ধরনের নেতারাই দায়ী ।

Titu Meer
১০ মে ২০২৪, শুক্রবার, ৯:১২ অপরাহ্ন

এসব মীরজাফরদের বি এন পি শুধু বের করলেই হবে না, তাদের পক্ষে নিরবাচনে যারা কাজ করেছে তাদেরও লিস্ট করে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বের করে দিতে হবে।

সালাম আলী আহসান
১০ মে ২০২৪, শুক্রবার, ১:০৫ অপরাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status