ঢাকা, ২০ মে ২০২৪, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সড়ক দুর্ঘটনা

অসুস্থ চালকদের হাতে স্টিয়ারিং ঝুঁকিতে যাত্রীরা

শুভ্র দেব
৭ মে ২০২৪, মঙ্গলবার
mzamin

সড়কে মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনা কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ। প্রতিটা দুর্ঘটনার পেছনের অনেক কারণ খুঁজে বের করা হয়। বলা হয় সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে গতি, বেপরোয়া চলাচল, ওভার লোডিং, চালকের মাদকতা, ভুল সংকেতসহ নানা কারণ জড়িত। কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার জন্য চালকদের অসুস্থতাজনিত সমস্যা সামনে উঠে আসে। গাড়ি চালানো অবস্থায় চালকদের শারীরিক অনেক সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। কারণ দেশের পেশাদার চালকদের অধিকাংশই শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। বেসরকারি সংস্থা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য বিভাগের এক জরিপে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, ৭৩ শতাংশ গাড়িচালক দৃষ্টিশক্তিজনিত সমস্যায় ভুগছেন।

বিজ্ঞাপন
অথচ চালকরা বিষয়টি জানতেন না। এ ছাড়া ৬০ শতাংশ চালক শারীরিক আরও জটিল সমস্যা নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। এসব কারণে চালকরা গাড়ি চালানো অবস্থায় অনেক সময় অসুস্থতাবোধ করেন। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অসুস্থ চালকদের হাতে স্টিয়ারিং থাকায় যাত্রীরা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই গন্তব্যে পৌঁছান।   

আহছানিয়া মিশন জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৩ এবং ওয়ার্ল্ড ডে অফ রিমেম্বারেন্স ফর রোড ট্রাফিক ভিক্টিম’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর সহযোগিতায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছিল। রাজধানীর নিকুঞ্জ এবং উত্তরা বিআরটিএ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গাবতলী বাস টার্মিনাল, মহাখালী বাস টার্মিনাল, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল এবং কুমিল্লা জিলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিচালিত ক্যাম্পেইনে ৮২৪ জন চালক অংশগ্রহণ করেছিলেন। এদের মধ্যে ৫৪১ জন চালক চক্ষু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এতে প্রায় ৬৬ শতাংশ চালকের চোখের বিভিন্ন সমস্যা ধরা পড়ে। এদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ চালকের দৃষ্টিশক্তিজনিত সমস্যা পান চিকিৎসকরা। যাদের চশমা ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী চালকদের ২৬ শতাংশ এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ২৩ শতাংশ চালকের চোখের সমস্যা পাওয়া গেছে। আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে আরও জানা গেছে, ৮২৪ জন চালকের মধ্যে ৪০০ জন চালকের রক্তে শর্করা সীমার উপরে। এ ধরনের সমস্যা ভুগছেন ৪৯ শতাংশ চালক। ২৫৮ জন চালক উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এটি শতকরায় ৩১ শতাংশ এবং ১৩৭ জন চালক উচ্চ রক্তে শর্করা এবং উচ্চ রক্তচাপ উভয় সমস্যায় ভুগছেন। যা শতকরা ১৭ শতাংশ। এ ছাড়াও ৬০ শতাংশের বেশি চালক গাড়ি চালানোর জন্য শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নন।

নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে চালকদের অসুস্থতা অন্যতম একটি কারণ। যদিও বেশির ভাগ চালক স্বাস্থ্য সচেতন না থাকার কারণে নিজেদের অসুস্থতা সর্ম্পকে তারা অবগত নন। কিন্তু বিআরটিএ যদি সঠিক নিয়মনীতি অনুসরণ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতো তবে চালকরা এমনিতেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় আসতো। নির্দিষ্ট সময় পর পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে অসুস্থ চালকদের চিহ্নিত করা যেতো। অথচ চালকরা সবসময়ই অসাধু কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিয়ে অসৎ উপায়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ তে মোটরযানকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যেখানে সড়ক ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার বিষয়টি নেই বললেই চলে। সড়ক ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ করে মোটরযান পরিচালনায় নিযুক্ত তথা গাড়ি চালকদের শারীরিক সুস্থতা, নিরাপদ সড়ক সংক্রান্ত প্রশিক্ষণসহ জাতিসংঘে সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের আলোকে একটি ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ মানবজমিনকে বলেন, চালকরা শারীরিক সমস্যা নিয়ে গাড়ি চালালে যাত্রীরা সবসময় মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকবেন। কারণ অসুস্থ শরীর নিয়ে গাড়ি চালানো বিপদজ্জনক। যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। বিদেশে পেশাদার চালকদের নির্দিষ্ট সময় পর পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। চালকরা একবার লাইসেন্স পেয়ে গেলে সারা জীবন মেয়াদ বাড়িয়ে বাড়িয়ে এটাই চলতে থাকে। তাই পেশাদার চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টি পলিসি’র মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি এলার্মিং। কারণ চোখের সমস্যা নিয়ে রাতের বেলা গাড়ি চালালে যাত্রীদের নিরাপত্তা একেবারেই অনিশ্চিত। এবং চালকরা যে এত বেশি শারীরিক সমস্যা নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন সেটি বিআরটিএও জানতো না। তারা ভাবেনি এত চালকের চোখের সমস্যা থাকবে। তাই বিআরটিএ-এর পেশাদার লাইসেন্সধারী চালকদের প্রতিবছর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। 

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী মানবজমিনকে বলেন, চালকরা নিজেরাও জানতেন না তাদের চোখে সমস্যা আছে। যাদের চোখে সমস্যা ধরা পড়েছে তাদের খুব দ্রুত বিনামূল্যে চমশা দেবো। চালকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা শুরু করবো। লাইসেন্স দেয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ডোপ টেস্ট হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনরায় পরীক্ষা করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা ভাবলাম চালকদের হয়তো চোখে  সমস্যা থাকতে পারে। পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার আয়োজন করে এসব সমস্যা পাওয়া গেল। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এসব কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status