ঢাকা, ১১ মে ২০২৪, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

দাবদাহের প্রবাহ সবজির বাজারেও

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার
mzamin

বাজারে বেড়েই চলছে অস্থিরতা। দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। এদিকে তাপমাত্রার পারদ ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। আরও ৭২ ঘণ্টার হিট এলার্ট জারি করা হয়েছে দেশে। আবহাওয়ার এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এর প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারেও। সরজমিন রাজধানীর মিরপুর-১ ও কাজীপাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি সবজির কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। প্রচ- গরমে সবজি নষ্ট এবং সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম হাতের নাগালের বাইরে বলছেন বিক্রেতারা। ৬০ থেকে ৭০ টাকার কমে বাজারে কোনো ধরনের সবজির দেখা মিলছে না। একইসঙ্গে বাজারে পিয়াজ, রসুন ও আদাও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে প্রায় প্রতিটি সবজির কেজিতে সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত ১০ টাকা করে বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন
প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, গত সপ্তাহেও এর দাম ছিল ৫০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢ্যাঁড়সের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। প্রতি কেজি করল্লা গত সপ্তাহে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। পটোলের দাম উঠেছে ১২০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৮০ টাকা। সপ্তাহ ঘুরে ২০ টাকা বেড়ে বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে। ৬০ টাকার শশা ও গাজর বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। গরিবের সবজি নামে পরিচিত পেঁপেও ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। চিচিঙ্গা ও ধুন্দলের কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। প্রতি কেজি ঝিঙার মূল্য ৮০ টাকা। আকারভেদে বেগুনের মূল্য ২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়ার সরবরাহ ভালো থাকায় ১০ টাকা কমে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের টমেটোর কেজিতেও ১০ টাকা করে বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মুলার কেজিতে ২০ টাকা করে বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। প্রতি হালি লেবু ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি কাঁকরোল ১২০ টাকা, শজনের ডাঁটা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি উভয়ই ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে সবজি সরবরাহের ক্ষেত্রে। অতিরিক্ত গরমে চাষিদের ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে সবজি। গরমে বারংবার সেচ দেয়ায় সবজি উৎপাদনের খরচও বেড়েছে। 

ঈদের দুই সপ্তাহ গেলেও কমেনি পিয়াজ-রসুনের দাম। বাজারে মানভেদে পিয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি রসুন ১৬০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২৪০ টাকা, লাল আলু ৫০ ও সাদা আলু ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রীর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, নতুন দামের সয়াবিন তেল বাজারে এসেছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৭ টাকা, যা আগের দামের থেকে ৪ টাকা বেশি।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম এখনো দুইশ’ টাকার নিচে নামেনি। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা, কক মুরগি ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোয় প্রতি ডজন ফার্মের লাল ডিম ১২০ থেকে ১২৫ টাকা, সাদা ডিম ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
এসব বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, মাগুর মাছ ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা, শিং মাছ ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মৃগেল মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই মাছ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা ও বোয়াল মাছ ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 
গরমের প্রভাব পড়েছে ডাব ও তরমুজের বাজারেও। ছোটো আকারের তরমুজ ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া বাজারে বড় মাপের প্রতি কেজি তরমুজ ৬০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে প্রতিটি ডাব ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

গরমে খামারিদের ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা: টানা তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোক করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দৈনিক এক লাখ মুরগি মরছে বলে জানিয়েছেন প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ)। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই তথ্য জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঈদের পর থেকে শুরু হওয়া চলমান তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোকের কারণে সারা দেশে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মুরগি মারা যাচ্ছে। সেই হিসেবে টানা দুই সপ্তাহের তাপপ্রবাহে সারা দেশে ১০ লাখের বেশি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগি মারা গেছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

হিটস্ট্রোকে সব থেকে বেশি মুরগির মৃত্যুর হার নরসিংদীতে। এ অঞ্চলে গত ১২ দিনে প্রায় তিন লাখ মুরগি মারা গেছে। এরপর ময়মনসিংহ-গাজীপুর অঞ্চলে ২ লাখ, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১ লাখ ৭৫ হাজার, সিলেট অঞ্চলে ৫০ হাজার, যশোর ১ লাখ ৫০ হাজার, পাবনায় ৫০ হাজার, চুয়াডাঙ্গায় ১ লাখ মুরগি মারা গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে দেশের মুরগি ও ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, ভয়ানক পরিস্থিতিতে ডিম ও মুরগি উৎপাদন কমেছে ৪ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status