ঢাকা, ৬ মে ২০২৪, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

অরকা হোমে বেড়ে উঠছে রানা প্লাজায় হতাহত শ্রমিকদের ২১ শিশু

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

সাভারের রানা প্লাজায় ভবন ধসে কেউ হারিয়েছে মা কেউ হারিয়েছে বাবা। এমন ২১ জন শিশু বেড়ে উঠছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের অরকা হোমসে। এরমধ্যে ৯ জন মেয়ে, ১২ জন ছেলে। সেখানে লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও মাতৃস্নেহে বেড়ে উঠছে এসব শিশুরা। বিগত ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল ঘটেছিল ঢাকা জেলার সাভারস্থ রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনা। ভয়াবহ এ ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্ণ হলো।  অরকা-হোমস কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন (ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট এসোসিয়েশন) এর সদস্যরা ২০১৪ সালে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ‘অরকা হোম’ নামের এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।
পরবর্তীতে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট দু’টি এবং দুই কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা বিশিষ্ট অপর একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে উন্নত পরিবেশে ২১ জন শিশু বসবাস করছে। তাদের জন্য মানসম্মত আবাসিক ব্যবস্থাসহ প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠ গ্রহণ, বিনোদন, ক্রীড়া ও পাঠাগার রয়েছে। এই ২১ জনের বাইরেও আরও ৩১ জন এতিম ছেলে-মেয়ে এখানে বাস করে।

সূত্রটি আরও জানায়, অরকা হোমের মাঠেই রয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোসেনপুর মুসলিম একাডেমি।

বিজ্ঞাপন
এখানেই ওইসব শিশুরা লেখাপড়া করে আসছে। হোসেনপুর মুসলিম একাডেমিতে প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে। এই একাডেমিতে বর্তমানে প্রায় ৪০০ জন ছাত্রছাত্রী ও ২০ জন শিক্ষক রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় পার্শ্ববর্তী সূর্য্যমুখী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। রানা প্লাজায় আহত শ্রীমতি গীতা রানীর ছেলে শংকর কুমার রায়। তার পিতা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা গ্রামের স্বপন চন্দ্র রায়। শংকর কুমার রায় বলেন, আমার মা রানা প্লাজায় ৪র্থ তলার পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে মা। সরকারিভাবে ৩ লাখ টাকা সাহায্য পেয়েছিল। যা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলছে। আমি এখন অরকা হোমে থেকে লেখাপড়া করছি। আমি উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে প্রকৌশলী হতে চাই। নিহত নার্গিস বেগমের ছেলে আল-আমিন মিয়া। পিতা গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কিশামত শেরপুর গ্রামের তোজাম্মেল হক তুহিন। আল-আমিন জানায়, রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় মা মারা যাবার পর এখানেই আমার ঠাঁই হয়েছে। আমি অরকা হোমের সহায়তায় লেখাপড়া করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। হোসনেপুর মুসলিম একাডেমি ও অরকা হোমের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত রফিক মিয়া বলেন, রানা প্লাজায় ট্র্যাজেডির হতাহত পরিবারের যেসকল সন্তান এখানে রয়েছে তাদের লেখাপড়া, থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ অরকা হোম থেকে বহন করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে বিজিএমইএ নামের সংগঠনটি প্রতি মাসে কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা করে আসছে। গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলার হতাহতের ছেলে-মেয়েরা এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এদের কারও বাবা, আবার কারও মা এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। এসব হতাহত পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে। মেয়েদের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত নুরজাহান বেগম বলেন, মেয়েদের পৃথক ভবনে রেখে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হয়ে থাকে। এখানে বসবাসকারী মেয়ে শিশুদের লেখাপড়া শেষে কর্মসংস্থান ও বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, দু’জন চিকিৎসক সপ্তাহে দুইদিন এখানে এসে শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।
গাইবান্ধা অরকা হোমসের পরিচালক মো. জাহিদুল হক জানান, এখানে বসবাসকারী শিশুদের লেখাপড়া শেষ করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। শিশুরা যেন বাবা-মায়ের মতো স্নেহ পায় সেজন্য সবরকমের ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। একজন ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজার, কেয়ারটেকার, এক্সিকিউটিভ, নিরাপত্তাকর্মীসহ ৩ জন বাবুর্চি শিশু-কিশোরদের দেখভালের জন্য হোমসে দায়িত্বপালন করছেন। এখানকার শিশুরা যেদিন সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে, সেদিনই আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status