অনলাইন
মালয়েশিয়াতে হুন্ডির দাপটে দিশেহারা রেমিট্যান্স হাউজগুলো
আরিফুল ইসলাম, মালেয়শিয়া
(২ সপ্তাহ আগে) ২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ৫:১৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ২:৩২ অপরাহ্ন
শ্রমিক, শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী ও নানা পেশার করিতকর্মার দেশ মালয়েশিয়া। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস এখানে। এদের বড় একটা অংশের প্রতিদিন প্রায় দেশে টাকা পাঠানো এবং দেশ থেকে টাকা আনার প্রয়োজন পড়ে। সে হিসেবে মালেয়শিয়া থেকে বাংলাদেশে টাকা আনা এবং পাঠানোর পরিমাণ কম নয়।
দেশটিতে অবস্থিত রেমিট্যান্স হাউজগুলো বলছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে বৈধ চ্যানেলে মালয়েশিয়া থেকে ১২ কোটি ২৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। তা সত্যেও বিশাল এই বাংলাদেশি অধ্যুষিত মালেয়শিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসীদের তুলনায় রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ কম বলে মনে করেছেন রেমিট্যান্স হাউজগুলোর কর্মকর্তারা।
এদিকে রেমিট্যান্স হাউজগুলোর পাশাপাশি, বৈধপথে যেন প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠায় সে উদ্দেশ্যে হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে প্রচার প্রচারণা সভা আয়োজন করে যাচ্ছে তারা। এছাড়া রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে সরকার ঘোষিত ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তা সত্ত্বেও প্রত্যাশা অনুযায়ী আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন তারা।
গত কয়েক মাসের অর্থনৈতিক চিত্র বলছে, বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে রেমিট্যান্স আসা দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া ৫ম স্থানে থাকলেও সরকারি প্রণোদনা বাড়িয়েও সে ধারা অব্যহত রাখতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। ফলে হুন্ডির দাপটে একরকম দিশেহারা হয়ে পড়েছে রেমিট্যান্স হাউজগুলো।
গেল হাতেগোনা কয়েক বছর পূর্বের মহামারী ও সাম্প্রতি ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা এবং হুন্ডিকারবারীদের বিষয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের দরপতনের মধ্যে যেন হুন্ডিকে করেছে সরকারি মুদ্রার বিপরীতে রসগোল্লা।
ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে যেখানে সাধারণ প্রবাসীরা পায় শতকরা ৫ শতাংশ, সেখানে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠালে তারা পাচ্ছে আরো বেশি রেট। সম্প্রতি হুন্ডিকারবারীদের হিসাব মতে, হুন্ডিতে টাকা পাঠালে ডলার প্রতি ৫/৬ টাকা বেশি পাওয়া যায় ফলে, দুটো বেশি টাকার জন্য হুন্ডির পথেই ঝুঁকছেন সাধারণ প্রবাসীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মালেয়শিয়া প্রবাসী জানিয়েছেন, আমরা কষ্ট করে টাকা আয় করি। ব্যাংকে টাকা পাঠালে আমরা কম টাকা পাই, আবার পাঠানোর জন্য আলাদা করে ফি দিতে হয়।
বিগত কয়েক দশকের মধ্যে উল্টোচিত্র বিরাজ করছে আমাদের দেশটিতে। আগে যেখানে মালয়েশিয়া থেকে আমাদের দেশে ডিগ্রী আনতে যেতো মালেশিয়ানরা সেখানে শিক্ষা ক্ষেত্রের স্রোত বইছে উল্টোপথে। এখন আমাদের দেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়তে আসে মালেয়শিয়ায় তাদের ডিগ্রি অর্জনের জন্য। সে ক্ষেত্রেও এডমিশন ও টিউশন ফি পরিশোধে রয়েছে নানা জটিলতা। তারা খুবই আপসোস করে জানিয়েছেন, এখানে তাদের টিউশন ফি দিতে হয়। দেশ থেকে তাকে টাকা আনতে হয়। বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করা বন্ধ থাকে ফলে তাদের বাধ্য হয়ে হুন্ডিতে টাকা আনতে হয়। ইউনিভার্সিটি গুলো ডলারের রেটের তুলনায় লোকাল কারেন্সি রেট টাকায় কম পড়ে ফলে হুন্ডিই তাদের সুবিধা হয়।
এদিকে এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশ থেকে টাকা আনার বৈধ চ্যানেল না থাকায় হুন্ডিকারবারীদের পোয়াবারো অবস্থা। তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশিরা অনেকেই এখানে কোম্পানি খুলে ব্যবসা চালাচ্ছেন। প্রতিনিয়িত এখানে ব্যবসার জন্য তাদের রিঙ্গিত প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশি বিনোয়োগের টাকা আনার তেমন সুযোগ নেই আমাদের। এমনকি অনেকেই মালেয়শিয়ায় সেকেন্ড-হোম নিচ্ছেন এবং যারা পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হচ্ছেন তাদের বড় অংকের টাকা এখানে বিনিয়োগ করতে হয়, যার বেশির ভাগই আসছে এই হুন্ডির মাধ্যমে।
এছাড়া চলমান ম্যানপাওয়ার ব্যবসায় এজেন্টগুলোকে ফি পরিশোধ করতে লাখ লাখ শ্রমিকের বিশাল পরিমাণ টাকার অধিকাংশ আসছে এই হুন্ডির মাধ্যমে। দেশ থেকে গার্মেন্টস সামগ্রী এখানে বৈধ পথে আসলেও টাকার লেনদেন হয় দেশের অর্থনীতি খাওয়া এই হুন্ডির মাধ্যমেই।
এদিকে মালেয়শিয়াতে সারা বছরই চলে যখন তখন অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান। অনেকেই এখনো সিস্টেমেটিক্যালী অবৈধভাবে বসবাস করছেন। যাদের ভিসার মেয়াদ নেই তারা ইচ্ছা করলেও বৈধভাবে টাকা পাঠাতে বাহির হতে সাহস করে না ধরপাকড়ের ভয়ে। ফলে হুন্ডিওয়ালারা তাদের রুমে এসে সহজে হুন্ডির লেনদেন করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
কথা হয়েছিলো, অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউস এসডি এন বিএইচডির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচালক সুলতান আহমেদের সাথে, হুন্ডির বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলের সাথে হুন্ডির পার্থক্য বেশি হওয়ার কারণে গত রমযান এবং ঈদের মাস হওয়া সত্ত্বেও চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসছে।
এছাড়া চলমান ডলারের বিপরীত রিঙ্গিতের দরপতন এবং রিঙ্গিতের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স কমে আসছে বলেও মনে করেন এনবিএল মানি ট্রান্সফার মালয়েশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আলী হায়দার মর্তুজা। তিনি বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে গত মার্চ মাসে এনবিএল মানি ট্রান্সফার থেকে ২ কোটি ১২ লাখ ডলার প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠালেও চলতিমাস (ঈদের মাস) হওয়ার পরও গত মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কম।
প্লাসিড মানি এক্সচেঞ্জ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, রেমিট্যান্স খাতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেটা কাটিয়ে উঠতে প্রাণপণ চেষ্টা চলছে। তবে এই মুহূর্তে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ চ্যানেলে প্রেরিত রেমিটেন্সের বিপরীতে আরও প্রণোদনা বাড়ানো উচিৎ। প্রণোদনা বাড়ালে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রবাসীরা বেশী উৎসাহ পাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী রাখঢাক না রেখেই বলেন, প্রণোদনার চেয়েও বেশি টাকা পাওয়া যায় হুন্ডির মাধ্যমে। ভিসাবাণিজ্য, আন্ডার ইনভয়েসের (প্রকৃত মূল্য কম দেখানো) মতো অবৈধ পথও আবার চালু হয়ে গেছে এখানে। এতে এখন তরতর করে বাড়ছে হুন্ডি।
মালয়েশিয়া প্রবাসীরা বলছেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের সঙ্গে শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ বাড়ানো দরকার। তাদের সেবার মানও উন্নত করা দরকার। প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধার প্রতিও নজর দেওয়া দরকার।
এর পাশাপাশি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট উত্তরণে আমাদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু প্রচলিত গৎবাঁধা আলোচনা করলে চলবে না। বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা, কর্মপন্থা ও বাস্তবায়নে স্বচেষ্ট হতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষ নিজের স্বার্থে দেশপ্রেমিক আবার নিজের স্বার্থে দেশদ্রোহী। বাবা-মা কঠোর না হলে যেমন সন্তান বখে গেলে তাদের সুপথে আনতে মাঝেমধ্যে কঠোর হতে হয়। তেমন দেশের অর্থনীতি খাওয়া হুন্ডিকে বাগে আনতে সুষ্ঠুভাবে আইন প্রণয়ন এবং তা সবার জন্য বাস্তবায়ন করতে হবে।
এছাড়াও উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের কাছ থেকে সুচিন্তিত মতামত নিয়ে সমন্বিত স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল ঠিক করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এর পাশাপাশি, প্রবাসীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরের সঙ্গে পাসপোর্ট নম্বরের লিংক সংযুক্ত করতে হবে যেন, সরকার নিশ্চিত হতে পারে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠিয়েছেন কি না? আর ব্যাংকগুলোকেও প্রতি মাসে তাদের নমিনিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৈদেশিক মুদ্রা তুলেছেন কি না নিশ্চিত করতে পারলে হুন্ডিকে দমানো সম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বোদ্ধারা।
আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকে টাকা পাঠাই, কিন্তু ৫% প্রণোদনা আজ পর্যন্ত পাইনি।
আমার সোনালী ব্যাংকে টাকা আসে মালয়েশিয়া থেকে এখন পর্যন্ত ৫% পাইনি অনেক চেষ্টা করেছি বাংলাদেশ ব্যাংকে কল করেছি যে কোন সমাধান পাইনি, সোনালী ব্যাংক থেকে বলে ওই দেশদের সরাসরি পাঠাতে কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে সরাসরি পাঠায় না ওরা ভায়া হয়ে পাঠায় আমরা বললে ব্যাঙ্গালোর ঝামেলা করে এর জন্য একটা শস্য সমাধান চাই
Desher durniti bondho hole hundi bondho hobe… he sob amla- rajniti bid koti koti taka kamay… oi taka kothay… ?? Hundi hoye chele meye bow sala sali er account e jay … r dollar collection hoye remittance theke… r under invoices payments somossa na.. oita legal way hole oo same payment jeto….
প্রবাসী শ্রমিকরা কষ্ট করে টাকা কামিয়ে দুই পয়সা বেশির জন্য হর্ন হয়ে খুঁজে। তারা যেখানে বেশি পাবে সেখানেই তো পয়সা দেবে। দেশের কথা? শুধু কি প্রবাসীরা ভাববে? যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে তাদের কি ভাবতে হয়না। হুন্ডির রেট রেমিট্যান্স রেইট থেকে বেশি তাই প্রবাসীরা হুন্ডিতে টাকা দিয়ে স্বস্থিবোধ করে। আংগুলি শুধু প্রবাসীদের দিকে তুলেন না। টাকা পাচারকারীদের দিকে তাকান।