ঢাকা, ১৪ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

আস্ত নদী গিলে খাচ্ছে জিয়াউর, ঝুঁকিতে ৫০ পরিবার

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার
mzamin

পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাম নদী। পঞ্চগড় সদর ও বোদা উপজেলার মধ্যদিয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে এ নদী। নদীটি ধাক্কামারা এলাকার নিম্নাঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের পামের পাড় দিয়ে বন্দরমনি এলাকায় করতোয়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ছোট পাম নদীটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। দখল আর গতিপথ পরিবর্তন করার জন্য অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ছবির মতো সুন্দর পাম নদী। বর্তমানে সামান্য পানি প্রবাহিত হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির উপর দিয়ে। নদীর বুকে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি বিশাল আয়তনের পাড় বেঁধে পুকুর করার জন্য এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কারও কোনো তোয়াক্কা না করে ওই ব্যক্তি এক অংশে নদীতে গভীর খনন করে করেছেন মৎস্য খামার আর অপর অংশে করছেন ধান চাষ। বর্তমানে বেশ দাপটের সঙ্গেই এস্কেভেটর দিয়ে নদীর জমিতে পুকুরের পরিধি বাড়িয়ে চলেছেন। এতে বর্ষা মৌসুমে অর্ধশত পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন
বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের পামেরপাড়া এলাকায় পঞ্চগড়-মাড়েয়া সড়কের কোল ঘেঁষে স্থানীয় ওই প্রভাবশালী জিয়াউর রহমান জিয়ার এমন রাজত্ব চলছে। এ ব্যক্তি পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে মাড়েয়া যাওয়ার পথে পাম নদীর বাম দিকে এস্কেভেটর দিয়ে বাড়াচ্ছেন পুকুরের পরিধি। গভীর করছেন পুকুর। দখল পাকাপোক্ত করতে শক্ত করে বাঁধা হচ্ছে পুকুরের পাড়। ওদিকে পাম সেতুর পিলার ঘেঁষে খনন কাজ করার কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি। সেই সঙ্গে সেতুর বাঁধও ক্ষতির মুখে পড়েছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় নিম্নআয়ের অন্তত ৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি বর্ষায় ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। নদী পাড়ে বাঁশ, গাছসহ গত বছরের ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন রয়েছে গেছে এখনো। জিয়াউর রহমান জিয়া প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের তেমন একটা ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের পামের পাড়ার যে স্থানে পুকুর খনন করা হয়েছে নদীটির গতিপথ ছিল তার মাঝ বরাবর এলাকা দিয়ে। বেশ প্রশস্ত ছিল নদীটি। বর্তমানে নদীর স্থানে পুকুর করে নদীর প্রবাহ পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে পশ্চিমের জনবসতির পাশ দিয়ে। এতে উপড়ে পড়েছে নদী পাড়ের বাঁশঝাড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। ওই এলাকার আসাদুল ইসলাম বলেন, নদীটি আগে জিয়াদের বাড়ির পাশ দিয়ে ছিল। এখন নদীর মধ্যে পুকুর করে তারা সরু গতিপথ করে দিয়েছে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে। গত বছর বর্ষায় আমাদের এপাশে ভাঙন শুরু হয়েছে। এবার বর্ষায় আরও বেশি ভাঙন হবে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করে না। ওই এলাকার বৃদ্ধ রূপবান বানু বলেন, আমি অনেকদিন ধরে দেখছি নদীটি ছিল বর্তমানে যেখানে পুকুর করেছে তার মাঝ বরাবর। এখন তারা পুকুর কেটে নদী করে দিয়েছে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে। বর্ষা এলেই ভিটেতে ভাঙন শুরু হয়। তাদের কেউ কিছু বলে না। আমরা গরিব মানুষ তাদের সঙ্গে লেগে তো পারবো না। তাই চুপ থাকি। এ বিষয়ে জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, নদীর জমি যেটি আপনারা বলছেন সেটি আমার অর্পিত সম্পতি। আদালতের মাধ্যমে সেটি আমি দায়মুক্তি পেয়েছি। আমার জমিতেই মাছ চাষ করার জন্য পাড়সহ পুকুর করেছি। নদী নদীর জায়গায় আছে। আমি কোনো নদী দখল করছি না। পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মণ বলেন, এ বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। বিষয়টি পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উত্থাপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির বলেন, আমরা গিয়ে পুকুর খনন বন্ধ করে দিয়েছি। এ ছাড়া তাকে পূর্বের জায়গায় ফিরে যেতে বলা হয়েছে। তাকে ৭ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। না গেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status