সিলেট নগরীর ২৫নং ওয়ার্ডের লাউয়াই এলাকায় একটি রাস্তার জলাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘদিন থেকে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। পানি নিষ্কাশনে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বছরের পর বছর ধরে রাস্তাটি জলমগ্ন রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। হাঁটুপানি মাড়িয়ে এলাকাবাসীকে যাতায়াত করতে হয়। ফলে দুর্ভোগে নাকাল এলাকার জনসাধারণ। তবে জলাবদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করে রাস্তার উন্নয়নে স্থানীয়দের অসযোগিতার অভিযোগ করে নিজের ওপর থেকে দায় এড়িয়ে যান স্থানীয় কাউন্সিলর তাকবির ইসলাম পিন্টু। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, রাস্তাটি বড় করতে হবে এজন্য তাকে সহযোগিতা করছেন না। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর ২৫ এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যদিয়ে এই রাস্তাটির অবস্থান। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বঙ্গবীর রোডের লাউয়াই প্রান্ত থেকে দক্ষিণ খোজারখলা, বরইকান্দি, ধরাধরপুর, কামুসানা, পুরান তেতলি পর্যন্ত বিদ্যমান রাস্তা থেকে ২৫নং ওয়ার্ডভুক্ত লাউয়াই অংশ, নুরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজ, সাউথ সুরমা উচ্চ বিদ্যালয়, লাউয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাউয়াই ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, ইক্বরা কিন্ডারগার্টেন স্কুল, লাউয়াইস্থ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভাগীয় ট্রেনিং সেন্টার এবং বঙ্গবীর রোডে অবস্থিত উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজিওনাল রিসোর্স সেন্টারের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বঙ্গবীর রোডের ব্যবসায়ীসহ বিপুলসংখ্যক এলাকাবাসী প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। একইসঙ্গে দক্ষিণ সুরমার অন্যতম বৃহৎ লাউয়াই কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এবং দক্ষিণ খোজারখলা জামে মসজিদে যাতায়াতকারী অসংখ্য মুসল্লিও এ রাস্তা ব্যবহার করেন।
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকার ছোট ছোট ড্রেন-নালা উপচে রাস্তার উপর পানি জমে যাচ্ছে। ফলে মসজিদের মুসল্লি, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের নোংরা হাঁটুপানি মাড়িয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, সিটি করপোরেশন গঠনের পর ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের তত্ত্ব্বাবধানে রাস্তাটি দু’বার আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে পাকাকরণ ও সংস্কার করা হয়। তবে দুঃখজনক হলো, বিগত ২ মেয়াদ থেকে এই রাস্তার উন্নয়নে সিটি কর্তৃপক্ষ উদাসীন। কর্তৃপক্ষ ‘এই এলাকার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হয়ে সরকারি সড়কের পাশে কোনো ড্রেন নাই’-এই অজুহাত দেখিয়ে এলাকাবাসীকে নিবৃত্ত করতেন। কিন্তু সিটি কর্তৃপক্ষ একটু আন্তরিক হলেই মহল্লার অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজ সিস্টেমকে মূল সড়কের ড্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিলে এলাকাবাসী এই দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পান। তারা অভিযোগ করে বলেন, রাস্তাটি সংস্কারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭শে মে তৎকালীন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সে সময়ের প্যানেল মেয়র ও সিটি কাউন্সিলর এডভোকেট রোকশানা বেগম শাহনাজ এবং সাবেক ও বর্তমান সিটি কাউন্সিলর তাকবির ইসলাম পিন্টুকে সঙ্গে নিয়ে পানিবন্দি এই এলাকাটি পরিদর্শন করেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি এলাকাবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং পানি নিষ্কাশনে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে দুই কাউন্সিলর ও সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু কার্যত বিগত প্রায় ৭ বছরেও মেয়রের নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে অনেকটা অভিভাবকহীন এলাকাবাসীকে নিরন্তর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, ২৫নং ওয়ার্ড গঠনের সময় লাউয়াই গ্রামের কিছু অংশ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার পর প্রথম ২ মেয়াদের পর থেকেই এই এলাকার কয়েকটি পরিবার নিরন্তর অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার। বছরের পর বছর পানিবন্ধি থাকলেও দেখার যেন কেউ নাই। বার বার আবেদন-নিবেদন করা হলেও ‘হবে-হচ্ছে’ বলে আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। এর ফলে ওই এলাকার এই ২০ থেকে ২৫টি পরিবারের দুর্ভোগ লাঘবে বাস্তবসম্মত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকবির ইসলাম পিন্টু বলেন, ‘রাস্তাটি নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে, আমি তাদের বলেছি রাস্তাটি বড় করতে হবে, কমপক্ষে ১৬ ফুট প্রশস্ত রাস্তা হতে হবে, যাতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ জরুরি প্রয়োজনে রাস্তাটি ব্যবহার করা যায়। আমার অংশের লোকেরা প্রশস্তকরণে রাজি হলেও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু লোক তাতে রাজি হচ্ছেন না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সঙ্গে আলাপ করে কয়েকদিনের মধ্যেই রাস্তার কাজ শুরু হবে।’ ২৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম শাকিল বলেন, রাস্তাটি সম্পর্কে অবগত আছি, বর্তমানে সিসিকের বাজেট নেই, অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে রাস্তাটির উন্নয়নে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।