ঢাকা, ৪ মে ২০২৪, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক

মাঠ ছাড়েননি বেশির ভাগ প্রার্থী

কাজী সোহাগ
২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার
mzamin

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলায় প্রার্থী না হন তার নির্দেশনা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কড়া হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ খুব একটা হয়নি। এমন অনেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় চাপে দুই একজন অবশ্য সরে দাঁড়িয়েছেন। এমন অবস্থায় দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ কারণে মন্ত্রী ও এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। দলীয় নেতারা জানান, নির্দেশনা জারি করা হলেও কোনো ক্যাটাগরি বা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জানানো হয়নি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও  সাংগঠনিক সম্পাদকরা মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়দের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। কারণ অনেক মন্ত্রী ও এমপি’র আত্মীয় আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

বিজ্ঞাপন
আবার এলাকায় জনপ্রিয়। কেউ কেউ আছেন আগেই উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়াটা দুঃখজনক হবে বলে জানান- দলটির নেতারা। আবার কিছু এলাকায় যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন তারা মন্ত্রী ও এমপি’র ক্ষমতার প্রভাবেই দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো প্রার্থী দেয়নি। নির্বাচনটা যে কারও জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করে দলটি। এই নির্দেশনার আলোকে মন্ত্রী ও এমপি’র অনেক আত্মীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী করার ইচ্ছা পোষণ করেন। তাদের যুক্তি-দল থেকে নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দেয়ার পর আবার নতুন করে নির্দেশনা জারি করা ঠিক হয়নি। মন্ত্রী ও এমপি’র আত্মীয় বলে তারা নেতা হতে পারবেন না বিষয়টি অযৌক্তিক। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘনিষ্ঠজনদের নাম ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য (এমপি)। সেই কারণে তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলটির হাইকমান্ড। সারা দেশে এখন পর্যন্ত মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিকটাত্মীয় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে আছেন ২৫ জনের মতো। এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এর মধ্যে ১৫ জনের মতো আছেন প্রথম পর্বে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক  নেতা বলেন, মন্ত্রী ও এমপি’র আত্মীয়রা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না এ নির্দেশনা সরাসরি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। তিনি বুঝেশুনেই ওই নির্দেশনা দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বার্তা দলের সাধারণ সম্পাদক তিন দফায় সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন। যারা তাদের ভাই, পুত্র, শ্যালক, মামাদেরকে শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী রাখবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, সিদ্ধান্তটা নিতে দেরি হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের সরে দাঁড়াতে নির্দেশনা দিয়েছে ১৮ই এপ্রিল। আর প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন ছিল ১৫ই এপ্রিল। অর্থাৎ চাইলেও অনেকে আর মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। এজন্যই কোথাও কোথাও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনেরা একমাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কিংবা আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হয়ে গেছেন। তাদের বাদ দিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকে না কিংবা ভোটই হবে না। যেখানে দলের একাধিক প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছেন, সেসব উপজেলার প্রার্থীরা সুবিধা পাবেন। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, স্বজনদেরকে নির্বাচন থেকে না সরাতে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা নানা রকম অযুহাত দাঁড় করাচ্ছেন। এ সমস্ত অযুহাতের মধ্যে সবচেয়ে বড় অযুহাত হচ্ছে যে, আগে থেকেই তারা রাজনীতি করেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন যে, তার খালাতো ভাই আগে থেকেই রাজনীতি করেন এবং আগেও তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কাজেই তিনি ড. রাজ্জাকের খালাতো ভাই এই পরিচয়ে তিনি নির্বাচন করছেন না। অন্যদিকে শাজাহান খানের বক্তব্য হলো, তার ছেলের যদি প্রার্থিতা প্রত্যাহার হয় তাহলে অন্য কোনো প্রার্থী থাকবেন না। অন্য কোনো প্রার্থী না থাকলে নির্বাচনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন তখন পুনঃতফসিল ঘোষণা করবে এবং নতুন করে নির্বাচনের আয়োজন করবে। একইভাবে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়ের আপন চাচাতো ভাই মো. রাশেদ ইউসুফ জুয়েল। তিনি নেতাকর্মীদের জানান দিচ্ছেন যে, তানভীর শাকিল জয় তাকে সমর্থন দিয়েছেন। এতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এজন্য উপজেলায় সাধারণ নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি জুয়েলের বাবা আবু ইউসুফ সূর্য সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি এমপি তানভীর শাকিল জয়ের কথা বলে তার ছেলের জন্য কাজ করতে নেতাকর্মীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিকটাত্মীয়দের সরে যেতেই হবে। তিনি বলেন, যারা প্রার্থী হতে চান (পরবর্তী পর্বে), তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। প্রথম পর্বে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। নির্দেশনা দেয়া হলেও অনেকে এখনো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রত্যাহারের তারিখ শেষ হোক, তার আগে এ বিষয়ে কীভাবে বলা যাবে। সংসদ সদস্য পরিবারের সদস্য হলেই উপজেলা নির্বাচন করা যাবে না, বিষয়টি কতটুকু যুক্তিযুক্ত এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা ঠিক নয়। আপনি সব যুক্তি উত্থাপন করতে পারেন, কিন্তু আপনার যুক্তি জনগণ কী চোখে দেখছে? দেশের ভোটাররা কী চোখে দেখছে? আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তে তৃণমূল পর্যন্ত মানুষ কিন্তু খুশি হয়েছে। দলের তৃণমূলের কর্মীরা তাদের মত-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তার কারণ হচ্ছে, একটা দলে আমি এমপি, আমি মন্ত্রী, আবার আমার ভাই, ছেলে এরাও পদ নিয়ে যাবে সব, তাহলে তৃণমূলের কর্মীরা কী করবেন? তাদের পদে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই? সে সুযোগ করে দেয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status