বাংলারজমিন
স্বাক্ষর জালিয়াতি
কারাগারে পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেনু
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবারউত্তরা ব্যাংকের দুই কোটি ৫ লাখ টাকার ঋণ মওকুফের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের স্বাক্ষর জাল করার অপরাধে আদালত থেকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনুকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সাজা পরোয়ানা নিয়ে বুধবার দুপুরে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-৮ এ তিনি আত্মসমর্পণ করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-৮ এর বিচারক আরফাতুল রাকিব কাস্টডি ওয়ারেন্ট (কারা পরোয়ানা) মূলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর তাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। একই আদালত থেকে গত ৪ঠা জানুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে মো. রফিকুল ইসলাম রেনু’র বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মো. রফিকুল ইসলাম রেনুর আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন কোয়েল বলেন, আমরা উনার জামিনের জন্য দুয়েক দিনের মধ্যে আবেদন করবো। আশা করছি খুব দ্রুতই উনার জামিন পাওয়া যাবে। কেননা, মিথ্যা একটি মামলায় উনাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাজার বিরুদ্ধে আমরা আপিল করবো। এটি কয়েকদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড মেসার্স এলিট আয়রন অ্যান্ড স্টিল জিপি শিট লিমিটেডের কাছে ঋণের ২ কোটি ৫ লাখ টাকা পায়। পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেনু এই ঋণ মওকুফ করে দেওয়ার কথা বলে কোম্পানিটির কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা নেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের বরাতে তার জাল স্বাক্ষরে ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা নিতে উত্তরা ব্যাংকের এমডি বরাবর একটি চিঠি ইস্যু করেন। চিঠিতে ড. মশিউর রহমানের স্থলে ডা. মশিউর রহমান লিখায় উত্তরা ব্যাংকের এমডির সন্দেহ হয়। তাই চিঠিটি যাচাইয়ের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়। সেখানে প্রমাণিত হয় ওই চিঠি ড. মশিউর রহমান ইস্যু করেননি। এ ঘটনায় সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল করিম ২০১২ সালের ২৬শে এপ্রিল রাজধানীর বংশাল থানায় একটি মামলা করেন। ২০১৩ সালের ৬ই অক্টোবর মো. রফিকুল ইসলাম রেনুসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা হলেন, মেসার্স এলিট আয়রন অ্যান্ড স্টিল জিপি শিট লিমিডেট পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন, চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন, পরিচালক আমজাদ হোসেন ও মনোয়ার হোসেন। ২০১৫ সালের ১১ই জুন মামলাটিতে অপর আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে কেবল মো. রফিকুল ইসলাম রেনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছরেরও বেশি সময় পর এ মামলায় দণ্ডবিধির ৪৬৮ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত রফিকুল ইসলাম রেনুকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
এদিকে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় মো. রফিকুল ইসলাম রেনুর বিরুদ্ধে আদালত থেকে গত জানুয়ারি মাসে পরোয়ানা ইস্যু করা হলেও অদৃশ্য কারণে এতদিন ওয়ারেন্ট তামিল করা হয়নি। এরই মধ্যে গত ২১শে মার্চ পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ই এপ্রিল নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এ রকম পরিস্থিতিতে গত সোমবার পরোয়ানা জারির বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দলের সমর্থন ও টিকিটে গত দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে টানা দুইবার মো. রফিকুল ইসলাম রেনু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে ২০২০ সালের ৫ই জুলাই ১৯৯৯ সালে সংঘটিত উপজেলার ষাইটকাহন গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় মো. রফিকুল ইসলাম রেনু উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। এছাড়া সকল ইউপি চেয়ারম্যানের অনাস্থা প্রস্তাবের আলোকে ২০২০ সালেরই ৬ই আগস্ট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে মো. রফিকুল ইসলাম রেনুকে অপসারণ করে পদটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে ওই বছরেরই ১৫ই ডিসেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যান পদ ফিরে পান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু। এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি একজন শক্তিশালী প্রার্থী। কিন্তু ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই তার বিরুদ্ধে সাজা ও পরোয়ানার বিষয়টি জানাজানি হয়। ফলে বিষয়টি কেবল পাকুন্দিয়া উপজেলাতেই নয় জেলাজুড়েই ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।