ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

বিবিএস জরিপ

ধর্মীয় শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে

মো. আল-আমিন
২৭ মার্চ ২০২৪, বুধবার

দেশে ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়লেও সাধারণ শিক্ষায় কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, তিন বছরের ব্যবধানে ধর্মীয় শিক্ষায় অংশগ্রহণ ২ দশমিক ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে সাধারণ শিক্ষায় অংশগ্রহণ কমেছে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। শিক্ষাবিদদের মতে, অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যেই সাধারণ শিক্ষায় খরচ বৃদ্ধি ও নানা সময়ে শিক্ষাক্রমে সংস্কারের ফলে বিভ্রান্তির কারণে অভিভাবকদের মধ্যে সাধারণ শিক্ষার প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষায় খরচ কম হওয়ায় অনেকে এই শিক্ষা বেছে নিচ্ছে। 

বিবিএস’র সর্বশেষ প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে সাধারণ শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ছিল ৯৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৯১ দশমিক ০২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ২০২১ সালে ধর্মীয় শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ছিল ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়েছে। এ ছাড়া তিন বছরের ব্যবধানে কারিগরি শিক্ষায়ও অংশগ্রহণ কিছুটা বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন
বিবিএস’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ছিল ১ দশমিক ২২ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালে এই বিভাগে অংশগ্রহণের হার ছিল ১ দশমিক ০৬ শতাংশ। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, দেশে যখন অর্থনৈতিক দুরবস্থা আসে তখন সাধারণ শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। করোনার পর থেকে দেশে অর্থনৈতিক ক্রাইসিস দেখা যাচ্ছে। মানুষের আয়ের তুলনায় জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য মানুষ ব্যয় কমাতে চেয়েছে। সাধারণত কওমি মাদ্রাসাগুলোতে সন্তানকে শিক্ষা দিতে অভিভাবকদের ব্যয় করতে হয় না। এসব প্রতিষ্ঠান দান ও অনুদানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সুতরাং-কওমি মাদ্রাসায় সন্তানদের পড়াতে দিলে অভিভাবকরা মনে করেন-ধর্মীয় ইনভেস্টমেন্ট ও ভালো কাজ হলো, সেই সঙ্গে টাকাও খরচ হলো না। সেজন্য ধর্মীয় শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়ছে। তিনি বলেন, শিক্ষাক্রম পরিবর্তন বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় শিক্ষার্থীদেরকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মধ্যে এই শিক্ষাক্রম নিয়ে খুব বেশি উদ্বেগ নেই। সন্তানদেরকে কম পয়সায় পড়াতে পারাটায় তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, মানুষ যখন কঠিন পরিস্থিতিতে থাকে, একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে যখন অসহায়ত্বের দিকে যায়, তখন ধর্মীয় শিক্ষায় মানুষের আগ্রহ বাড়ে। ধর্মীয় শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়ার এটিও একটি কারণ। তিনি আরও বলেন, গ্রামের মানুষ ধর্মকে ইনভেস্টমেন্ট মনে করেন। এই শিক্ষা গ্রহণ করে চাকরি না পাওয়া গেলেও ওয়াজ মাহফিল এবং ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা যায়। ক্যারিয়ার নিয়ে খুব একটা ভাবতে হয় না। ধর্মীয় শিক্ষায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধির এটাও একটা কারণ বলে জানান তিনি।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম বলেন, দেশের নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে। তারা শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের জন্য অনেক আন্দোলন ও প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু তাদের চাহিদা অনুযায়ী হয়তো পরিবর্তন করা হয়নি। এজন্য তারা মাদ্রাসা শিক্ষার দিকে ঝুঁকে যেতে পারে। নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে উচ্চবিত্তরা ইংলিশ মিডিয়ামের দিকে ঝুঁকছে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার যে প্রপাগাণ্ডা আছে, এটাও সাধারণ শিক্ষায় অংশগ্রহণ কমার কারণ হতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক মো. আব্দুস সালাম। 
 

পাঠকের মতামত

মানুষ শুধু শিক্ষা চায় না। চায় শিক্ষা এবং আদর্শ। এক কথায় বলতে গেলে আদর্শগত শিক্ষা। আর সেই আদর্শ শিক্ষা মাদ্রাসা তথা ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যেই আছে। বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার মান তলানিতে। সেখানে কোন আদর্শ, নীতি, নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া হয় না। বরং ধর্ম বিরোধী শিক্ষা দেওয়া হয়। ধর্ম-বিদ্ধেষী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের জনগণের সম্পদ দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে, চুরি করে, ডাকাতি করে বিদেশে পাচার করা হয়। যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জনগনে টাকা চুরি করা শেখায়, সুদ, ঘুষ খাওয়া শেখায়, জনগণের সেবার বদলে জনগণের সম্পদ লুন্ঠন করা শেখায় সেটা কোন শিক্ষা হতে পারে না। সেজন্যই মানুষ ধর্মীয় শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। এটাই হচ্ছে মূল কথা।

Rafiqul Islam
২৭ মার্চ ২০২৪, বুধবার, ৪:২৭ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের সব শিক্ষা (নিম্ন থেকে মাধ্যমিক) কারিকুলামই ধর্মীয় ও স্বাধারন শিক্ষার সমন্বয়ে করা উচিত, যাতে করে মানবিক মুল্যবোধগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে উঠতে পারে।

Md Polash
২৭ মার্চ ২০২৪, বুধবার, ৩:৫২ অপরাহ্ন

প্রতিকূল পরিবেশে ধর্মের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ে, এটাই ধর্মের সৌন্দর্য।

ফাইজুল্লাহ ফয়সাল
২৭ মার্চ ২০২৪, বুধবার, ৩:২৯ অপরাহ্ন

যতদিন বাম এবং রাম বাবুরা ইসলামের বিরোধিতা করবে,ততই ইসলাম শিক্ষার প্রসার বাড়তে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

Shamsul Alam
২৭ মার্চ ২০২৪, বুধবার, ৯:০৩ পূর্বাহ্ন

বর্তমান সময়ে ধর্মীয়ভাবে শিক্ষা নেওয়া সকল মুসলমান এর দরকার। কারণ সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে ভাবে মেধা ধংস করার চিন্তা আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের তার থেকে বিরত থাকতে হলে এবং শরীফ থেকে শরীফা মত অধ্যায় থেকে বিরত থাকতে হলে যতাযত ধর্ম নিয়ে শিক্ষা গ্রহন করা দরকার

আরিফুর রহমান
২৭ মার্চ ২০২৪, বুধবার, ৫:০৪ পূর্বাহ্ন

আলোচ্য বিষয়ে বিশিষ্টজনের মতামতে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে ! আমরা একেবারে স্বচ্ছ ও সঠিক বিষয় জানতে চাই। তাই সম্পুর্ণ নিরপেক্ষভাবে সরকারি উদ্যোগ দরকার। কোন ধরনের ইসলাম বিদ্বেষ যেন না থাকে কোথাও।

মোঃ মাহফুজুর রহমান
২৭ মার্চ ২০২৪, বুধবার, ৪:৩৯ পূর্বাহ্ন

"এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার যে প্রপাগাণ্ডা আছে, এটাও সাধারণ শিক্ষায় অংশগ্রহণ কমার কারণ হতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক মো. আব্দুস সালাম। " - প্রপাগান্ডা !

N Islam
২৭ মার্চ ২০২৪, বুধবার, ৪:২১ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status