বাংলারজমিন

কিশোরগঞ্জের বিলুপ্ত সংসদীয় আসনটি পুনরুদ্ধারের দাবি

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

৬ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

দেশের অন্যতম বৃহত্তম জেলা কিশোরগঞ্জ। ১৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই জেলা। সংসদীয় আসন ছিল ৭টি। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই জেলার সাতটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে কিশোরগঞ্জ জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন। হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল কিশোরগঞ্জ-১ আসন, কটিয়াদী উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল কিশোরগঞ্জ-২ আসন, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৩ আসন, করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৪ আসন, ইটনা, অষ্টগ্রাম ও মিঠাইন উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৫ আসন, নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৬ আসন এবং ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৭ আসন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জেলার ঐতিহ্যবাহী কিশোরগঞ্জ-১ আসনটি বিলুপ্ত করে দিয়ে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার জেলার নির্বাচনী এলাকাকে পুনর্বিন্যাস করার নামে ৭টির পরিবর্তে ৬টি সংসদীয় আসনে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়। আসন কমাতে গিয়ে পূর্ববর্তী কিশোরগঞ্জ-১ আসনের দুইটি উপজেলার মধ্যে হোসেনপুরকে কিশোরগঞ্জ সদরের সাথে যুক্ত করে পুনর্বিন্যস্ত কিশোরগঞ্জ-১ আসন এবং পাকুন্দিয়া উপজেলাকে কটিয়াদী উপজেলার সাথে যুক্ত করে কিশোরগঞ্জ-২ আসন করা হয়। স্বাধীনতার পর ’৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিলুপ্ত কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সাবেক পাটমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খান, ’৭৯ সালের ৮ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এডভোকেট আসাদুজ্জামান খান, ’৮৬ সালের ৭ই মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এ কে এম শামসুল হক গোলাপ মিয়া, ’৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির বজলুর রহমান, ’৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হন বিএনপির সাাবেক উপমন্ত্রী এ বি এম জাহিদুল হক, ৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হন এ বি এম জাহিদুল হক, একই বছরের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এ কে এম শামসুল হক গোলাপ মিয়া ও ২০০১ সালের ১লা অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীরগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আওয়ামী লীগের ড. আলাউদ্দিন আহমদ। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই আসনটিকে বিলুপ্ত করে দিয়ে নির্বাচন কমিশনারের এই আসন পুনর্বিন্যাসকে স্বাভাবিকভাকে গ্রহণ করতে পারেননি এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও জনগণ। পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর উপজেলাকে নিয়ে গঠিত এই আসনটিকে একেবারে বিলুপ্ত করে দুটি উপজেলাকে দুটি আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়ায় বরং বিক্ষুব্ধই হয়েছিলেন উভয় উপজেলাবাসী। তখনই এর প্রতিবাদে  সমাবেশ হয়েছে, মিছিল হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ফের আসনটি পুনর্বহালের দাবি ওঠেছে। গত ৩রা জুলাই এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর এই দুই উপজেলার জনসাধারণের পক্ষে সাত ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে আবেদন করে আসন পুনর্বিন্যাসের দাবি জানিয়েছেন। আবেদনকারীরা হলেন, পাকুন্দিয়া পৌরসভার সাবেক দুই কাউন্সিলর মো. মস্তুফা কামাল ও মো. স্বপন মিয়া, পাকুন্দিয়া বাজারের দুই ব্যবসায়ী মো. নাজমুল হক ও মো. হুমায়ুন কবীর শাহীন, হোসেনপুর উপজেলার দুই ব্যবসায়ী মো. আবু রায়হান ও মো. মোজাম্মেল হক তারা এবং হোসেনপুরের ভেন্ডার মো. আমিনুল হক ভূঞা। আবেদনে তারা পাকুন্দিয়া-হোসেনপুরকে আসন পুনর্বিন্যাস করে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে রূপান্তর করার দাবি জানিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেয়া আবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রায় অর্ধশত বছর ধরে পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর উপজেলার অধিবাসীগণ কিশোরগঞ্জ-১ আসন হিসাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দমতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন। দীর্ঘদিন যাবত এই দু’টি উপজেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। অর্ধশত বছরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক, ব্যবসায়িক, পারস্পরিক আত্মীয়তার, ভ্রাতৃত্ববোধ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ইতিহাস-ঐতিহ্য দুইটি উপজেলাকে নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। দুইটি উপজেলাই পুরাতন ব্রপুত্র নদের অববাহিকতায় অবস্থানের ফলে এই বন্ধনকে আরো দৃঢ় করেছে। আবেদনে বলা হয়, বর্তমানে পাকুন্দিয়া-হোসেনপুরের ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে পাকুন্দিয়া-হোসেনপুরের অধিবাসীগণ তাদের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ, যোগাযোগ, কৃষ্টি কালচারসহ সব দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই দুইটি উপজেলার অধিবাসীগণ তাদের পূর্বের নির্বাচনী আসন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা দু’টি উপজেলার সাথে অযৌক্তিকভাবে সংযোজনের পর থেকেই তারা এই অবাস্তব ও অযৌক্তিক পুনর্বিন্যাসকে মানসিকভাবে মেনে নিতে পারেনি।
ফলে এই দুই উপজেলার অধিবাসীগণ পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর নির্বাচনী এলাকায় পুনর্বিন্যাসের লক্ষে দীর্ঘদিন যাবত মানসিকভাবে ইচ্ছা পোষণ করে আসছে।
তাদের দাবি, জনসংখ্যা এবং ভৌগোলিক অবকাঠামোর কথা চিন্তা করে কিশোরগঞ্জের আগের ৭টি আসনকে ভেঙ্গে ৯টি করা হলে জেলার উন্নয়নের গতিধারা আরো বৃদ্ধি পাবে।

 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status