প্রথম পাতা

পরিস্থিতি সামলাতে নানা চেষ্টা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন

ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার পর দেশের বাজারে একদিনেই পিয়াজের দাম এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, ভারী বর্ষণে পিয়াজের চাষাবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য বৃদ্ধি আর রাজনৈতিক বিবেচনায় ভারত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে সরকারিভাবে কম দামে খোলা বাজারে পিয়াজ বিক্রি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। পাশাপাশি ভারত ছাড়াও বিকল্প বাজারের খোঁজ নিতে শুরু করেছে।
গত বছর ২৯শে সেপ্টেম্বর ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার পর বেসরকারি আমদানিকারকদের পাশাপাশি নিজেরাও পিয়াজ আমদানি করে সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছিল সরকার। কিন্তু তারপরও ৩০ টাকা থেকে পিয়াজের দাম ৩০০ টাকায় উঠে যাওয়া বন্ধ করা যায়নি।
ভারত কবে তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে তার কোনো সময়সীমা জানা যায়নি। তবে বিবিসির এক খবরে জানানো হয়, ভারতের বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই পিয়াজের দামে যে অস্থিরতা চলছিল, তারই জের ধরে এই নিষেধাজ্ঞা। ভারতের রাজনীতিতে পিয়াজের দাম বড় একটি ইস্যু। এর জের ধরে অতীতে সরকার পতনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ভারতের সরকার কোনোভাবেই চায় না যে, পিয়াজের দাম অনেক বেড়ে যাক। এ কারণেই গত বছর পিয়াজের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, এই বছরেও তাই।
সরকারি উদ্যোগ: বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, আমরা বিকল্প বাজার থেকে পিয়াজ আমদানি করার চেষ্টা করবো। তবে গত বছরের মতো পরিস্থিতি এবার হবে না। কারণ দেশে তো পর্যাপ্ত পিয়াজ রয়েছে। হয়তো ৩০/৪০ টাকা হবে না, কিন্তু গত বছরের মতো অতো দামেও বিক্রি হবে না। আমরা বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিচ্ছি। আশা করছি, অন্যান্য জায়গা থেকে পিয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবো। এ ছাড়া গত বছর থেকে আমাদের তো কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। মিয়ানমার, তুরস্ক, মিশর, চীন থেকে আমদানি করা সম্ভব হলে পরিস্থিতি ভালো হতো।
বুধবার এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর দু’টি কারণে দেশে পিয়াজের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ভারত রপ্তানি বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছে এবং ভোক্তাদের অতিরিক্ত পিয়াজ কেনা, যে দুই কেজি কিনতো সে ১০ কেজি কিনছে, তাই হঠাৎ করে বাজারে চাপ পড়েছে।
এ মুহূর্তে দেশে সাড়ে ৫ লাখ টন মজুত রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী জানুয়ারি নাগাদ ১০ লাখ টন লাগবে, ঘাটতি আছে ৪ লাখ টন। গত কয়েকদিন ধরে অন্যান্য দেশ থেকে পিয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এক মাস সময় পেলে তুরস্ক, মিয়ানমার, চায়না থেকে পিয়াজ আমদানি করা যাবে। এ সময়টা যদি সহ্য করি, দেশের পিয়াজ দিয়ে চালাই, তাহলে সমস্যা হবে না।
সরকারি বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবির) মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই ২৮৫টি পয়েন্টে ৩০ টাকা দরে পিয়াজ বিক্রি করছি। সেই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশ থেকেও পিয়াজ আমদানির যে নিয়মিত প্রক্রিয়া, সেটাও অব্যাহত রয়েছে। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি কিনতে পারবেন।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের প্রধান পিয়াজ উৎপাদনকারী জেলা পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও মানিকগঞ্জে বর্তমানে পিয়াজের মজুতের পরিমাণ ৫ লাখ ২৫ হাজার টন। তবে বাংলাদেশে পিয়াজের মৌসুম আসতে এখনো ৬ মাস বাকি। এই সময়ে পিয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১১ লাখ টন।
কমিশনের এ হিসেবে দেখা যায়, আগামী প্রায় তিন মাসের পিয়াজ মজুত আছে। বাকি তিন মাসের পিয়াজ আমদানি করেই মেটাতে হবে। অর্থাৎ মার্চের আগ পর্যন্ত আরো প্রায় ৬ লাখ টন পিয়াজ আমদানির দরকার পড়বে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে পিয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে ভারতের বিকল্প হিসেবে ৮টি দেশের বাজারের সন্ধান করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে- মিয়ানমার, আফগানিস্তান, মিশর, তুরস্ক, চীন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডস।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে পিয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে পিয়াজ উৎপাদন হয় ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। এর মধ্যে ২২-২৫ শতাংশ সংগ্রহকালীন এবং সংরক্ষণকালীন ক্ষতি বাদ দিলে স্থানীয় উৎপাদিত পিয়াজ থেকে বাজারে মোট সরবরাহ করা হয় ১৯ লাখ ১৭ হাজার টন। অথচ চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টন পিয়াজের। বাকি ১১ লাখ টন পিয়াজ আমদানি করা হয়, যার বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশে পিয়াজ আমদানি করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার টন। যা ২০১৯ সালে ছিল ৬ লাখ ৭৪ হাজার টন এবং ২০১৮ সালে ৬ লাখ ৯৬ হাজার টন। অর্থাৎ, ২০১৯ ও ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৮ শতাংশ পিয়াজ কম আমদানি হয়েছে। আমদানি কম হওয়ায় চলতি বছর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পিয়াজের ব্যবহার বেশি হয়েছে।
বাংলাদেশের পিয়াজ আমদানিকারক এবং পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে দেশি-বিদেশি যে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তা আগের স্বল্প মূল্যে কেনা পিয়াজ। কিন্তু ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজেদের হাতে থাকা পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া না গেলে গত বছরের মতো এবারও পিয়াজের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন ক্রেতারা।
ক্রেতা মানিক বলেন, দু’দিন আগে যে পিয়াজ কিনেছি ৬০ টাকায়, কীভাবে সেটা ১০০ টাকা হয়? ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে বুঝলাম, কিন্তু এই পিয়াজ তো আগেই কেনা। তাহলে এটার দাম বাড়লো কীভাবে? বিক্রেতা খায়রুল দাবি করছেন, পাইকারি বাজার থেকে তাকে চড়া দামে কিনতে হয়েছে। এ কারণে তিনিও বেশি দামে বিক্রি করছেন।
শ্যামবাজারের পবিত্র ভাণ্ডার প্রধান হাজী হাফিজ মিয়া বলেন, ভারত কয়েকদিন আগে বাজারে দাম বাড়িয়েছিল। কিন্তু তারা যে রপ্তানি বন্ধ করে দেবে, এমন কোনো আভাস পাইনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status