দেশ বিদেশ

পাহাড়ে সবার মুখে ‘বিজু ভালেদি’

পিয়াস সরকার, খাগড়াছড়ি থেকে

১৪ এপ্রিল ২০১৯, রবিবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

‘বিজু ভালেদি’- এই কথাটা ছড়িয়ে পড়েছে সবার মুখে মুখে। অর্থ বিজুর শুভেচ্ছা। বিজু উৎসবে মেতেছে পুরো পাহাড়ি এলাকা। বিজু বা বৈসাবি উৎসব। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব এটি। পুরোনো বছরের জরাকে কাটিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর দিন। আজ পহেলা বৈশাখ। সারা দেশ উৎসবে মাতোয়ারা। তবে পাহাড়ি এলাকায় এই উৎসবটি দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তারা এই উৎসবটি পালন করে তিনদিন ব্যাপি। পাহাড়িদের বাড়িতে বাড়িতে উৎসবের আমেজ। পাহাড়ি খাবারের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রতিটি রান্নাঘর। রান্না হচ্ছে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। রান্না হচ্ছে বাঁশের কুঁড়ি দিয়ে বিভিন্ন পদের খাবার। যেমন মুরগী, মাছ, সবজি। এছাড়াও তাদের বাড়িতে দেখা মেলে ৩ ধরনের কাকড়ার তরকারি। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রান্না করা হয় ঐতিহ্যবাহী পাচন। এটি মূলত বিভিন্ন সবজি দিয়ে তৈরি একটি খাবার। তাদের বিশ্বাস এই সবজি রোগ মুক্তির মহৌষধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ডোনা চাকমা বলেন, এই দিন আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রিত থাকেন পাহাড়ি ও বাঙালি সকলেই। এই আতিথেয়তায় আছে অন্য রকমের ভালোলাগা। চৈত্রের শেষ দিনকে মূলত পাহাড়িরা বলেন মূল বিজু। আনন্দ মাতোয়ারা হবার দিনটিতে তরুণীদের শরীরে স্থান করে নেয় ঐতিহ্যবাহী পোশাক থামি। আর তরুণরা পরেন বিশেষ ধরনের ফতুয়া। রঙিন পোশাকে রাঙা পুরো পাহাড়ি জনপদ। বৃহস্পতিবার ভোরে পুজার থালায় ফুল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তরুণীরা। উদ্দেশ্য খাগড়াছড়ি শহরের কোল ঘেষা চেঙ্গি নদী। এটিকে বলা হয় ফুল বিজু। সেখানে নদীকে প্রণাম শেষে কলা পাতায় ভাসিয়ে দেয় সেই ফুল। নদীর স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সকল দুঃখ। এই দিনে তরুণীরা পানিতে ফুল ভাসিয়ে সেরে নেন গোসল। গোসলের পরে পরিবারের প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রণাম করেন। প্রণামের সময় তারা দেন আশীর্বাদ। এতে তৈরি হয় এক নয়নাভিরাম দৃশ্য ও আন্তরিক পরিবেশ। পাহাড়বেষ্টিত নদী পাড় রূপ নেয় এক মিলনমেলায়। এই উৎসব দেখতে ভীড় করেন স্থানীয় বাঙালীসহ সারাদেশ থেকে আগত পর্যটকরা। এই বৈসাবী উৎসব দেখতে খাগড়াছড়ি এখন কানায় কানায় পূর্ণ। হোটেল থেকে শুরু করে রেস্তোরা সবখানেই পর্যটকদের ভীড়। আর নানান রঙে সাজিয়ে তোলা হয়েছে শহর। চলছে বৈসাবী মেলা। তিনদিন ব্যাপী এই উৎসবের দ্বিতীয়দিনকে তারা বলেন
গোজ্জে পোজ্জে। দ্বিতীয়দিন তারা প্রকৃতির ছোঁয়া নিতে ঘুরতে বের হন। বের হন আতিথিয়েতায়। নিয়ে যান ফল, মিষ্টি।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর এটিই বৃহত্তম অনুষ্ঠান। এতে মুখর পুরো পার্বত্য জনগোষ্ঠী। চাকমা সমপ্রদায় এই উৎসবকে বিজু বললেও ত্রিপুরারা হাঁড়িবসু আর মারমা সমপ্রদায় বলে সূচিকাজ। সুবিকা মার্মা সদ্য বিবাহিতা। তার স্বামী নিকল মার্মাকে নিয়ে এই প্রথম বাবার বাড়ি এসেছেন। মেয়ের জামাইয়ের আগমণে ও সেই সঙ্গে উৎসবের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে বাঁশ নৃত্যের। তাদের বাড়িতে যেতেই দেখা মেলে নিকল মার্মাকে উঠানে বসিয়ে আর্শীবাদ করছেন মেয়ের মা ও বাবা। হাতে তুলে দেন লুঙ্গি ও ফতুয়া। নতুন পোশাক পরে তাকে ঘিরে শুরু হয় নৃত্য। আর ছিটানো হয় পানি। যে পানিতে মিশানো থাকে নানা সুগন্ধি। প্রায় ৩০ মিনিট তাদের নিজস্ব ভাষার গানের পর আসেন ভান্তে। তিনি আর্শীবাদ করেন। এই আয়োজন জুড়ে অংশ নেয়া সকলকে করানো হয় মিষ্টি মুখ। এরপর ছেলে কোলে করে নিয়ে যান মেয়েকে। আজ পহেলা বৈশাখ জল খেলায় মেতে ওঠার দিন। যেটা পরিচিত জলখেলি নামে। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর দিন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status