নির্বাচিত কলাম
হালফিল বৃত্তান্ত
বাংলাদেশে চীনের ‘সোনালি স্বপ্নময় বসন্তের কণ্ঠস্বর’ ও ‘ভারত ফ্যাক্টর’
ড. মাহফুজ পারভেজ
২৪ জানুয়ারি ২০২৪, বুধবারবাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শক্তিশালী থেকে অধিকতর শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের পর এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় অনুষ্ঠিত ১৯তম ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে শনিবার (২০শে জানুয়ারি) দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠক শেষে এক্স বার্তায় দিল্লির মন্ত্রী লিখেন, ‘বাংলাদেশে আমার নতুন কাউন্টারপার্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে কাম্পালায় আজ দেখা হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। নতুন দায়িত্বে আসায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি ও সার্বিক সাফল্য কামনা করেছি। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক শক্তিশালী থেকে অধিকতর শক্তিশালী হচ্ছে। শিগগিরই তাকে নয়াদিল্লিতে অভ্যর্থনা জানানোর অপেক্ষায় রয়েছি আমি।’
বাইরে শীতের প্রকোপ, ভেতরে উষ্ণতা। ১৯শে জানুয়ারি সন্ধ্যা। নান্দনিক নাচের ছন্দে, গানের সুরে, যন্ত্র সংগীতের লহরিতে মুখরিত পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউর ‘মেজবান হল’। ‘ভয়েসেস অব স্প্রিং অ্যান্ড গোল্ডেন ড্রিমস’ বা ‘সোনালি স্বপ্নময় বসন্তের কণ্ঠস্বর’ শিরোনামের জমকালো অনুষ্ঠানের আবহে বন্দরনগরী হয়ে উঠেছিল এক টুকরো চীন।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ইউনান প্রাদেশিক কমিটির প্রচার বিভাগের ভাইস মিনিস্টার পেং বিন ও বাংলাদেশের চীন দূতাবাসের সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক কাউন্সেলর লিউইন ইয়ুই ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
চীনে বসন্ত উৎসব শুধুই শীতের অবসানে প্রকৃতির সজীব হয়ে ওঠা নয়, বসন্ত ঋতুর মাধ্যমে দেশটির বর্ষপঞ্জির সূচনা হয়। ২০২৪ সাল হলো ‘উড ড্রাগন’ বছর। চীনা সংস্কৃতিতে, ড্রাগন একটি শুভ এবং অসাধারণ প্রাণী হিসাবে উল্লেখযোগ্য স্থান ধারণ করে, যা প্রতিভা এবং শ্রেষ্ঠত্বে অতুলনীয়। এটি শক্তি, আভিজাত্য, সম্মান, ভাগ্য এবং সাফল্যের প্রতীক। ফলস্বরূপ, ২০২৪ সাল সুযোগ, পরিবর্তন এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসার পূর্বাভাসে ভরা, এমনটি উল্লেখ করে উদ্যোক্তার দুই দেশের বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক, অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার কথা জানালেন।
ঐতিহাসিক বিবেচনায়, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রতিকূলতা থেকে স্থায়ী কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিকে নাটকীয় রূপান্তর করেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর চীন জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রবেশের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছিল। যদিও পরে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ চীনকে পরীক্ষিত বন্ধু এবং বিশ্বস্ত মিত্র মনে করে। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ে দুই দেশ একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাত্র কয়েক মাস পর নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান চীন সফর করেন, এটি ছিল কোনো বাংলাদেশি রাষ্ট্র প্রধানের প্রথম চীন সফর।
তারপর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। উভয় দেশের ‘সম্পর্ক নীতি’ ধারাবাহিকতার পথে অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশের সবগুলো সরকার চলমান সম্পর্ককে সমর্থন করেছে এবং নেতারা নিয়মিত চীন সফর করছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুন ২০১৪ সালে চীন সফর করেন।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিভিন্ন দিকের মধ্যে প্রতিরক্ষা, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে সম্পর্কের একটি বড় শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চীনই একমাত্র দেশ যার সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনী ট্যাংক, মিসাইল লঞ্চার, ফাইটার এয়ারক্রাফট এবং বেশকিছু অস্ত্র সিস্টেমসহ চীনা অস্ত্রে সজ্জিত। চীনের কাছ থেকে দুটি মিং ক্লাস সাবমেরিন কিনেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে চীন। চীনা অস্ত্রের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা প্রতিরক্ষা সম্পর্কের প্রধান সমর্থক করে তুলেছে।
এটা লক্ষণীয় যে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চীনা অস্ত্রের সঙ্গে পরিচিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রত্যাবাসিত অফিসারদের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। চীনা অস্ত্রের সঙ্গে এই পরিচিতির কারণে বাংলাদেশ চীন থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করতে পছন্দ করে। স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাবও উপেক্ষা করেনি বাংলাদেশ। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তান থেকে মুক্তিতে বাংলাদেশকে সমর্থন করায় ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রেখেছে।
চীন ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ১০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। যাইহোক, বাণিজ্য ভারসাম্য চীনের পক্ষে রয়েছে। চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে ৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ব্যবধান থাকায় বাংলাদেশ ঘাটতি কমাতে ছাড়ের জন্য চাপ দেয় এবং চীন বাংলাদেশি পণ্যগুলোতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে বাধ্য হয়। তবে চীনের এসব ছাড় সত্ত্বেও ঘাটতির কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন নেই। চীনও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে মূলত উৎপাদন খাতে।
উন্নয়ন সহযোগিতা চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের একটি বড় উন্নয়ন সহযোগী। চীন সেতু, রাস্তা, রেলপথ, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বাংলাদেশে। চীনা উন্নয়ন সহায়তার বেশিরভাগই ক্রেডিট লাইন হিসাবে আসে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সফরের সময় চীন বাংলাদেশকে ২৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যা প্রাথমিকভাবে চব্বিশটি প্রকল্পের জন্য ঋণের লাইন হিসাবে আসে।
এই উন্নয়ন অংশীদারিত্বের উদ্যোগ চীনকে বাংলাদেশে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সাহায্য করেছে। উন্নয়ন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে চীন জনগণের মঙ্গল ও দেশের অগ্রগতি কামনা করে বন্ধু হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়। চীনের এই চিত্রটি বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তার দিকে অবদান রেখেছে। চীন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য বাংলাদেশকে একটি পর্যবেক্ষক হিসাবে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থায় তার প্রবেশকে সমর্থন করতে রাজি করায় এবং ঢাকাকে বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এ যোগ দিতে রাজি করায়।
এসব উদ্যোগের পাশাপাশি, বেইজিং শিক্ষার্থীদের চীনে পড়ার জন্য বৃত্তি প্রদান করছে এবং বাংলাদেশিদের চীনা ভাষা শিখতে উৎসাহিত করছে। চীনা ভাষা শেখার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস-এ একটি চীনা ভাষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও ইউনানের কুনমিং হয়ে বেইজিং এবং ঢাকার মধ্যে ফ্লাইট সংযোগ রয়েছে।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো এই যে, চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে জনসমক্ষে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে। চীন দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশে এমন একটি ধারণা তৈরি করেছে যে তারা রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকছে এবং অ-হস্তক্ষেপ করছে।
বাংলাদেশ দাবি করে যে অর্থনৈতিক বিবেচনা এই সম্পর্কের মূল বিষয়। বাংলাদেশের জন্য চীনা বিনিয়োগ লাভজনক, যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। ২০৪০ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশের। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। আর চীনও ঢাকার উন্নয়ন প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদানে উদারতা দেখিয়েছে।
চীনের মূল আগ্রহ বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যার শক্তিশালী বাজার। বাংলাদেশ হলো চীনের উৎপাদিত শিল্পপণ্যের একটি ভালো আউটসোর্সিং গন্তব্য। সস্তা শ্রম বাংলাদেশ অফার করে। আবার, বাংলাদেশের বন্দরগুলো চীনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেরণা। কারণ এটি তার শক্তি সরবরাহের জন্য মালাক্কা প্রণালীর উপর নির্ভরতা কমাতে একটি লাভজনক বিকল্প পথ সরবরাহ করে। চীনের ইউনান প্রদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে এর বন্দরগুলো সহজেই জ্বালানি সংস্থান সরবরাহ করতে পারে।
তা সত্ত্বেও চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ভারত একটি ফ্যাক্টর। বাংলাদেশের একটি বৃহৎ অংশ ভারতকে ভারসাম্যহীন করার জন্য চীনের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ককে সমর্থন করে। চীনের জন্যেও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। চীনের পণ্য ভারতীয় বাজারে প্রবেশের সেতু হিসেবে কাজ করতে পারে বাংলাদেশ। আবার, বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানও চীনের জন্য প্রেরণাদায়ক কারণ।
ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে চীন ও ভারতের মধ্যে তাদের বিরোধপূর্ণ সীমান্তে বড় ধরনের শত্রুতা সৃষ্টি হলে ভারতকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখার জন্য চীন বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে কাজে লাগাতে পারে। যদিও বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা এই ধরনের অনুমানকে দূরূহ বলে মনে করেছেন। বরং বাংলাদেশ ভারত ও চীন, উভয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চীনের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়।
যদিও চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক সাধারণত উষ্ণ, তথাপি বাংলাদেশ সব বিষয়ে চীনের মতের অধীন নাও হতে পারে। ২০১৪ সালে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চীনের শর্তে বাংলাদেশ রাজি না হওয়ার উদাহরণ বিশ্লেষকরা এক্ষেত্রে উল্লেখ করে থাকেন। তাদের মতে, বাংলাদেশকে ভারত এবং চীনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার সমস্যা সম্পর্কে খুবই সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশ এই উভয় উদ্বেগের ভারসাম্য বজায় রাখার সূক্ষ্ম লাইনে চড়ার চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের প্রভাব ক্রমবর্ধমান হওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশ চীনের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হওয়ার জন্য সবচেয়ে কম সংবেদনশীল ভারতীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে রয়েছে। বলা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করার এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করার জন্য ভারতের জন্য একটি জেগে ওঠার আহ্বান। চীন-বাংলাদেশের কৌশলগত সংযোগ পর্যালোচনায় এমনই মনে করা হয়েছে ২০২১ সালের ১১ই মে প্রকাশিত ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন-এর রিপোর্টে।
ভারতীয় গবেষক হর্ষ ভি পান্ত মনে করেন, একদিক থেকে এটা বিস্ময়কর হওয়া উচিত নয় যে, চীন তার চারপাশে নিজেকে জাহির করছে। ছোট-বড় জাতি তার চাপে পড়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় তার ভাষায় ‘এই আঞ্চলিক আগ্রাসন’ পুরোদমে চলছে, কারণ বেইজিং নিজেকে ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অবস্থান করতে চায়।
পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, চীনের সঙ্গে সুসম্পর্কের পটভূমিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শক্তিশালী থেকে অধিকতর শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের পর এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় অনুষ্ঠিত ১৯তম ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে শনিবার (২০শে জানুয়ারি) দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠক শেষে এক্স বার্তায় দিল্লির মন্ত্রী লিখেন, ‘বাংলাদেশে আমার নতুন কাউন্টারপার্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে কাম্পালায় আজ দেখা হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। নতুন দায়িত্বে আসায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি ও সার্বিক সাফল্য কামনা করেছি। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক শক্তিশালী থেকে অধিকতর শক্তিশালী হচ্ছে। শিগগিরই তাকে নয়াদিল্লিতে অভ্যর্থনা জানানোর অপেক্ষায় রয়েছি আমি।’ উল্লেখ্য, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে আগামী ৭ই ফেব্রুয়ারি ভারত সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই হতে যাচ্ছে বিদেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
লেখক: প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
চীন নিজের দেশের স্বার্থ দেখে । আবেগে আপ্লুত হয়ে কোন সম্পর্ক করে ।