ঢাকা, ২১ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

ডলার নিয়ে খোলাবাজারে লুকোচুরি

মুনির হোসেন
১০ মে ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

রাজধানীর দিলকুশা এলাকায় অবস্থিত একটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানে গতকাল দুপুরে ক্রেতা হিসেবে ডলার কিনতে গেলে বিক্রয়কর্মীরা জানান, ডলার নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির বাইরে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তির মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই ডলার পাওয়ার প্রস্তাব মেলে। সোহেল নামে ওই ব্যক্তি বলেন, ভেতরে নাই বললেও আমি ম্যানেজ করে দিতে পারবো। প্রতি ডলার এক দাম ১২৪ টাকা। যত লাগবে তত দেয়া যাবে। এ চিত্র কেবল ওই মানি এক্সচেঞ্জের নয়। মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল, গুলশানসহ রাজধানীর অধিকাংশ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানই ডলার নিয়ে এ রকম লুকোচুরি খেলছে।

ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নের পরদিনই ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৫ টাকা পর্যন্ত প্রতি ডলার বিক্রি করছেন তারা। অন্যদিকে কেউ বিক্রি করতে গেলে দাম কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। দিলকুশার স্ট্যান্ডার্ড মানি এক্সচেঞ্জে ডলার বিক্রি করতে গেলে এক ব্যক্তিকে ডলার প্রতি ১২০ টাকা অফার করা হয়।

বিজ্ঞাপন
ব্যাবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ ডলারের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যারা খুচরা ডলার বিক্রি করতো তারা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। আবার বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে বলে বিক্রিও বেশি দামে করতে হচ্ছে। বরং ওই হারে ডলার বিক্রি হচ্ছে না। ডলারের বাজারে অস্থিরতার কথা স্বীকার করেছে মানি এক্সচঞ্জে এসোসয়িশেন অব বাংলাদশ। সংগঠনটির সভাপতি এমএস জামান বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে পেনিক সৃষ্টি করছে। তারা বিভ্রান্তির মাধ্যমে বাজারে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। ডলার প্রতি ১২৬ টাকা পর্যন্ত দাম বসাচ্ছে। এরা আমাদের এসোসিয়েশনের কেউ বলে আমি মনে করি না। এসোসিয়েশনের কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। তবে তারই প্রতিষ্ঠান জামান মানি চেঞ্জিং হাউজে ডলার নিয়ে লুকোচুরি করা হয়েছে জানালে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারবো না, হয়তো আমার সহকারী বলেছে। সহকারীর কথাতো আর আমার না। তিনি বলেন, ডলার না থাকলে দেবে কোত্থেকে। কারণ ডলারতো আমরা কিনতে পারছি না। নতুন করে দাম নির্ধারণ করায় বাজারে এর একটা প্রভাব আছে এটা ঠিক। কারণ যারা বিক্রি করার তারা করতে চায় না। 

বাংলাদেশ ব্যাংক একদিনে ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটিয়েছে। ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি অনুসরণের ঘোষণা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। প্রতি ডলারের মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। ব্যাংকগুলো চাইলে এর চেয়ে বেশি বা কম দরে ডলার বেচাকেনা করতে পারবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিশ্রুত ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রাপ্তির শর্ত হিসাবে ডলারের নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ বিনিময় পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ডলারের জন্য ক্রলিং পেগ মিড-রেট (সিপিএমআর) নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। এখন থেকে আন্তঃব্যাংক ও গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেনে তফসিলি ব্যাংকগুলো সিপিএমআরের আশপাশে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে।

আসাদুজ্জামান নামে ডলার কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, যেখানেই যাই প্রথমে বলে ডলার নেই। পরক্ষণে বলে দেয়া যাবে তবে এত টাকায়। তাও দেখি এক এক দোকানে এক এক দর। ১২৪ টাকা করে চেয়েছে ডলার প্রতি। গ্রাহক সেজে ডলারের বাজার যাচাই করতে গেলে ডলারের ভিন্ন ভিন্ন দাম ও সংকট দেখা যায়। ১২২ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি করছেন বলে জানান গ্লোরি মানি এক্সচেঞ্জের বিক্রেতা। তিনি বলেন, বাজারে ডলারের সংকট রয়েছে। এ দামও ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে। বিকালে এ দামে দেয়া যাবে কিনা নিশ্চিত নই। দাম বাড়তেও পারে কমতেও পারে। স্ট্যান্ডার্ড মানি এক্সচেঞ্জ এর বিক্রয়কর্মীরা জানান, তাদের কাছে ডলার নেই। চৌধুরী ট্রেডিং করপোরেশনের আবু মুসা ভূঁইয়া বলেন, আমরা ১২৩ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছি। এটা এখনকার মূল্য বিকালের দিকে দাম বাড়তেও পারে কমতেও পারে। এর থেকে কম দামে কেউ দিতে পারবে না। তিনি বলেন, অথচ বুধবারও ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম বাড়ানোয় এখন ব্যাংকগুলো থেকে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। তাই তাদেরও দাম বাড়াতে হচ্ছে। দোহার মানি এক্সচেঞ্জের বিক্রেতা বলেন, ১২৩ টাকার কমে ডলার দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। প্রয়োজনে বাজার যাচাইয়ের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। বাজারে সর্বনিম্ন ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি করছে ভাই ভাই মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মির্জা ফয়েজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের মূল্য বাড়িয়ে দেয়ায় আমাদেরও বাড়াতে হয়েছে। কারণ আমাদের ব্যাংকগুলো থেকে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাবে ডলার প্রতি ৭ টাকা দাম বাড়িয়েছে সে হিসাবে আমরাও যদি দাম বাড়াই তাহলে ডলারের খুচরা মূল্য ১২৪ থেকে ১২৫ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা সে হারে দাম বাড়াইনি। আমাদের থেকে কম দামে কেউ ডলার দিতে পারবে না। জামান মানি চেঞ্জিং হাউজের বিক্রেতা রাসেল বলেন, ডলার নেই। তবে বিশেষ প্রয়োজন হলে ম্যানেজ করা যাবে। সেক্ষেত্রে ১২৩ টাকা করে দিতে হবে। এর থেকে কম সম্ভব না। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status