বাংলারজমিন
পাকুন্দিয়ায় ভুয়া রেজাল্ট শিট তৈরির অভিযোগ পরাজিত প্রার্থী রেনুর
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
১০ মে ২০২৪, শুক্রবারকিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল এবং ব্যাপক জালিয়াতি ও ভুয়া রেজাল্ট শিট তৈরি করে জনসম্মুখে উপস্থাপন করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে গত বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচন এর ভোট পুনর্গণনা অথবা নির্বাচন বাতিল করে নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ও নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দাবি জানিয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম রেনু। বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি দুদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এই দুদিনের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে তিনি আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। পাকুন্দিয়া পৌর সদর ঈদগাহ মাঠে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মো. রফিকুল ইসলাম রেনু নির্বাচনে মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের টানা দুবারের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত বার্তা প্রেরণ শিট অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের প্রার্থী এমদাদুল হক ২৮ হাজার ৭৩৮ ভোট পেয়ে ৯৪৭ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মো. রফিকুল ইসলাম রেনু পেয়েছেন ২৭ হাজার ৭৯১ ভোট। সংবাদ সম্মেলনে মো. রফিকুল ইসলাম রেনু অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে একজন ভোটারকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনটি পদের জন্যই একটি করে ব্যালট দেয়া হয়।
রেনু লিখিত বক্তৃতায় বলেন, আমি যে সকল ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করার সুযোগ পাই, সে সমস্ত কেন্দ্রে প্রকৃত ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দিয়ে জাল ভোট এবং কেন্দ্র দখল করে যে জঘন্য প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছিল সেই প্রার্থীর নাম এমদাদুল হক জুটন (আনারস)। স্থানীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. সোহ্রাব উদ্দিন সাহেব আইন লঙ্ঘন করে তার সমর্থিত প্রার্থী এমদাদুল হক জুটনকে জয়ী করার জন্য যত ধরণের অনিয়ম যথা পেশীশক্তির ব্যবহার, অবৈধ টাকার ছড়াছড়ির মাধ্যমে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাবিত করেন। যার আভাস পূর্বেই আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিরব থেকে দুষ্কার্যে সহায়তা প্রদান করেন।
রফিকুল ইসলাম রেনু’র অভিযোগ, পাটুয়াভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, বিশুহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, কলাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং চকদিগা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদেরকে মারধর করে বের করে দেয়া হয় এবং অবৈধভাবে জাল ভোট দেয়া হয়। এছাড়া বিশুহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাংবাদিকদের জিম্মি করে অবৈধভাবে জাল ভোট দেয়া হয়। এসবের প্রমাণ হিসেবে তার কাছে ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত রয়েছে। চেয়ারম্যান প্রার্থী রেনু’র অভিযোগ, পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের সকল ভোট কেন্দ্র, চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের সকল কেন্দ্র, শহীদ আলাউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্র, বাহাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং এগারসিন্দুর ইশাখান সিনিয়র মাদরাসার দুটি কেন্দ্রে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় এবং মোবাইল ফোনে বার বার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরও কোন প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এদিকে বুধবার পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পর উপজেলা পরিষদ হল রুমের ফলাফল গ্রহণ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ এর পক্ষে ফলাফল ঘোষণা শুরু করা হয়। রাত ৮টা ২০মিনিট পর্যন্ত একটানা ধারাবাহিকভাবে উপজেলার ৮৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৪টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ৭৪টি কেন্দ্রের ফলাফলে মো. রফিকুল ইসলাম রেনু ২৪ হাজার ৬৯৮ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন এবং এমদাদুল হক জুটনের ভোট সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৫১ ভোট। এরপর প্রায় ৩০ মিনিট আর কোন ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে পুনরায় ফলাফল ঘোষণা করা শুরু হয়। রাত ৯ টা ৩৪ মিনিটের দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বিল্লাল হোসেনের উপস্থিতিতে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ উপজেলার ৮৫টি কেন্দ্রের সবকটির ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। ৯টা ৩৮ মিনিটের দিকে ফলাফল ঘোষণা শেষ করেন তিনি। ফলাফল ঘোষণা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম রেনু দাঁড়িয়ে তাৎক্ষণিক ফলাফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন এবং বলেন, ভোটে ব্যাপক অনিয়ম হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ঘোষিত ফলাফলে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোটের সাথে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোটের কোন মিল নেই। এখন চেক করেন এখন প্রমাণ হবে। সীল যে মারছে, এটির প্রমাণ এখনই পাবেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বিল্লাল হোসেন সবাইকে হল রুম ত্যাগ করার জন্য বলেন। কিন্তু মো. রফিকুল ইসলাম রেনু সেখানে অবস্থান করে নির্বাচনে অনিয়মের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদকে উদ্দেশ্য করে রফিকুল ইসলাম রেনু বলেন, যে রিগিংটা করেছেন আপনি, আধ ঘন্টা যে রিগিংটা করেছেন, ঠিক করেননি কিন্তু। আমাকে আপনার অফিসে বসাইয়া রেখে কেন্দ্রগুলোতে রিগিং করেছেন। এটার ন্যায়বিচার চাই এবং পুনরায় ভোট গণনা চাই।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত বার্তা প্রেরণ শিট অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে মোট প্রদত্ত ভোট ৭০ হাজার ৩৩৪ ভোট, ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট প্রদত্ত ভোট ৭৫ হাজার ৪১৬ ভোট এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট প্রদত্ত ভোট ৭০ হাজার ২০৬ ভোট। এ হিসেবে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রদত্ত ভোটের চেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৫ হাজার ৮২ ভোট বেশি। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদের বার্তা প্রেরণ শিটে তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর যে ভোট দেখানো হয়েছে, তাদের মোট ভোটের যোগফলেও গড়মিল রয়েছে।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, উনি (রফিকুল ইসলাম রেনু) যদি অভিযোগ করে থাকেন, বিষয়টি উনাকেই প্রমাণ করতে হবে।