ঢাকা, ১৪ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

আইসিএবি বাজেট আলোচনায় বক্তারা

রাজস্ব আয় বাড়াতে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন জরুরি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(২ সপ্তাহ আগে) ২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ৯:৫৭ অপরাহ্ন

mzamin

দেশে প্রতিবছর উচ্চ হারে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু কর-জিডিপির অনুপাত কাঙ্খিত পর্যায়ে নেওয়া যাচ্ছে না। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন, রাজস্ব প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর আদায় পদ্ধতি পুরোপরি ডিজিটালাইজড করা এবং বেশ কিছুখাতে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করতে হবে।
রোববার রাজধানীর কারওয়ানবাজার সিএ ভবনে দ্য ইন্সটিটিউট অব চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ডস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ওপর এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন।
আইসিএি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। আইসিএবির সাবেক সভাপতি মো. হুমায়ুন কবীরের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, রপ্তানিমূখী পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, বাংলাদেশ জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র(জেবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আব্দুল হক, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ এবং সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন ও আমিনুর  রহমান, ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান, ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম, আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীষ বোস প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, প্রতিবছর আমাদের উচ্চহারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য এনবিআরে আমূল সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন জরুরি। একইসাথে তিনি কর আদায় পদ্ধতি পুরোপুরি অনলাইনে আনার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

পিআইআই'র নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগামী বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এজন্য তিনি বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, টাকা ছাপিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। নতুন টাকা ছাপানো বন্ধ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন
একই সাথে তিনি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ কমানোর পরামর্শ দেন। তিনি রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ভ্যাট আইন-২০১২ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জোরালো সুপারিশ করেন।

পাশের দেশের উদহারণ টেনে তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশের রাজস্ব আদায়ের সিংহভাগ দাঁড়িয়ে আছে প্রত্যক্ষ করের ওপর। বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ করনীতি করুণ বলে দিনকে দিনে দেশে আয় বৈষম্য আরও প্রকট হয়ে উঠছে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, সৌদি আরবে একটি নিয়ম আছে, সেখানে জমি কিনে ফেলে রাখলে জরিমানা হিসেবে বাড়তি কর দিতে হয়। বাংলাদেশেরও উচিত এমন ব্যবস্থা করা। পূর্বাচলের প্রসঙ্গ টেনে আহসান এইচ মনসুর বলেন, পূর্বাচলে অনেকে জমি কিনে ফেলে রেখেছেন। মাইলের পর মাইল খালি পড়ে আছে। এখানে আদৌ কিছু উঠবে কিনা সন্দেহ আছে। এসব জমির উপর কর আরোপ করা উচিত। জমি কিনে এভাবে ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না।

এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়ে বলেন, এটি ঢালাওভাবে করলে চলবে না। পরীক্ষী-নিরীক্ষা করে যৌক্তিকভাবে করতে হবে। যেসব খাতে কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহার করলে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বাঁধাগ্রস্ত হবে সেখানে এই সুবিধা প্রত্যাহার করা যাবে না।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম অভিযোগ করেন এইচএস কোড জটিলতার কারণে অনেক ব্যবসায়ী কাস্টমস কর্মকর্তাদের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং অতিরিক্ত জরিমানা গুনতে হচ্ছে।

জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআিই) সাবেক সভাপতি আব্দুল হক বলেছেন, দেশে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ৪ হাজার সিসির গাড়িতে চলাফেরা করে। সেই গাড়ির পাশেই সাধারণ মানুষ ধুঁকতে ধুঁকতে রিকশায় যাতায়াত করে। আব্দুল হক বলেন, সম্প্রতি রাজস্ব বিভাগ সরকারের কাছে ২০০ গাড়ি চেয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকার গাড়ি বিলাস প্রতিদিনই মিডিয়ায় আসে। এরপরেও এই বিলাসিতা থামাতে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না। এভাবে চলতে থাকলে দেশ পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে।
অন্যান্য দেশের সরকারে গাড়ি কেনা প্রসঙ্গে আব্দুল হক বলেন, জাপান সরকার নিজেদের সব কাজ রেন্টের গাড়িতে করে। মালয়েশিয়াতেও রেন্টের গাড়িতেই সরকারি কাজ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ এত আর্থিক সমস্যার মধ্যেও কোটি কোটি টাকার গাড়ি কিনছে। এটা ভালো কোনো ইঙ্গিত দেয় না। দেশে মানুষ হাহাকার করছে আবার সেই দেশের রাস্তায়ই চলছে কোটি টাকার গাড়ি। এটি মানবিকতার জায়গা থেকে প্রচণ্ড দৃষ্টিকটু বলে মন্তব্য করেন আব্দুল হক। তিনি বলেন, আগামী বাজেটে সরকারে উচিত ব্যয় হ্রাসকল্পে যা যা করা দরকার সেসব করা। ব্যয় না কমালে মূল্যস্ফীতি সমস্যার সমাধান হবে না। ব্যয় কমাতে সরকারের প্রকল্প প্রেম কমাতে হবে। যেসব প্রকল্পের কাজ চলছে সেটা শেষ করাই এখন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status