দেশ বিদেশ
‘গোল্ডেন রাইস’ উৎপাদনে ফিলিপাইনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা
মানবজমিন ডেস্ক
২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবারবৈজ্ঞানিকভাবে জেনেটিক্যাল পদ্ধতিতে কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত ‘গোল্ডেন রাইস’ নামের এক প্রকার ধান উৎপাদন এবং তা বাণিজ্যিকীকরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফিলিপাইনের একটি আদালত। এই ধান উৎপাদন পরিবেশ এবং মানবদেহের জন্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে ওই আদালত। বৃহস্পতিবার এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়েছে, পরিবেশ এবং মানবদেহের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিশেষ পদ্ধতিতে উৎপাদিত ওই ‘গোল্ডেন রাইস’ উৎপাদন এবং তা বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। বিশ্বে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সর্বপ্রথম ফিলিপাইন এমন ধান উৎপাদনের অনুমতি দেয়। মূলত শিশুদের অন্ধত্বের হার কমাতে ভিটামিন-এ’র ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে উজ্জ্বল হলুদ রঙের এই ধান উৎপাদনে অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
২০২১ সালে দেশটির পার্লামেন্টে এ ধান উৎপাদনের পক্ষে বিল পাস হলে সে সময় ১৪টি পরিবেশবাদী সংগঠন এর বিরোধিতা করে আদালতে মামলা করে। পরে গত ১৭ই এপ্রিল মানবদেহের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে এই ধান উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা দেয় ম্যানিলার আদালত। এর পাশাপাশি কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত বিটি এগপ্লান্ট বা এক রকম বেগুন উৎপাদনেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে আদালত বারবার মারাত্মক স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাবের কথা জানিয়েছে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এসব ফসল উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণ বেআইনি।
শিশুদের অন্ধত্ব কমাতে এবং বৈশ্বিকভাবে শিশুদের জীবন সুরক্ষায় এই সোনালি ফসলের বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, ভিটামিন-এ’র অভাবে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ শিশু অন্ধত্বের শিকার হয়। এ ছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ভিটামিন-এ ঘাটতির ফলে প্রতিবছর ১২ মাসের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার মোট শিশু মৃত্যুর অর্ধেক। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ‘গোল্ডেন রাইস’ উৎপাদনে কাজ করেছে ফিলিপাইনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইরি) এবং ফিলিপাইন রাইস রিসার্চ এগ্রিকালচারের (ফিলরাইস) বিজ্ঞানীরা। ইউনিভার্সিটি অব ফিলিপাইনের অধীনে যখন বিটি এগপ্লান্ট উৎপাদনে কাজ শুরু হয় তখন থেকেই বিশেষ পদ্ধতিতে ওই ধান উৎপাদনে কাজ করেন তারা। ফিলরাইসের কার্যনির্বাহী প্রধান জন ডি লিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছেন, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এই ফসল উৎপাদন পুনর্বিবেচনা করবেন তারা। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে পুনরায় কাজ করার কথাও জানিয়েছে ইরি। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন গবেষকরা। বিশেষ পদ্ধতিতে উৎপাদিত ওই ফসলের ক্ষেত্রে এর আগে নিজেদের ইতিবাচক মূল্যায়ন জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা।
তবে শুরু থেকেই বিশেষ পদ্ধতিতে এভাবে ‘গোল্ডেন রাইস’ উৎপাদনের বিরোধিতা করে আসছে দেশটির পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। কৃত্রিম উপায়ে জেনেটিক্যালি খাদ্য উৎপাদনে পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কথা বলছে ওই সংগঠনগুলো। যেসকল সংগঠন এভাবে ফসল উৎপাদনের বিরোধিতা করে আদালতে মামলা করেছিল তাদের একটি হলো পরিবেশ বিষয়ক গ্রিনপিস। সংগঠনটি আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, আদালতের এই রায় ফিলিপাইনের কৃষক এবং সাধারণ জনগণের জন্য একটি ঐতিহাসিক বিজয়, যারা গত কয়েক দশক ধরে কৃত্রিম উপায়ে এসব ফসল উৎপাদনের বিরোধিতা করেছে। গ্রিনপিসের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কর্মকর্তা উইলিয়াম প্লেগ্রিনা বলেছেন, কৃত্রিম পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের ফলে সাধারণ কৃষকদের বীজ নষ্ট হতে পারে এবং এটি পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ। এ ছাড়া এসব ফসল স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন করা হয়নি বলেও অভিযোগ তার। বিশ্বের মানুষের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত। বিশেষ করে এশিয়াতে এর ব্যাপক চাহিদা। চাল থেকে আমরা প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন পেয়ে থাকি। তবে কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত ফসলে এর পরিমাণ পাওয়া যায় না।