প্রথম পাতা

ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি উদ্বেগে বিজ্ঞানীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

একদিকে কোভিড ভ্যাকসিনের পরীক্ষা যতো ফলাফলের দিকে এগোচ্ছে, ততো উদ্বেগ বাড়ছে বিজ্ঞানীদের। বেশ কয়েকটি চলমান করোনাভাইরাস-ভ্যাকসিনের ট্রায়ালগুলোর ফলাফল সামনের মাসে প্রকাশ্যে আসতে পারে। তবে প্রত্যাশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাকসিনগুলো মানবদেহে প্রয়োগের ক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভ্যাকসিনের অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি  রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। যদি তা সত্যি হয় তাহলে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে ঝুঁকি বাড়বে বৈ কমবে না বলে মনে করছেন তারা। দুই সপ্তাহ আগে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ছয় দিনের বিরতির পর আবার তাদের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করেছে। কারণ তাদের ভ্যাকসিন সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পড়েছিল, ফলে সাময়িকভাবে ট্রায়াল বন্ধ রাখা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলেও একইভাবে ভ্যাকসিনের স্থগিত পরীক্ষাগুলো আবারো শুরু হয়েছে, কিন্তু ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ আবার মার্কিন গবেষণা শুরু করার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেয়নি। কেন হঠাৎ এই গবেষণা স্থগিত রাখা হয়েছে সে বিষয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে।  কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলছেন যে, স্বচ্ছতার অভাবে এই ভ্যাকসিনের উপর জনসাধারণ আস্থা হারাতে পারে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জেরে একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হলে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, নভেম্বরে তার দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তিনি একটি ভ্যাকসিন চান। উদ্বেগের সমাধানের জন্য, তিনটি শীর্ষ করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী ওষুধ সংস্থা- অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার এবং মডার্না-  তাদের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাগুলো কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তার বর্ণনা করে নথি প্রকাশ করেছে। এই প্রটোকলগুলোতে সুরক্ষা এবং সাফল্যের মানদণ্ড রয়েছে এবং ভ্যাকসিনগুলোর প্রাথমিক ফলাফলগুলো শিগগিরই রিপোর্ট আকারে জনসাধারণের সামনে আনা হবে যা এর আগে হয়নি। তিনটি বিষয় যা বিজ্ঞানীরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রাথমিকভাবে, গবেষকরা খুব বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন না যখন মিডিয়া জানিয়েছিল যে একজন অংশগ্রহণকারীর শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের পরীক্ষা থামিয়ে দেয়া হয়েছিল। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোতে এই ধরনের প্রতিক্রিয়াগুলো খুব সাধারণ বিষয়। সম্ভবত অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও এটি ঘটেছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সে কারণে যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক কমিটি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ট্রায়াল পুনরায় শুরু করার অনুমতি দিয়েছিল। কিছু মিডিয়া জানিয়েছিল, অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীর শরীরে ট্রান্সভার্স মায়েলিটিস লক্ষ্য করা গিয়েছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যা মেরুদণ্ডের সমস্যা বলে বিবেচিত হয়, যদিও অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং যুক্তরাজ্যের ট্রায়াল স্পন্সর ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড অংশগ্রহীতার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেনি। কিছু বিজ্ঞানী তথ্য সামনে না আনার জন্য অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের সমালোচনা করেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের এপিডেমিওলজিস্ট রায়না ম্যাকলেন্টিয়র বলেছেন, ‘যদি দেখা যায় যে খুব কম সংখ্যক লোককে ভ্যাকসিন দেয়ার পর তাদের মধ্যে দু’জনের শরীরে ট্রান্সভার্স মায়েলিটিস হয়েছে, তাহলে তা উদ্বেগের নয়। যদি অন্য কোনো মামলা থেকে থাকে তবে তা বিশ্লেষণ করা খুব কঠিন হবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড স্বচ্ছতা সংক্রান্ত প্রশ্নের কোনো জবাব  দেয়নি। একটি প্যানেল ডিসকাশনের সময়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী পাস্কাল সরিওট বলেছিলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল গাইডলাইনগুলোতে  পৃথক অংশগ্রহণকারীদের  গোপনীয়তা রক্ষার কথা বলা আছে, যা তারা লঙ্ঘন করতে পারেন না। সরিওটের মতে, এই ভ্যাকসিনগুলোর প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরিবর্তে তার স্বচ্ছতা নিয়ে বেশি আলোচনা করা হচ্ছে, যা সমর্থনযোগ্য নয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status