শেষের পাতা

প্রবাসীরা সড়কে এখনো জটিলতা

মারুফ কিবরিয়া

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন

‘কালকের মধ্যে ভিসার মেয়াদ না বাড়লে মাটিতে মিশে যেতে হবে। সব যাবে আমার। সৌদিতে কাজ করে আমার পরিবার চলে। গত আট মাস দেশে এসে বেকার খাচ্ছি। আমার আর কিছু করার নাই। পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে’। সৌদি আরবে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে এমন শঙ্কার কথাই জানালেন প্রবাসী শহিদুল ইসলাম। করোনার কারণে সৌদি আরব থেকে দেশে বেড়াতে আসা অসংখ্য প্রবাসী আটকা পড়েন যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারও আবার আকামার মেয়াদ শেষ। সেই তালিকায় রয়েছেন মক্কার একটি কোম্পানিতে কাজ করা এই শহিদুলও। গত কয়েকদিন ধরে ভিসা জটিলতায় পড়েন তিনি। শঙ্কা ছিল আকামার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে। সৌদি সরকার এ ব্যাপারে মেয়াদ বাড়ানোর কথা বললেও বাস্তবে তা হয়নি। এরমধ্যে যাদের মেয়াদ ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের ভিসা বাতিল হওয়ার বড় শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধু শহিদুল নন, গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোসহ নিজ কর্মস্থলে ফেরায় বেশকিছু জটিলতা নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হন কয়েকশ’ প্রবাসী। তাদের দাবি, ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভিসার মেয়াদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়াতে হবে। এ ছাড়া যারা টিকিট নিয়ে জটিলতায় ভুগছে তাদের হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে হবে।

বেলা ১টা থেকে শুরুতে সৌদি এ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স কার্যালয় তারপর সোনারগাঁও ট্রাফিক সিগন্যালের পুরোটা সড়ক অবরোধ করেন প্রবাসীরা। ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর দাবিতে শত শত প্রবাসী রাস্তায় নেমে আসেন। নিজের কর্মস্থলে ফিরে যেতে প্রতিটি পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। তাদের ভাষ্য, সৌদি সরকার আকামার মেয়াদ বাড়ানোর কথা বললেও অনলাইনে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে বাংলাদেশ সরকারেরও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই বলে প্রবাসীদের অভিযোগ। তাছাড়া টিকিট পেতে টোকেন নিতে গেলেও সেখানে ঘুষ লেনদেন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। সড়ক অবরোধ করে প্রবাসীরা একপর্যায়ে ‘একা বাঁচতে চাই না, বাঁচলে সবাই একসঙ্গে, মরলেও একসঙ্গে’ বলে স্লোগান দেন তারা।

নোয়াখালী থেকে আসা মোয়াজ্জেম নামের এক প্রবাসী বলেন, আমি সৌদি আরব থাকি ১৫ বছর। গত ফেব্রুয়ারিতে বেড়াতে আসি। করোনার কারণে আটকে যাই। আর যাওয়া হয়নি। এখন কোম্পানি ছুটির মেয়াদ বাড়াচ্ছে না। ছুটি বাড়লে ভিসার মেয়াদও অটো বেড়ে যাবে। এরমধ্যে ৩০শে সেপ্টেম্বর আমার ভিসার মেয়াদ শেষ। তার আগে না যেতে পারলে আমি শেষ হয়ে যাবো। সংসারের হাল ধরার মতো কেউ নাই। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের সরকারও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। সৌদি সরকার ঘোষণা দিলেও অনলাইনে সেটার কোনো প্রমাণ পাইনি।

কুমিল্লার আরিফুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ধরনা দিয়েও বিমানের টিকিট পাচ্ছি না। সৌদি দূতাবাসের নির্ধারিত এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সৌদি কফিলের কাছ থেকে ছুটি ও ভিসা বাড়ানোর অনুমতিসহ নানা ডকুমেন্ট নিয়ে আসার কথা বলে। আমরা শ্রমিক, এখান থেকে কোম্পানির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাগজপত্র আনা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমাদের দাবি একটাই আগের মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবার ভিসার মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হোক। সরকারের কাছে এই কথা পৌঁছানোর জন্যই নিরুপায় হয়ে রাস্তা অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি আমরা।

ফেনী থেকে আসা প্রবাসী শাহজাহান বলেন, দেশে ফিরে গত ৯ মাস বেকার বসে বসে খাচ্ছি। আয়-রোজগার নেই। ৩০শে সেপ্টেম্বর ভিসার মেয়াদও শেষ। ভিসার মেয়াদ ও টিকিটের ব্যবস্থা করতে এক সপ্তাহ ধরে এয়ারলাইন্স কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই করতে পারছি না। এখন আমার কী হবে?

চাঁদপুরের শাহ আলম বলেন, ১১ মাস বেকার বসে আছি। কয়েকদিন ধরে সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট কনফার্ম করার জন্য ছুটে আসি। কিন্তু টিকিট পাচ্ছি না। ৩০শে সেপ্টেম্বর আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সরকার ২৪ দিন ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও অনলাইনে গিয়ে চেক করে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর কোনো আলামত পাই না। বিদেশে কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠানোই কি আমাদের অপরাধ, সহজে সমস্যা সমাধানের জন্য তিন মাস ভিসা বাড়ানো হোক। তবেই সবাই ফিরে যেতে পারবেন।

ঢাকার উত্তরা থেকে আসেন মো. হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, আমাদের রেমিট্যান্সের টাকায় দেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে। অথচ দেশ আমাদের কী দিচ্ছে! আজ কয়টা দিন ধরে কি পরিমাণ হয়রানির শিকার হচ্ছি। কেউ আমাদের জন্য কোনো দায়িত্বই নিচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা না খেয়ে মারা যাবো। পরিবারের মানুষগুলো নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো।

সৌদি প্রবাসী ফারুক। তিনি মিরপুরের বাসিন্দা। বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দাবি একটাই। ভিসার মেয়াদ কালকের মধ্যেই বাড়াতে হবে। এদিকে টানা চার ঘণ্টার সড়ক অবরোধে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শাহবাগ থেকে বিজয় সরণিমুখী ও বিজয় সরণি থেকে শাহবাগমুখী এবং কাওরান বাজার থেকে পান্থপথমুখী সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় অনেক মানুষ পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যান। গত কয়েকদিন ধরেই সৌদি এ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে আসছেন প্রবাসী। শুরুতে ফ্লাইট নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও এখন টিকিটের সমস্যা দেখা দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রবাসীদের অভিযোগ। এ ছাড়া কম সময়ে করোনা পরীক্ষা করে সনদ নিতে গিয়েও বিড়ম্বনায় পড়ছেন তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status