প্রথম পাতা

সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রি বন্ধ প্রবাসীদের বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

রেমিটেন্স যোদ্ধা কুমিল্লার হীরণ। চলতি বছরের ১৩ই মার্চ সৌদি এয়ারলাইন্সের সর্বশেষ ফ্লাইটে সৌদি আরব থেকে ৩ মাসের ছুটি নিয়ে দেশে ফিরেন। করোনা মহামারির মধ্যেই ছুটি শেষ হয়। জুন মাসের ৭ তারিখে সৌদি আরবে ফিরে কাজে যোগ দেয়ার কথা। তখন  কোভিড-১৯ এর  কারণে সৌদি সরকার আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়ায় কর্মস্থলে ফেরা হয়নি তার। ৩০শে সেপ্টেম্বর তার ভিসার মেয়াদ শেষ। তাই অনিশ্চয়তা নিয়েই রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পাশে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়ান। রোদ আর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে টানা ২ দিন লাইনে থাকলেও টিকিট কিংবা টোকেনের একটিও মিলেনি। এতে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কা তৈরি হয়েছে তার মধ্যে। খুলনার মো. হানিফ সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিটের জন্য রোববার থেকেই অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি জানান, রোববার সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে একটি টোকেন পেয়েছি। ভিসার মেয়াদ আর এক সপ্তাহ বাকি আছে। তার জন্য এখনো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ৩ দিনেও তাদের অফিসে ঢুকতে পারিনি। সোমবার টিকিটের জন্য বিক্ষোভ ও করেছি। সারারাত রাস্তার ফুটপাথে কাটিয়েছি। তবুও কাজ হয়নি। মঙ্গলবারও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলাম। টিকিট পাবো কি না নিশ্চয়তা নাই। যে করেই হোক আমাকে এই মাসের মধ্যেই সৌদি আরবে যেতে হবে। তা না হলে আমার পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। শুধু হীরণ আর হানিফ নয়, এমন পরিস্থিতির শিকার কয়েক হাজার সৌদি প্রবাসীর। চাকরি বাঁচাতে রাজধানীর রাস্তায় মরিয়া তারা। টিকিটের জন্য দিনভর অপেক্ষা করেছেন সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স সাউদিয়ার অফিসে। তবে অনিদির্ষ্টকালের জন্য টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ ছুটিতে আসা সৌদি প্রবাসীরা। সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিটের জন্য গতকালও রাজধানীর কাওরান বাজার-বাংলামোটর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসীরা। বিক্ষোভকারীরা জানান, ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তার আগেই সবাইকে সৌদি আরবে কাজে যোগ দিতে হবে। না হলে আমদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে না। আমাদের ওয়ার্ক পারমিটও বাড়ানো হবে না। এই সময়ের মধ্যেই সৌদি আরবে যেতে হবে। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ১লা অক্টোবর থেকে বিমান সৌদি আরবে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। কিন্তু তারা ল্যান্ডিং পারমিশন পায়নি। আমরা এখন কি করবো? এই সময়ের মধ্যে যেতে না পারলে কয়েক হাজার সৌদি প্রবাসীর জীবন হুমকির মুখে পরে যাবে। আমাদের আয়ের উপর কয়েক লক্ষাধিক মানুষের ভরণ পোষণ চলে।

কয়েকজন বিক্ষোভকারী বলেন, আমরা সৌদি আরব থেকে সাউদিয়ার রিটার্ন টিকিট কেটে দেশে আসছি। করোনার কারণে তাদের ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আমরা নির্দিষ্ট সময়ে যেতে পারিনি। এখন তাদের ফ্লাইট চলবে। অথচ টিকিট রি-ইস্যু করতে পারছি না। ৩ দিন লাইনে দাঁড়ালেও টিকিট দিচ্ছে না সাউদিয়া। যারা টিকিট পেয়েছেন তাদের রিটার্ন টিকিট থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা রি-ইস্যু করতে নিচ্ছে সৌদি এয়ারলাইন্স। নতুন করে টিকিট বিক্রি করছে ৯৫ হাজার টাকায়। আমরা টিকিট রি-ইস্যুর টাকা দিতেও রাজি। তারপরেও আমাদেরকে কেন টিকিট না দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
নোয়াখালী থেকে আসা মোস্তফা মিয়া জানান, লকডাউন হওয়ার আগেই ছুটি নিয়ে দেশে আসি। কয়েক মাস ধরে ফ্লাইট না থাকায় যেতে পারছি না। আকামার মেয়াদ এক মাস বাকি আছে। সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলবে জানতে পেড়ে ১৯শে সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসেছি। মঙ্গলবার পর্যন্ত সৌদি এয়ারলইন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলাম না। দেখলাম তাদের অফিসের সামনে নোর্টিশ। অনির্দিষ্টকালের জন্য টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখছে। ৩০শে সেপ্টেম্বর আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এখন আমি কি করবো?

জানা যায়, সোমবার প্রবাসীদের বিক্ষোভের মুখে কয়েকজনকে টিকিট সংগ্রহের সিরিয়ালের টোকেন দেয় ১০ জন প্রতিনিধিকে ভেতরে নিয়ে যায় সৌদি এয়ারলাইন্স। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাদের প্রধান গেটের সামনে একটি কাগজে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়। তাতে লিখা রয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সৌদি এয়ারলাইন্সের সকল প্রকার কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। এতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নামেন প্রবাসীরা। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে, দেশে আটকে পড়া প্রবাসীদেরকে কর্মস্থলে ফেরত পাঠাতে চেষ্টা করছে সরকার। আগামী ১ অক্টোবর থেকে সৌদিতে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের অনুমতিও পায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ল্যান্ডিং পারমিশন না পাওয়ায় যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করতে পারেনি সংস্থাটি। অপরদিকে আজ থেকে সৌদি আরব-বাংলাদেশ রুটে সপ্তাহে দু’টি ফ্লাইটের ঘোষণা দেয় সৌদিয়া। তবে বিমানকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি না দেয়ায় সৌদির ফ্লাইট পরিচালনাও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন জানান, ১লা অক্টোবর থেকে সৌদি আরবে বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। এখনো ল্যান্ডিং পারমিশন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় যাত্রীদের আসন বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।  ল্যান্ডিং পারমিশন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাইট ঘোষণা করা হবে। যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মহিবুল হক জানিয়েছেন, বিমান আটটি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রস্তুত আছে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ বিমানকে ল্যান্ডিং পারমিশন দেননি। পারমিশন পেলেই ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status