শেষের পাতা
৩ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি নীলার ঘাতক
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার, ৯:৩০ পূর্বাহ্ন
রিকশা থেকে জোরপূর্বক নামিয়ে রেখে নীলা রায় (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রীকে ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে হত্যার তিন দিন পার হলেও অভিযুক্ত বখাটে মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর থেকে ওই যুবকসহ তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় নিহত স্কুলছাত্রীর বাবা নারায়ণ রায় বাদী হয়ে হত্যাকারী কিশোর গ্যাং সদস্য মিজানুর রহমান, তার বাবা আব্দুর রহমান ও মা আয়েশা সিদ্দিকা নামজুন নাহারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামাদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে গত রোববার রাত ৯টার দিকে পৌর এলাকার কাজী মোকমা পাড়া মহল্লার আব্দুর রহমানের মালিকানাধীন পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতরে ওই ছাত্রীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। এদিকে ঘটনার তিন দিন পরেও পুলিশ অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং সদস্য মিজানুরকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতা ভিড় করায় আলামত নষ্টেরও আশঙ্কা করেন তারা। তবে বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছায়া তদন্তে নেমেছে সিআইডি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সিআইডি পুলিশ ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে হত্যার স্থান ও এর পাশ থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। সরজমিন হত্যার স্থান ও আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাভার পৌর এলাকার কাজী মোকমাপাড়া এলাকাটিতে মাদকের জমজমাট বেচাকেনার পাশাপাশি বিভিন্ন খালি বাউন্ডারিতে নিয়মিত মাদক সেবন করে থাকে এলাকার উঠতি বয়সী কিশোররা। পরিত্যক্ত বাউন্ডারি ও খোলা মাঠগুলো সন্ধ্যার পরই কিশোর গ্যাং সদস্যদের পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠে। এসব বিষয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ পুলিশকে একাধিকবার জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি তারা। ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির অপর বাসিন্দা বলেন, গত তিন দিন আগেও কতগুলো ছেলে লাঠিসোঠা নিয়ে একই গলিতে গালিগালাজ করতে করতে দৌড়াচ্ছিলো। এরপর গত শনিবার দিনের বেলায় একটি মেয়েকে রিকশা থেকে নামিয়ে ইচ্ছামতো গালিগালাজ ও মারধর করে। এসব বিষয়ে কেউ ওদের বাসায় বিচার দিতে গেলে উল্টো তাদেরকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া ওই গলিতে কেউ ঢুকলে তাদেরকে বকঝকা করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। ওদের যে বকা এবং কথা বলার ধরণ তাদের উৎপাতে এলাকার মা-বোন কিংবা বয়স্ক কেউই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারেনা। এলাকায় কোন ঝালমুড়িওয়ালা, মাছ ওয়ালা ও সব্জী ওয়ালা আসলে তাদেরকে মারধর করে চাঁদা আদায় করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। সাইফুল নামে একজন দোকানদার সাকিব ও মিজানুরের অত্যাচারে ব্যবসা ছেড়ে এলাকা থেকে চলে গেছেন। প্রতিদিনই তার কাছ থেকে চাঁদা নিতো এবং টাকা না দিলেই মারধর করতো। নিহত স্কুল ছাত্রীর ভাই অলক রায় জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বখাটে মিজানুর রহমান আমার বোনকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। রোববার রাতে নিলাকে শ্বাসকষ্টের জন্য ডাক্তার দেখিয়ে আসার সময় বখাটে মিজানুর তাকে জোর করে রিকশা থেকে নামিয়ে নিজেদের পরিত্যক্ত বাসায় নিয়ে যায় এবং আমাকে তাড়িয়ে দেয়। অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও বোন ফিরে না আসায় আমি ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি মাদকাসক্ত কিছু যুবক দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। পরে আহত অবস্থায় আমার বোনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহতের মা মুক্তা রানী বলেন, প্রায়ই মিজানুর বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল দিয়ে নিলার মোবাইলের ব্লাক লিস্ট খুলে দেয়ার জন্য বলতো, ব্লাক লিস্ট খুলে দাও তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে তা না হলে তোমার ভাইয়ের ক্ষতি করবো। নিলা ওর অত্যাচার সইতে না পেরে মিজানুরের মাকে ফোন করে বলতো আন্টি আপনার ছেলেটা আমাকে অনেক ডিস্টার্ব করে একটু দেখেন আন্টি। তখন ওর মা বলতো দেখো কি বলবো, আমিতো ওকে সামলাতে পারছিনা। ও আমার কথা শুনেনা অনেক রাগী, বাসায় ভাংচুর করে তুমি একটু ওর সাথে কথা বলো। তখন নীলা বলতো মিজানুর আমার মা-বাবা ও ভাইকে মারবে বলে হুমকি দেয়, আমাকেও ভয়ভীতি দেখায়। ওর মা বলতো বিষয়টা আমি দেখতাছি। এখন আমার মেয়েকে হত্যা করা হলো আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই। সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) নির্মল কুমার দাস বলেন, নিহতের মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত দেখে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হতে পারে মনে হওয়ায় ডিএনএ টেস্ট করতে বলা হয়েছে। ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেলেই জানা যাবে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিলো কিনা। হত্যাকান্ডের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। উল্লেখ্য, নিহত নিলা রায় মানিকগঞ্জ জেলার শিংগাইর থানার বালিরটেক গ্রামের নারায়ন রায়ের মেয়ে। সে পরিবারের সাথে পৌর এলাকার কাজী মোকমাপাড়া মহল্লার শিতল ভিলায় ভাড়া থেকে স্থানীয় আ্যসেড স্কুলের দশম শ্রেণীতে লেখাপড়া করতো।