অনলাইন

নারীর স্বল্প পোশাক, কম্বোডিয়ায় তুলকালাম

অনলাইন ডেস্ক

২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার, ১২:০৬ অপরাহ্ন

কম্বোডিয়ায় নারীর পোশাক পরাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি সে দেশে নারীরা কী ধরনের পোশাক পরবেন এবং পরতে পারবেন না সে বিষয়ে সরকার একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে। প্রস্তাবিত ওই আইনে নারীদের খুব বেশি খাটো অথবা খুব বেশি খোলামেলা পোশাক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কোন নারীর শরীর দেখা যায় এরকম পোশাক পরলে তাকে জরিমানা করার কথাও এতে উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে আইনটিতে পুরুষের খালি গায়ে থাকা নিষিদ্ধ করারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে দেশটির অনেকেই প্রতিবাদ করছেন। বিশেষ করে নারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। যদিও সে দেশের সরকার বলছে, দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক মান মর্যাদা রক্ষার উদ্দেশ্যেই বিলটি আনা হয়েছে।

মলিকা টান নামের ১৮ বছর বয়সী এক তরুণী এই খসড়ার বিরুদ্ধে একটি অনলাইন পিটিশন শুরু করেছেন। এ ধরনের আইন করার উদ্যোগ নারীদের ওপর আক্রমণ বলে মনে করেন তিনি। মলিকা টানের প্রশ্ন; আমার পছন্দের পোশাকের জন্য কেন আমাকে জরিমানা করা হবে? কম্বোডিয়ার একজন তরুণী হিসেবে ঘরের বাইরে বের হলে আমি নিজেকে নিরাপদ বোধ করতে চাই, যে পোশাক পরতে আমার ভালো লাগবে আমি সেই জামা কাপড় পরতে চাই। আমি আমার পরিহিত পোশাকের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে চাই, এবং আমি চাই না সরকার এখানে কোন সীমা বেঁধে দিক। আমি মনে করি নারীদের খাটো স্কার্ট পরা বন্ধ করার জন্য আইন বাস্তবায়ন করা ছাড়াও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার আরো অনেক উপায় আছে। মলিকা বলেন, সব সময় আশা করা হয় আমরা যেন পুরুষের অনুগত দাস হয়ে থাকি এবং তাদের ইচ্ছে অনুসারে কাজ করি। মলিকা মনে করেন বহু বছর ধরে প্রচলিত রীতি নীতি থেকে এসব আচরণ তৈরি হয়। সমাজ ধরেই নেয় যে নারীরা হবে ন¤্র এবং তারা কোন প্রতিবাদ করবে না। মলিকা আশাবাদী যে তার পিটিশনের ফলে লোকজনের মধ্যে এমন সচেতনতা তৈরি হবে যে শেষ পর্যন্ত সরকার প্রস্তাবিত আইনটি পরিবর্তন করবে।

মলিকা টানের অনলাইন পিটিশন শুরু হয়েছে অগাস্ট মাসে। এর মধ্যেই ২১ হাজারের বেশি মানুষ তাতে অংশ নিয়েছেন। আরো অনেক নারী তার এই অবস্থানের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে সোশাল মিডিয়াতে নিজেদের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছড়ে দিচ্ছেন। তারা বলছেন, এই জামা পরার জন্য কি আমার জরিমানা হবে? তার পর সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে সোশাল মিডিয়াতে #সুনড়ফুসুপযড়রপব এই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে।

প্রস্তাবিত এই আইনটির প্রতিবাদে প্রচারণায় যোগ দেন ১৮-বছর বয়সী আরেকজন নারী আয়লান লিম। তিনি বলেন, কম্বোডিয়াতে সহিংসতার শিকার নারীকেই এর জন্য দোষারোপ করা হয়। এই সংস্কৃতির ওপরেই তিনি জোর দিতে চান। এটি যদি পাস হয়ে আইনে পরিণত হয় তাহলে এই বিশ্বাসটাই আরো জোরালো হবে যে যৌন অপরাধ করেও অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে এবং মনে হতে পারে যে এটা তাদের কোন দোষ নয়। আয়লান লিমও ওই পিটিশন দেখে প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি বলেন, কাম্বোডিয়ায় বেড়ে ওঠার সময় আমাকে সবসময় বলা হয়েছে আমাকে রাত আটটার মধ্যে বাড়িতে ফিরে আসার জন্য, খুব বেশি শরীরে দেখাতেও না করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত এই আইনটিতে মূলত নারীর পোশাকের ব্যাপারে যেসব বিধি-নিষেধের কথা বলা হয়েছে, সোশাল মিডিয়াতে সে ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও, অনেকে বিলটির অন্যান্য বিষয় নিয়েও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। খসড়া আইনটিতে যারা মানসিক প্রতিবন্ধী তাদের জনসমক্ষে অবাধ হাঁটাচলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করতে বলা হয়েছে সব ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি। এছাড়াও কোন একটি জায়গায় জড়ো হওয়ার আগে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন কাম্বোডিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের নির্বাহী পরিচালক চাক সোপিপ বলেন, বিলটি পাস হলে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। এর ফলে দারিদ্র ও অসাম্য আরো বেড়ে যেতে পারে।

সরকারের মন্ত্রীরা এবং জাতীয় পরিষদে বিলটি অনুমোদিত হলে আগামী বছর এটি কার্যকর হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মন্ত্রী ওক কিমলেখ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এটি এখন খসড়া পর্যায়ে আছে। তবে চাক সোপিপের আশঙ্কা, জনগণের দিক থেকে চাপ দেয়া না হলে কোন ধরনের যাচাই বাছাই ছাড়াই হয়তো বিলটি পাস হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, কম্বোডিয়াতে প্রায়শই খুব তাড়াাহুড়ো করে আইন পাস হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে এনিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সে দেশে নারীরা খোলামেলা বা শরীর দেখা যায় এমন পোশাক পরলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খাটো পোশাক পরলে গানের শিল্পী ও অভিনেত্রীদের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। এপ্রিল মাসে একজন নারীকে পর্নোগ্রাফির অভিযোগে ছয় মাসের কারাদ- দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে সোশাল মিডিয়াতে জামা কাপড় বিক্রি করার সময় তিনি শরীর দেখা যায় এরকম অশোভন ও উস্কানিমূলক পোশাক পরেছিলেন।  সে সময় প্রধানমন্ত্রী হুন সেন অনলাইনে নারীদের এ ধরনের লাইভ স্ট্রিমিংকে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এসবের কারণে নারীদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status