বিশ্বজমিন

কাঠমান্ডু পোস্টের রিপোর্ট

ভারতমুখী নেপালি শ্রমিক, ঠেকাতে পারছে না সরকার

মানবজমিন ডেস্ক

২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

যুব সমাজের শ্রমিকদের দেশান্তরী হয়ে ভারতে যাওয়া ঠেকাতে উদ্যোগ নিয়েছে নেপাল সরকার। এ জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ১৫ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে কর্মসূচিতে। কিন্তু কিছুতেই এসব শ্রমিককে দেশের ভিতর ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে না নেপাল। কাজের সন্ধানে প্রতিদিন শত শত মানুষ ছুটে যাচ্ছে সেখানে। কাইলালিতে গৌরিফান্টা সীমান্তে পুলিশের ইন্সপেক্টর রাজেন্দ্র কুমার বলেছেন, মধ্য আগস্ট থেকে এই সীমান্ত দিয়ে এরই মধ্যে ১০ হাজার ৪৫৮ জন নেপালি ভারতে পাড়ি দিয়েছেন। তার মতে, এখন প্রায়দিনই ৫০০ থেকে ১০০০ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাচ্ছেন। ১লা সেপ্টেম্বর সুদূরপশ্চিম প্রাদেশিক সরকার একটি নোটিশ জারি করেছে। এতে ভারতে করোনা মহামারির মধ্যে কাজের সন্ধানে না যেতে বলা হয়েছে জনসাধারণকে। কিন্তু সেই বারণ শুনছে না কেউ। প্রতিদিনই পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছেন যুবকরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন কাঠমান্ডু পোস্ট।

এতে আরো বলা হয়েছে, সুদূরপশ্চিম প্রদেশ থেকে বহু বছর ধরে বহু নেপালি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আপেল বাগানে কাজ করতে ছুটে যান। তারা যাতে নেপালেই থাকেন এ জন্য সরকার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হেম আওয়াস্থি বলেছেন, বেকার নাগরিকদের কর্মসংস্থানের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫ কোটি রুপি। এই কর্মসূচির অধীনে কমপক্ষে ৯ হাজার মানুষ নিজেরাই কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারেন এবং তারা তা বিক্রি করে নিজেরা ব্যবসা করতে পারেন। ওই মুখপাত্র আরো বলেন, ভর্তুকি হিসেবে কৃষকদের এক লাখ থেকে ৫ লাখ রুপি পর্যন্ত দেবে মন্ত্রণালয়। এই ভর্তুকি পেতে কৃষকদেরকে ডিস্ট্রিক্ট এগ্রিকালচার নলেজ সেন্টারে প্রস্তাব দিতে হবে। এ ছাড়া কৃষকদেরকে ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হবে। ২২ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচির অধীনে আবেদন করতে পারবেন কৃষকরা। এ জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া ফর্ম ডাউনলোড করে তা পূরণ করে জমা দিতে পারবেন কৃষকরা। এ কথা বলেছেন ধনগাদি সাব মেট্রোপলিসের এক নম্বর ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান সন্তোষ মাধহারি।

তবে সুদূরপশ্চিমের বেশির ভাগ মানুষ বলছেন, সরকারের নতুন এই কর্মসূচি সম্পর্কে তারা জানেন না। শনিবার ভারতে যাচ্ছিলেন কাইলালির টিকাপুরের বাসিন্দা দান বাহাদুর বিকে। তিনি বলেছেন, মধ্য এপ্রিলে ভারত থেকে দেশে ফিরেছি। আশা করেছিলাম, কোনো একটা ব্যবসা চালু করবো। কিন্তু দেশে কোনো কাজ নেই। তাছাড়া ব্যবসা করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থও নেই আমার কাছে। যদি সরকারের কৃষি বিষয়ক এই কর্মসূচির কথা আগে জানতে পারতাম তাহলে তো সবজি আবাদ করে দেশেই থাকতে পারতাম।

গৌরিফান্টা থেকে ভারতে যাচ্ছিলেন লাকি ছুয়ার বাসিন্দা অর্জুন পারিয়ার। তিনি বলেন, সরকার যেসব কর্মসূচি নিয়েছে তা প্রকৃত কৃষকের জন্য নয়। এসব কর্মসূচি হলো দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জন্য। তবে পরশুরাম মিউনিসিপ্যালিটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভীম বাহাদুর সারকি বলেছেন, আমাদের গ্রামের কিছু মানুষ ওই ফরম পূরণ করেছে। মনে হয় না, আমি ভর্তুকি পাবো। এসব কর্মসূচি হলো ভাল সম্পর্কযুক্ত লোকজনের জন্য। এ জন্যই কাজের সন্ধানে আবার ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

কাইলালি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সাবেক চেয়ারম্যান দীনেশ ভান্ডারি বলেছেন, ভারত থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ রুপি মূল্যের সবজি আমদানি করতে হয় নেপালে। তাই সরকার যুবকদেরকে সবজি উৎপাদনে জড়িত করতে উৎসাহিত করতে পারে। কিন্তু অভিবাসী শ্রমিকদেরকে তিন মাস গ্রামে বসিয়ে রাখতে পারে না সরকার। তাদেরকে কাজ দিতে ব্যর্থ হয়েছে স্থানীয় ও প্রাদেশিক সরকার। বর্তমান অর্থবছরে ভারত ও বিদেশ ফেরত শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ৫০০ কোটি রুপির প্রকল্প ও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সুদূরপশ্চিম সরকার। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাজেটে অর্থ রাখা হয়েছে। সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কৃষকদের কাছে।

ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স এন্ড ল’ মন্ত্রী ঝাপাত বোহরার মতে, আত্মকর্মসংস্থান এবং ভর্তুকি বিষয়ক কর্মসুচিতে অর্থ বরাদ্দ রেখেছে সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, শিল্প, পর্যটন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং কৃষি, ভূমি সংস্কার বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তিনি আরো বলেন, এসব কর্মসূচি এখন বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে বলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সব ফেরত আসা লোককে কাজ দিতে পারি নি। কর্মসূচি বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে। এই অর্থবছরেই এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য তিনি জনগণকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান। সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডাটা অনুযায়ী, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে সুদূরপশ্চিম প্রদেশের ৩ থেকে ৪ লাখ নেপালি ভারত ও বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status