শেষের পাতা

বাজারে নাভিশ্বাস

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার, ৮:৫১ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। পিয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শাক-সবজির দামও। বেড়েছে শিম, টমেটো, কাঁচা মরিচ ও পটলসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। দাম নিয়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে আড়তসহ পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজারে। প্রায় প্রতিটি পণ্যই পাইকারি বাজারের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই দুঃসময়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় কর্মহীন ও অল্প আয়ের মানুষকে বাজার করতে এসে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, হাতিরপুল, শান্তিনগর, মালিবাগ বাজার ঘুরে বিক্রেতা-ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়। মালিবাগ বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পিয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫, চায়না আদা ১৮০, দেশি আদা ১২০, দেশি রসুন ১২০, চায়না রসুন ৯০ ও আলুর কেজি ৪০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। কাঁচা মরিচ কেজি ১৬০, শিম ১৬০ থেকে ১৮০, পটল ৫০ থেকে ৫৫, ঢেড়স ৬০, করলা ৬০ ও ধনেপাতা ১২০ টাকা। তবে দাম কমেছে মুরগির। কেজি প্রতি গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ টাকা করে কমিয়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১১৫, লেয়ার ২২০ ও কক মুরগি ২৪০ টাকা। এছাড়া দেশি মসুর ডালের কেজি ১১০ থেকে ১২০ ও ভারত থেকে আমদানি করা ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। শুকনো মরিচ ও হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকায়। সবজিসহ নিত্যপণ্যের এমন দামে ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। গতকাল সকালে বাজার করতে মালিবাগ কাঁচা বাজারে আসেন মনজুর রহমান নামের এক ক্রেতা। সবজির দাম জানতে ঘুরছেন দোকানে দোকানে। তিনি বলেন, শুধু পিয়াজ নয়। বাজারে সব সবজির দাম চড়া। গত কয়েকদিন বাজারে সবজির দাম বেশি। শিম, টমেটোর দাম মাছ ও মুরগির মাংসের চাইতে বেশি। মাছ কিনলেও সবজি কিনতে পারছি না দাম বাড়তির কারণে। কাঁচা বাজার করতে আসলে পকেট শূন্য হয়ে যায়। অনেক মানুষ আছেন যারা দিন আনে দিন খায়। তারা এখন সবজি কিনতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের সারাদিনের উপার্জনের টাকা দিয়ে চাল কিনবে নাকি সবজি কিনবে? বাজার তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা চাহিদার উপর নির্ভর করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। বাজারে সবজির কোনো কমতি নেই। টমেটো, শিম, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বেগুন, মুলা, পালং শাক, লাউ শাক সবকিছুই ভরপুর। তারপরও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়লেও অধিকাংশ সবজির দাম আগের দামেই বিক্রি করছেন তারা। এ ছাড়া সরবরাহ কম থাকায় টমেটো, শিম, কাঁচা মরিচ ও শসার দাম বেড়েছে। বাজারে শিম চাহিদার তুলনায় অনেক কম তাই এর দামও বেশি। টমেটো বিদেশ থেকে এলসি করা। দেশে আসতেই এর পিছনে খরচ বেশি হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। হাতিরপুল কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, শাক-সবজি, চাল, ডাল, তেল, মরিচ, ডিম, আলু, মাছ ও মাংস থাকার পরও বাজারে স্বস্তি নেই। এখানে দেশি পিয়াজের কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ১০০ টাকায়। আমদানি করা পিয়াজ ৮০ টাকা। চায়না আদা ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কেরালা আদা ১৬০ টাকা, চীন থেকে আমদানি আদা ২৪০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি। পেঁপে, ঢেড়স, পটোল, কচুরমুখি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। বেগুনের কেজি ৬০-৮০ টাকা, বরবটি ৮০-৯০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা এবং আলু ৪০ টাকা। এ ছাড়া মিনিকেট, নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫৬ থেকে ৬৪ টাকা। ভারতীয় মসুর ডাল ৮০-৮৫ টাকা কেজি, দেশি ছোট দানার মসুর ডাল ১২০ টাকা। কয়েকজন ক্রেতা জানান, এখানকার ব্যবসায়ীরা কাওরান বাজার থেকে পাইকারি দরে সবজিসহ নিত্যপণ্য ক্রয় করেন। ফলে তারা অল্প দামে কিনে মাত্র এক কিলোমিটারের চাইতে কম দূরত্বে সে সব সবজি কেজি প্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করেন। ক্রেতাদের সময় সল্পতা আর রাস্তা ক্রসিং-এর কারণে কাওরান বাজার না গিয়ে বাড়তি দামে এখান থেকে কিনতে হয়। দাম বেশি হওয়ার সাধারণ ত্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী সবজি কিনতে পারছেন না। রেজাউল করিম নামের এক ক্রেতা জানান, ৫০০ টাকা নিয়ে বাজার করতে আসলাম। ৩ কেজি চাউল, এক কেজি পিয়াজ, আর ১২০ টাকার মাছ কিনেছি। ভরা মৌসুমেও সবজির দাম না কমায় আমার মতো নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়ছেন।

এদিকে, সবজির আড়ত ও পাইকারি বাজার কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে রয়েছে ভেদাভেদ। শাক-সবজির দাম স্থান ভেদে ভিন্নতা রয়েছে। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে দামের পার্থক্য রয়েছে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এখানে পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, ঢেড়স ও করলা ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১১০ থেকে ১৮০ টাকা, আলু ৩৪-৩৭ টাকা, নাটোরের রসুন ৯০-১০০ টাকা, চায়না রসুন ৭৫ টাকা, চায়না আদা ২২০ টাকা, কেরালা আদা ১৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান মরিচ ২৪০ টাকা, দেশি হলুদ ১৭০-২৫০ টাকা, ইন্ডিয়ান হলুদ ১৬০-২০০ টাকা। এ ছাড়া দেশি পিয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা। আমদানি করা পিয়াজ ৬৪-৬৮ টাকায় বিক্রি করছে। অথচ আড়ত, পাইকারি বাজার, খুচরা বাজার কোথাও পিয়াজের ঘাটতি নেই। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতাদের অস্বাভাবিক আচরণেই দাম বেড়েছে পিয়াজের। ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে ক্রেতারা বেশি করে কেনায় দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তা না হলে এত দ্রুত বাড়তো না।

কাওরান বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা মো. রব্বানী মিয়া জানান, গত ১৫ দিন ধরেই সবজির দাম বেশি। গত সপ্তাহের দামেই এখন সবজি বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া টমেটো ও শিম এই সময়ের ফসল না হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। এসব সবজি আগের চাইতে বাজারে অনেক কম আসে। এই কারণে টমেটো ও শিমের দাম বাড়তি।

কাঁচা মরিচ বিক্রেতা মো. হাবিবুর রহমান বাবুল জানান, তিনি পাইকারি ও খুচরা দরে বিক্রি করেন। গতকাল শুক্রবার কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে মরিচ বিক্রি করেছেন। দেশে বন্যার কারণে মরিচের দাম বেড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, মরিচের দাম এখন অনেক কমেছে। কয়েকদিন আগেও তিনশ’ টাকা দরে মরিচ বিক্রি করেছেন। বর্তমানে ভারত থেকে মরিচ আমদানি করা হচ্ছে। কাওরান বাজারে আসা ক্রেতারা জানান,বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজি আছে। তবুও দাম কমছে না। একেক বাজারে একেক দাম। ব্যবধান থাকে ২০ থেকে ২৫ টাকার মতো। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে বিপাকে পড়তে হয়েছে। সরকার নিয়মিত বাজার মনিটরিং করলে এমনটি হতো না বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status