দেশ বিদেশ

টিআইবি’র গবেষণা

রাজনৈতিক প্রভাব ও সিন্ডিকেটের কারণে ই-জিপি’র সুফল মিলছে না

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি’র (ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) প্রবর্তনের ফলে ক্রয় প্রক্রিয়া সহজতর হলেও কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ, সিন্ডিকেটের কারণে সুফল মিলছে না বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবি বলছে, ই-জিপি প্রবর্তনের ফলে ম্যানুয়াল থেকে কারিগরি পর্যায়ে সরকারি ক্রয়ের উত্তরণ ঘটলেও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের একাংশ দুর্নীতির নতুন পথ খুঁজে নিয়েছে। বুধবার ‘সরকারি ক্রয়ে সুশাসন: বাংলাদেশে ই-জিপি’র কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ’- শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তথ্য সংগ্রহের জন্য ই-জিপি বাস্তবায়নকারী প্রথম দিকের চারটি প্রতিষ্ঠান- স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)-কে বাছাই করে ৫২টি কার্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।
গবেষণার ফলাফলে টিআইবি বলছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের অবস্থানই ‘ভালো নয়’। ই-জিপি ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং কার্যকরতায় অবস্থান উদ্বেগজনক। দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা, নিজেরা কাজ না করে কম্পিউটার অপারেটরদের মাধ্যমে মূল্যায়ন রিপোর্ট তৈরি করানো, নম্বর বাড়িয়ে-কমিয়ে আনুকূল্য দেয়া ইত্যাদির অভিযোগ রয়েছে। অফিস কর্মকর্তা কর্তৃক ঠিকাদারদের রেট শিডিউল জানিয়ে দেয়া, লিমিটেড টেন্ডার মেথড (এলটিএম)-এ কার্যাদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ঘুষ আদায় করার অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া কাজ তদারকি, অগ্রগতি প্রতিবেদনে ভুল তথ্য দেয়া, কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বিল তুলতে ঘুষ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। তথ্যদাতাদের মতে ই-জিপি’র কারণে কাজ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কাজ বিক্রি করার কারণে তা নষ্ট হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ই-জিপি’র প্রবর্তন হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম এর ফলে সরকারি ক্রয় খাতে সুশাসন ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আশানুরূপ ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো ই-জিপি’র ফলে ক্ষেত্রবিশেষে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাজের মানোন্নয়নে এর কোনো প্রভাবই পড়েনি। ই-জিপি ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং কার্যকরতার মতো তিনটি মৌলিক ক্ষেত্রেই অবস্থান উদ্বেগজনক। এর পেছনে মূলত রাজনৈতিক প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমাদের দেশে রাজনীতিকে সম্পদ বিকাশের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। যা থেকে সরকারি ক্রয় খাতও মুক্ত নয়। তিনি আরো বলেন, ই-জিপি’কে রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ ও সিন্ডিকেটের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত করতে সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও জনগুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ব্যবসায়িক সম্পর্কের সুযোগ বন্ধ করতে হবে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল ও সার্বিক পর্যবেক্ষণের আলোকে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা উত্তরণে এবং ই-জিপি’র কার্যকর সুফল পেতে টিআইবি ১৩ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ই-জিপি’কে রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ ও সিন্ডিকেটের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত করতে হবে; সেই লক্ষ্যে সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও জনগুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ব্যবসায়িক সম্পর্কের সুযোগ বন্ধ করতে হবে; প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ক্রয় ই-জিপি’র মাধ্যমে করতে হবে; কাজের চাপ ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে জনবল বাড়াতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন টিআইবি’র আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status