বাংলারজমিন

কিশোরগঞ্জে যানজট নিরসনের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:০০ পূর্বাহ্ন

প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়ের নিয়ম না থাকলেও কিশোরগঞ্জ শহরে যান চলাচলে শৃঙ্খলা ও যানজট নিরসনের নামে সেই কাজটিই করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যানবাহন থেকে এই চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদ করেছে একটি শ্রমিক সংগঠন। সংগঠনটি চাঁদাবাজির প্রতিবাদে বেশ কিছুদিন ধরে মানববন্ধন, স্মারকলিপি দেওয়া ও সমাবেশ করাসহ লাগাতার আন্দোলন করছে। পুলিশ বলছে, শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা দেখাশোনার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের। এটি অন্য কারও কাজ না।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের যানজট কমানোর লক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি গত ৫ই জুলাই জুমে একটি বৈঠক করে। এতে ৩৭টি বিষয় বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে শহরতলীর ১৩টি স্থানে ইজিবাইক স্ট্যান্ড ও পাঁচটি স্থানে সিএনজি স্ট্যান্ড স্থাপন, শহরে চলাচল করা যানবাহনের সংখ্যা নির্ধারণসহ গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু সিদ্ধান্ত রয়েছে। শহরের যানজট কমানোর এ উদ্যোগকে সংশ্লিষ্ট সবাই স্বাগত জানায়। তবে ৩৭ সিদ্ধান্তের মধ্যে যানবাহন থেকে কোনো ধরনের চাঁদা আদায়ের সিদ্ধান্ত ছিল না।
অভিযোগ উঠেছে, ‘যানজট নিরসনে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, মিশুক ও রিকশা ইত্যাদি যানবাহন নিয়ন্ত্রণের লক্ষে গঠিত কমিটি’ ওইসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেয়ে এমন কিছু বিষয়ে কাজ করছে, যা সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তারা এখন স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে কমিটি গঠন করছে। যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রতি স্ট্যান্ডে কয়েকজন করে কর্মী নিয়োগ (যাদের দৈনিক বেতন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা) করেছে। আর এইসব কর্মীর বেতন পরিশোধের দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যানবাহনগুলোর ওপর। মাসে প্রত্যেকটি ইজিবাইকের ওপর ৬০০ টাকা করে চাঁদা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে ইজাবাইক শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিশোরগঞ্জ পৌর ইজিবাইক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম সৈয়দ বলেন, আগে আমরা বিভিন্ন সংগঠনের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ছিলাম। এখন স্ট্যান্ডগুলোতে প্রশাসনের নিয়োগ দেওয়া কর্মীরা চাঁদাবাজি করছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, চাঁদা আদায় ছাড়া প্রশাসনের যেকোন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আর স্ট্যান্ডের যানবাহন চলাচলের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ট্রাফিক পুলিশের হাতে থাকা প্রয়োজন। এটি অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করলে আরও বিশৃঙ্খলা বাড়বে। তিনি জানান, তাদের হিসাব মতে শহর ও শহরের বাইরের অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার ইজিবাইক চলাচল করে (যদিও প্রশাসনের হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার)। যা থেকে অন্তত কোটি টাকা চাঁদা আদায় হওয়ার কথা। এসব টাকা কীভাবে খরচ হবে। এগুলো কেউ জানে না। ফলে পুরো বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যানজট নিরসনে ব্যটারিচালিত অটোরিকশা, মিশুক, রিকশা ইত্যাদি যানবাহন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শহরের যানজট নিরসনে ১১টি ইজিবাইক স্ট্যান্ড ও আটটি সিএনজি স্ট্যান্ড স্থাপন করা হয়েছে। এসব স্ট্যান্ডগুলো সু-শৃঙ্খলভাবে চালাতে প্রতিটি স্ট্যান্ডে ব্যবস্থাপনা কমিটি করা হয়েছে। আর প্রতি স্ট্যান্ডে ১০ জন করে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের বেতন পরিশোধের জন্য প্রতি ইজিবাইকপিছু মাসিক ৬০০ টাকা চাঁদা ধার্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে অনেক লোকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। এ উদ্যোগকে বেশিরভাগ ইজিবাইক শ্রমিক সমর্থন করেছে। অল্প সংখ্যক লোক এর বিরোধিতা করছে। একটি ভালো উদ্যোগকে অহেতুক বির্তকিত করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এটি দেশে যানজট নিরসনে একটি মডেল ব্যবস্থাপনা হবে। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) এর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, যে কোনো ধরনের চাঁদা আদায় অবৈধ।
আর যানবাহন চলাচল, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব পুলিশের।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status