শেষের পাতা

পল্টনে জাল টাকার কারখানা, শাহীনকে খুঁজছে ডিবি

মরিয়ম চম্পা

১৬ আগস্ট ২০২০, রবিবার, ৯:০৮ পূর্বাহ্ন

পল্টনে জাল টাকার কারখানার প্রধান শাহীনকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাল টাকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পর্কেও অজানা অনেক তথ্য জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) গুলশান টিম। তারা জানিয়েছেন, জাল টাকা তৈরির এই চক্রের প্রধান শাহীনকে আমরা ২০১১ সালে গ্রেপ্তার করি। এরপর সে জামিনে বেরিয়ে আসে। পরবর্তীতে ২০১৩ ও ২০১৫ সালে আবার গ্রেপ্তার করা হলেও জামিনে বেরিয়ে ফের একই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। সে মূলত বছরের পর বছর ধরে জাল টাকা তৈরি করছে। পল্টনে অভিযান চলাকালে শাহীনকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তাকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পরবর্তীতে আরো সাড়ে চার লাখসহ মোট সাড়ে ৬১ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। সূত্র জানায়, পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত অনেকগুলো ছাঁচ উদ্ধার করা হয়। চক্রের মূল হোতা শাহীন ঘটনার দিন ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে বেশ কয়েক লাখ জাল টাকা বিক্রির উদ্দেশে বেরিয়ে যায়। এক নারীসহ মোট ৫ গ্রেপ্তারকৃতদের ইতিমধ্যে দুইদিনের পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদলত।

ডিবি জানায়, তাদের মধ্যে বিশেষ কাগজ  তৈরিকারক হচ্ছে কাওসার। জাল টাকা তৈরিতে যে কাগজ ব্যবহৃত হয়েছে সেটা যত উন্নত হবে জাল টাকার কোয়ালিটি তত ভালো হবে। প্রিন্টম্যান ও ইঞ্জিনিয়ার হান্নান। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত অন্য আসামি ইব্রাহিম চক্রের মূল হোতা শাহীনের নির্দেশে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নির্দেশিত লোকের কাছে জাল টাকা সরবরাহ করতো। নারী কর্মী খুশির সঙ্গে আরো এক নারী কাজ করতো। তিন মাসের বাচ্চা থাকায় এবং এ বিষয়ে তেমন কিছু না জানায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। খুশি বাসা বাড়িতে কাজ করার পাশাপাশি জাল টাকা তৈরিতে নানাভাবে সহায়তা করতো এ চক্রকে। তারা ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় জাল টাকা সরবরাহ করতো। দৈনিক সর্বনিম্ন ৩ লাখের নিচে তারা জাল টাকা ছাপতো না। প্রতি এক লাখ টাকা ছাপাতে তাদের খরচ পড়তো ৮ থেকে ৯শ’ টাকা।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, উৎপাদনের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা সরাসরি নিজেরা বাজারে টাকা বিক্রি করে না। তারা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে লাখ প্রতি ৯ থেকে ১৩ হাজার টাকা দরে। পাইকারি ক্রেতাদের নিজস্ব খুচরা ক্রেতা আছে। তাদের কাছে প্রতি এক লাখ টাকা ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। খুচরা বিক্রেতারা তাদের নিজের স্ত্রী-সন্তানদেরকে বিক্রির কাজে যুক্ত করে। এক্ষেত্রে নাটকীয়ভাবে শিশুদের ব্যবহার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, খুব বেশি ভিড়ের মাঝে পণ্য ক্রয়ের নামে এই জাল টাকাগুলো শিশুদের দিয়ে দোকানিকে গছানো হয়। কাপড়, কসমেটিকস, মুদি দোকান তাদের প্রথম টার্গেট। কারণ, শিশুদের কেউ সন্দেহ করে না। শিশুরা এক্ষেত্রে নিরাপদ বাহন হিসেবে কাজ করে। এক হাজার টাকার নোট দিয়ে একদিকে যেমন আড়াইশ’ টাকার পণ্য পেলো একই সঙ্গে সাড়ে ৭শ’ ফ্রেশ টাকা পেয়ে যায়। এক্ষেত্রে দোকানদার যখন বুঝতে পারে সে নকল টাকা দিয়ে ধরা খেয়েছে তখন সেও অন্য জনের টাকার বান্ডিলে এটা পাচার করে দেয়। এভাবে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে জাল টাকা ছড়িয়ে দেয় চক্রটি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status