অনলাইন

আইওএম-এর গবেষণা

বিদেশফেরত ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি জীবিকা সঙ্কটে

স্টাফ রিপোর্টার

১২ আগস্ট ২০২০, বুধবার, ১:৫৫ পূর্বাহ্ন

দেশে ফিরে আসা শতকরা ৭০ শতাংশ প্রবাসী কর্মী জীবিকা সঙ্কটে রয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই ৬ মাসে বিদেশফেরত বাংলাদেশিদের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। গত সোমবার আইওএম এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে গবেষণার এ ফলাফল তুলে ধরে। বাংলাদেশ এবং আঞ্চলিক পর্যায়ের জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি এবং স্থানীয় সংস্থা, এবং শিক্ষা সংস্থার অংশীদারগণ এই ব্রিফিং-এ অংশ নেন।

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে মোট ১ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশফেরত অভিবাসীদের ওপর পরিচালিত জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আইওএম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ‘রিজিওনাল এভিডেন্স ফর মাইগ্রেশন এনালাইসিস অ্যান্ড পলিসি (রিমেপ)’ প্রকল্পের আওতায় মে এবং জুলাই মাসে দেশের ১২টি উচ্চ অভিবাসন প্রবণ জেলায় এই জরিপ পরিচালনা করা হয়, যার মধ্যে সাতটি জেলায় ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেরত আসা অভিবাসীরা জীবিকা, আর্থিক সংকট (উপার্জনের অভাব এবং বর্ধিত ঋণ) এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়সহ পুনঃরেকত্রীকরণে নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। একেকজন অভিবাসী কর্মী গড়ে তার পরিবারের তিনজন সদস্যকে সহায়তা প্রদান করে থাকেন। সেক্ষেত্রে, অপরিকল্পিত ও বৃহৎ সংখ্যক জীবিকাহীন অভিবাসী কর্মীদের ফেরত আসার ফলে সারাদেশে রেমিটেন্স নির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

কোভিড-১৯ এর প্রভাবে অভিবাসী কর্মীদের সুনির্দিষ্টভাবে বিপদাপন্নতা তৈরী হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে উপার্জন ব্যবস্থা, সামাজিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সহায়তার নেটওয়ার্কের অভাবে হাজারো অভিবাসী কর্মী  প্রবাসে যে দেশে কাজ করছিলেন সেখানে থেকে বাংলাদেশে তাদের জেলায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। মোট ৬৪ শতাংশ আন্তর্জাতিক অভিবাসী উল্লেখ করেন যে, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে তাদের কর্মস্থল দেশে তথ্য এবং স্বাস্থ্যসেবা পেতে তাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোট ২৯ শতাংশ বলেছেন, যে দেশে তারা ছিলেন, সেই দেশের সরকার তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত আসতে বলে। ২৩ শতাংশ জানান, তারা কোভিড-১৯ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এবং পরিবারের কাছে ফেরত আসতে চেয়েছেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৬ শতাংশ জানান, তাদের পরিবার তাদের ফেরত আসতে বলায় তারা ফিরে এসেছেন। ৯ শতাংশ জানান, তাদেরকে বলা হয়েছে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে আটকে পড়ার ভয়ে তারা ফেরত এসেছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাক্ষাৎকার প্রদানের সময় মোট ৫৫ শতাংশ জানান, তাদের ওপর শোধ না করা বর্ধিত ঋণের বোঝা রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ পরিবার ও বন্ধুর কাছে ঋণগ্রস্ত, ৪৪ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফআই), স্বনির্ভর দল এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণগ্রস্ত। ১৫ শতাংশ পাওনাদারদের কাছে ঋণগ্রস্ত। পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণকারীদের ৮৬ শতাংশ বিনাসুদে ঋণ নিয়েছেন, অন্যদিকে এমএফআই, এনজিও এবং বেসরকারি ব্যাংকসমূহ থেকে গৃহিত ৬৫ শতাংশকে ঋণের জন্য সুদ বহন করতে হচ্ছে ১০-১৫ শতাংশ। মহাজন বা সুদে টাকা ধার দেন এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে নেয়া ঋণের ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ ঋণগ্রহীতাকে সুদ গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ শতাংশ।

সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণকারীরা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে প্রায় ৭৫ শতাংশ জানান, তারা আবার অভিবাসনে আগ্রহী। তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পূর্বে যে দেশে কাজ করতেন, সেই দেশেই পুনরায় অভিবাসনে ইচ্ছুক। অপরদিকে, ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আরো ভালো বেতনের চাকরি নিশ্চিতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী।

আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় সবচেয়ে বিপদাপন্ন গোষ্ঠীদের মধ্যে রয়েছেন অভিবাসী কর্মীরা। বৈশ্বিক চলাচলের ওপর আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং কোভিড-১৯ মহামারি সৃষ্ট মন্দার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী এবং রেমিট্যান্স নির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপর।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন বিষয়ক গবেষণায় অবদান রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই গবেষণা বিদেশফেরত অভিবাসীদের টেকসই পুনঃরেকত্রীকরণে প্রমাণ-ভিত্তিক কৌশল তৈরীতে সরকারি প্রচেষ্টাকে সাহায্য করবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status