বাংলারজমিন

চট্টগ্রামে উচ্ছিষ্ট শুধু চামড়াই!

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

৫ আগস্ট ২০২০, বুধবার, ৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

৫ বছর আগেও কোরবানির পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক পাশে পড়ে থাকত নাড়ি-ভুড়িসহ নানা উচ্ছিষ্ট। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কার্যকর উদ্যোগে এখন তা আর দেখা যায় না। গত ৩-৪ বছরের মতো এবারও কোরবানির পরদিন বিকেলের মধ্যেই সরানো হয়েছে সব উচ্ছিষ্ট। তবে এসব উচ্ছিষ্টের মধ্যে কোন নাড়ি-ভুড়ি বা হাড়-গোড় কিছুই ছিল না। ছিল শুধু পশুর চামড়াই। যাকে এক সময় বলা হতো নরম সোনা। যা থেকে আসে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা। আর এই উচ্ছিষ্টের পরিমানটাও কম নয়। পুরো ২২ হাজারের মতো। যার অংশীদার দেশের অসহায় গরিব মানুষেরা। যারা কোরবানিদাতার মাধ্যমে পেয়ে যেত নরম সোনা খ্যাত এসব চামড়া বিক্রয়ের অর্থ। কিন্তু কোরবানি দাতারাই এখন পাচ্ছেন না এসব চামড়ার মূল্য। ফলে চামড়া এখন সোনা নয়, উচ্ছিষ্টে পরিণত হয়েছে। কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। তিনি বলেন, রবিবার বিকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও জামেয়া আহম্মদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা থেকে ২২ হাজার মতো পশুর চামড়া ময়লার ডিপোতে ড্যামিপং করা হয়েছে। যার সবগুলোই নষ্ট। এসব থেকে ৪ হাজার চামড়া নিয়ে গেছে ভোক্তা অধিকার সংস্থা। ভোক্তা অধিকার সংস্থার মতে, উচিৎ মূল্য না পাওয়ায় চট্টগ্রামে এবারও হাজার হাজার চামড়া সড়ক পাশে ফেলে গেছে কোরবানি দাতারা। যেগুলো সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, মূল্য না পাওয়ায় নগরীর আতুরার ডিপোতে লাখ লাখ চামড়া নষ্ট হওয়ার পথে।  
চট্টগ্রাম মহানগরীর এশিয়ান হাউজিং সোসাইটির কোরবানি দাতা সামশুর রহমান জানান, মৌসুমী ব্যবসায়ী চক্র কোরাবানি দাতাদের জিম্মী করে প্রতিটি গরুর চামড়া গড়ে ১০০ টাকায় কিনেছে। ছাগলের চামড়া ফ্রি হলে নিয়ে গেছে। ফলে অনেক কোরবানিদাতা রাগ করে চামড়া নিকটস্থ মাদ্রাসায় দান করেছে। মাদ্রাসায় যারা দিতে পারেনি তারা সড়ক পাশে ফেলে গেছে। অন্যদিকে কোরবানির দিন দুপুর থেকে নগরীর আতুরার ডিপো থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত রাস্তায় চামড়ার হাট বসলেও ক্রেতা নেই। কয়েকজন ক্রেতা থাকলেও তারা গড়ে ১৫০ টাকার উপরে দাম দিতে রাজী নয়। যা থেকে গাড়ী ভাড়ার খরচও জুটবে না বলে জানান মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।  
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আতুরার ডিপো এলাকার আড়তদার চক্র সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও একেবারে কমমূল্যে গড়ে ১২০-১৫০ টাকা দরে চামড়া কিনতে চাচ্ছে। ফলে চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। সংগৃহীত চামড়া এখন উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।  
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের জানান, চট্টগ্রামে প্রতিবছর ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারনে এবার ৪ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। সমিতিভুক্ত ১১২ জন ও এর বাইরে ১৫০ জন আড়তদার এবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছেন। কিন্তু মৌসুমি চামড়া বিক্রেতাদের চাহিদা মতো তারা চামড়া সংগ্রহ করতে পারছেন না। চট্টগ্রামে ট্যানারি না থাকায় ঢাকা ট্যানারি মালিকদের মর্জি মতে তারা চামড়া সংগ্রহ করতে।  বাধ্য হচ্ছেন। আড়তদার জানান, প্রথম দিকে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বেশি দাম চাওয়ায় কিনতে পারেননি। নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর নামমাত্র মুল্যে দিতে চাইলেও সংরক্ষণের অভাবে চামড়ার মান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা আর কিনছেন না। বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, গত বছর ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামে প্রায় ১ লাখ চামড়া নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দাম না পেয়ে চামড়া রাস্তায় ফেলে চলে গিয়েছিলেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। এই ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status