বাংলারজমিন

যে কারণে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কর্মকান্ড স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার সিলেট থেকে

৩ আগস্ট ২০২০, সোমবার, ৭:৩০ পূর্বাহ্ন

হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সকল সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি। গত ৩০ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারন সম্পাদক লেখক ভট্রাচার্য এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে সংগঠনের নীতি-আর্দশ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকায় মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী মাহতাবুর রহমান জাপ্পিকে বহিস্কার করা হয়েছে।
এই আদেশের মধ্য দিয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে চলমান অস্থিরতার সমাপ্তি ঘটেছে। পদ পাইয়ে দিতে এক কর্মীর কাছে ২০ লাখ টাকা গ্রহনের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছিলো হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগে। বিষয়টি নিয়ে বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা জাপ্পির ভাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টাকা নেওয়ার বিষয়টিও উপস্থাপন করেন। মাহতাবুর আলম জাপ্পি মাধবপুরের মনতলা কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী। জাপ্পির সঙ্গে হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজ শাখার এক নেতার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। কয়েক মাস আগে মাধমপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ওই সময় হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের ওই ছাত্রলীগ নেতা জাপ্পির আমেরিকা প্রবাসী ভাই শাহীনকে ফোন করেন। তিনি জাপ্পিকে মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি পদ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান তার সঙ্গে কথাও বলবেন বলে জানান ওই নেতা। সাইদুর ফোনে কথা বলেন আমেরিকার টেক্সাসে অবস্থানরত জাপ্পির ভাই শাহীনের সঙ্গে। ছোট ভাইকে কমিটিতে স্থান পাইয়ে দিতে তার কাছে ২০ লাখ টাকা চান সাইদুর। তিনি এতে রাজি হয়ে যান। আমেরিকা প্রবাসী শাহীন ৭ হাজার ৮০০ ডলার সাইদুরের এক আত্মীয়ের একাউন্টে জমা করে গত ১৮ মে। গত ১০ মে বাংলাদেশে সাইদুরের ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্টে ২ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা দেন। বাকি টাকা নগদে জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৫০ হাজার টাকা সাইদুরের একাউন্টে জমা দেওয়া হয়। ভোক্তভোগিদের অভিযোগ- জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহিকে ৯ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে নগদে ৫ লাখ ও চেকে ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। টাকা পেয়ে গত ১৮ মে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত ছাত্রলীগের প্যাডে- ‘আগামী এক বছরের জন্য মাধবপুর উপজেলা শাখার অনুমোদন দেয়া হইল।’ এতে সভাপতি শহীদ আলী শান্ত ও সাধারণ সম্পাদক মাহতাবুর আলম জাপ্পির নাম রয়েছে। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর উপজেলা কমিটি নিয়ে জালিয়াতি করায় সবকিছু ফাস করে দেন প্রবাসী শাহীন। ভুক্তভোগীরা জানান, পদ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভনে হাতিয়ে নেওয়া ২০ লাখ টাকার মধ্যে ১১ লাখ নেন হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান। আর ৯ লাখ টাকা নেন সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি।
আমেরিকা প্রবাসী শাহীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারিনি তারা এতোবড় প্রতারণা করবে। আমি সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়েছি। এখন টাকা পেয়ে পদতো দিচ্ছেই না, পাল্টা অস্বীকার করছে। তিনি অথচ আমার কাছে যে এসবের প্রমাণ রয়েছে তা তারা হয়তো জানে না। ছোট ভাই জাপ্পির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তার বয়স যখন ৮ বছর তখন থেকে আমরা দুই ভাই আমেরিকায় চলে আসি। এখানে ব্যবসা বাণিজ্য করছি। ছোট ভাইয়ের কোন আবদার আমরা অপুরণ রাখিনি। তাছাড়া পদের জন্য টাকা দেওয়া যে অপরাধমুলক কাজ সেই বিষয়টাও আমার মাথায় আসেনি। তিনি বলেন, আমি সরল মনে তাদেরকে টাকা দিয়েছি। এখন ওরা তার পদ দেবে দুরের কথা বিভিন্নজনকে দিয়ে আমাদেরকে মুখ বন্ধ রাখতে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মাহী গণমাধ্যমকে বলেন- ‘তাদের অভিযোগ মিথ্যে। ছাত্রলীগের অফিসিয়াল প্যাডে মাধবপুরের উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেয়া আছে। টাকা লেনদেনের চেক, অডিও রেকর্ড, ক্যাশ রিসিভ ও অন্যান্য ডকুমেন্টস প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরনের সব অভিযোগ মিথ্যে। প্রমাণ থাকলে অবশ্যই নিউজ করবেন। তাতে আমার কোন অসুবিধা নেই। যা খুশি নিউজ করেন। আমাদের কেউ কিছু করতে পারবে না।’ হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমানও অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন- ‘কিছুদিন ধরে  ধরেই শাহীনের সঙ্গে আমার কথা হতো। এসব কথা রেকর্ড করে রেখেছে সে। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য না।’ তিনি বলেন, ‘শাহীন একটা প্রতারক। নিজেকে আমেরিকান একটি বাহিনীর পরিচয় দেয় সে। এর কোন প্রমাণ আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে কোন রেকর্ড নেই।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status