এক্সক্লুসিভ

ক রো না

বিধ্বস্ত থাইল্যান্ডের পর্যটন খাত

মানবজমিন ডেস্ক

২৬ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

পর্যটনের দেশ বলে পরিচিত থাইল্যান্ডের সমুদ্র সৈকত অথবা বারগুলো খাঁ খাঁ করছে। মানুষের চিহ্নও নেই। সারা বিশ্বের পর্যটকে এ দেশটির আনাচে কানাচে সাধারণ সময়ে কিলবিল করে। বিকিনি পরিহিত যুবতীর উদ্দামতায় নেচে ওঠে রাতের পাতায়া হোটেল, রেস্তরাঁ। তার মাঝে জীবনের সবটুকু জীর্ণতা, জ্বরাকে ধুয়ে মুছে নতুন প্রাণশক্তি অর্জন করেন পর্যটকরা। কিন্তু এসব চিত্র যেন এখন অতীত, কল্পনা। করোনা সংক্রমণ বিধ্বস্ত করে দিয়েছে থাইল্যান্ডের পর্যটন শিল্পকে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ২০০৪ সালের সুনামি, বার্ড ফ্লু ও সার্স ভাইরাস সংক্রমণের সময় যে পরিমাণ পর্যটক গিয়েছিলেন থাইল্যান্ডে, এবার তার চেয়ে বহু কম সংখ্যক পর্যটক পা রাখছেন সেখানে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।
থাইল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হলো কোহ সামুই। সেখানকার রাস্তায় গা শিউরে ওঠা নীরবতা। চারদিক ফাঁকা। চাওয়েঙ্গের বিচ রোডে সাধারণ সময়ে পার্টিতে যোগ দেয়া মানুষের ভিড়ে পা ফেলা যায় না। সেখানে এখন কিছুই নেই। দোকানপাট সরিয়ে নেয়া হয়েছে দূরে। জনমানব নেই। অথচ করোনা মহামারি হানা দেয়ার আগে এখানে যানজট লেগেই থাকতো। এখন ট্যাক্সিচালকরা রাস্তার পাশে বসে থাকেন। আশা, যদি একজন যাত্রী পেয়ে যান। এখানেই বিকিনি পরিহিত কোনো সুন্দরী সূর্যস্নান করতেন। সুভ্যেনিরের দোকানগুলোতে ঢুঁ মারতেন। নিয়ন লাইটের ম্লান আলোতে নেশা করে বুঁদ হয়ে যেতেন। এখন সেখানকার ফুটপাথে টান টান শুয়ে থাকে কুকুর। সামুইয়ের বালুকাময় সৈকতে মানুষ নেই।
গত বছর প্রায় ৪ কোটি পর্যটক এই দেশটি সফরে গিয়েছিলেন। তারা ছুটেছেন এর অপার সৌন্দর্য্যমণ্ডিত উপকূলরেখায়, অলঙ্কারে সাজানো উপাসনালয়ে অথবা বিখ্যাত সব কুইজিনে। কিন্তু এবার এই ২০২০ সালে ওই সংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ পর্যটক আকর্ষণ করতে এক রকম লড়াই করছে দেশটির ট্যুরিজম অথরিটি অব থাইল্যান্ড (টিএটি)।
এপ্রিলে সব রকম যাত্রীবাহী ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে থাইল্যান্ড। তখন থেকেই সেখানকার পর্যটন খাত স্থবির হয়ে আছে। করোনাভাইরাসে সেখানে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৫৫ জন। মারা গেছেন ৫৮ জন। এ অবস্থায় সেখানে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কম ঝুঁকিপূর্ণ এমন দেশগুলো থেকে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে কবে নাগাদ এ অনুমতি দেয়া হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। এখনো দেশটির সীমান্ত সব বিদেশির জন্য বন্ধ রয়েছে।
এর আগেও থাইল্যান্ড ভয়াবহ সংকট মোকাবিলা করে টিকে আছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৪ সালের সুনামি, বার্ড ফ্লু ও সার্স প্রাদুর্ভাব। কিন্তু করোনা মহামারি সে সব দুর্যোগকে অতিক্রম করে গেছে। এমনটা বলেছেন টিএটির মার্কেটিং যোগাযোগ বিষয়ক ডেপুটি গভর্নর তানেস পেটসুওয়ান। তিনি বলেছেন, এর আগের সংকটগুলোতে রাজস্ব আয় কমেছে এক পঞ্চমাংশ। কিন্তু এবার করোনা মহামারিতে রাজস্ব আয় শতকরা ৮০ ভাগ কম হবে। এর ভয়াবহ একটি প্রভাব পড়বে। তার মতে, থাইল্যান্ডের অর্থনীতি পর্যটনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। জাতীয় প্রবৃদ্ধির শতকরা ২০ ভাগ আসে এ খাত থেকে। এ খাতে পরিবহন, ট্র্যাভেল এজেন্সি, রেস্তরাঁ ও হোটেলে দেশজুড়ে কর্মরত প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ।
সামুইয়ে অসংখ্য মানুষ কয়েক মাস ধরে কর্মহীন। চাওয়েঙ্গে স্থানীয় একটি ম্যাসাজ পার্লারে কাজ করেন জারুনি কাসোর্ন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে তার সহকর্মীরা দিনে ৯০ জন খদ্দেরকে সেবা দিতে পারতেন। কিন্তু এখন বিচ রোডে হাতেগোনা দু’একটি প্রতিষ্ঠান খোলা আছে। সারাদিন কেটে গেলেও সেখানে অনেক সময় একজন খদ্দেরও পাওয়া যায় না। পর্যটক না থাকলে তো ব্যবসা থাকবে না। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ২০ জন স্টাফের মধ্যে বেশির ভাগ এরই মধ্যে ওই দ্বীপ ছেড়ে গিয়েছেন। তারা ফিরে গিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের কাছে।
 জেলেদের একটি গ্রামের আউটডোর মার্কেটে সবেমাত্র নিজের দোকান খুলেছেন তা সিসিউইনোম। তিনি বলেন, বহু মানুষ বলছে আমরা করোনায় মারা যাবো না। আমরা মারা যাবো খাবার না পেয়ে। গত দু’তিনটি মাস খুব কষ্টে কেটেছে সিসিউইনোম ও তার দুই মেয়ের। তিনি বলেছেন, আমরা রান্না করেছি সস্তা খাবার। বেশির ভাগই ভাত আর ডিম খেয়েছি। এখন এই মার্কেটের কিছু অংশ এবং পার্শ্ববর্তী সমুদ্র সৈকতে স্বাভাবিক জীবন ফিরতে শুরু করেছে। সেখানে যেসব দোকানে ডিসকাউন্ট দেয়া হচ্ছে দলবদ্ধ পর্যটক ও স্থানীয়রা সেখানে ঢুঁ মারছেন। কিন্তু পরিস্থিতি আগের মতো নয়।  যেসব পর্যটক কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন তার মধ্যে রয়েছেন থাইল্যান্ডে আটকে পড়া পর্যটক, বিদেশি শিক্ষার্থী ও স্থানীয় থাই নাগরিকরা। সরকার এক্ষেত্রে হোটেল বুকিংয়ে ভর্তুকির প্রস্তাব দিয়েছে। এর মাধ্যমে পর্যটনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সেই সুযোগ নিচ্ছেন এসব মানুষ। নোরা বুরি রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’র জেনারেল ম্যানোর লয়েড মারাভিলে বলেছেন, সরকারের এই উদ্যোগ এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পর্যটক বাড়ছে। তা সত্ত্বেও হোটেলের ১৪৪টি রুমের মধ্যে ফাঁকা প্রায় ১০০টি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status