বাংলারজমিন

বালাগঞ্জে নৌবন্দরের সীমানা নির্ধারণ

মো. আব্দুস শহিদ, বালাগঞ্জ (সিলেট)

১৫ জুলাই ২০২০, বুধবার, ৭:৩৯ পূর্বাহ্ন

কুশিয়ারা নদী এক সময় আপন ঐশ্বর্য্যে ভরপুর ছিল। নদীতে ছোট-বড় ডলফিন, শুশুক, ইলিশসহ বহু প্রজাতির মাছ খেলা করতো। উত্তাল স্রোতে চলতো পাল তোলা নৌকা। লঞ্চ, স্টিমার ও জাহাজ চলতো সারা বছর। ঘাটে ঘাটে ছিল নৌকার ভিড়। ছিল কুলি-শ্রমিকদের কোলাহল। কুশিয়ারা নদীকে কেন্দ্র করে বালাগঞ্জ বাজার, শেরপুর ঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্চ বাজার ছিল সদা কর্মতৎপর সচল নৌবন্দর।
বিস্তীর্ণ জনপদে কুশিয়ারা নদীর সেচের পানিতে হতো চাষাবাদ। অনেক পরিবারের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন ছিল এই কুশিয়ারা। কিন্তু এখন নদীর দিকে তাকানো যায় না। দিন দিন যেনো সংকীর্ণ হয়ে আসছে তার গতিপথ। অথৈই জলের পরিবর্তে কেবল কান্নার সুরই যেনো ভেসে আসে কুশিয়ারার বুক থেকে। তাই তো বছরের অধিকাংশ সময় স্রোতহীন অবস্থায় থাকছে কুশিয়ারা। তাছাড়া বিগত কয়েক বছর যাবৎ নদীতে চর জেগে ওঠায় প্রভাবশালী মহল বিশেষ বালু ব্যবসায় মেতে উঠে। আর অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে নদী পাড়ে দেখা দেয় ভয়াবহ ভাঙন। এদিকে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বালাগঞ্জ এলাকায় নৌবন্দর স্থাপনের লক্ষ্যে সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের টি এ শাখার উপ-সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ২৮শে জুন প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বালাগঞ্জে নৌবন্দরের তফসিলে পশ্চিমে হবিগঞ্জের আজমেরীগঞ্জ উপজেলা ও পূর্বে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে কোন স্থানে নৌবন্দর স্থাপন করা হবে কিংবা কবে নাগাদ এটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে তা উল্লেখ করা হয়নি। নৌবন্দরের সীমানা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জেনে না জেনে এ নিয়ে অনেকেই নানা মন্তব্য করতে শোনা গেছে। কেউ বলছেন- নৌবন্দরের সীমানা নির্ধারণেই কী সীমাবদ্ধ থাকবে? কেউ বলছেন নৌবন্দরের কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সীমানা নির্ধারণে অনেকেই ব্যক্তিবিশেষের কৃতিত্বকে তুলে ধরেছেন। অনেকেই আবার ব্যক্তিবিশেষের কৃতিত্বকে তুচ্ছ করেছেন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যথেষ্ট বরাদ্দ থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে নৌবন্দর স্থাপনের একটি ধাপ এগোলো। ভবিষ্যতে এটি বাস্তবায়নের ঘোষণা আসলে কাজ শুরু হবে।     
বিগত দিনে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালাগঞ্জে নৌবন্দর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার আবেদন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ধাপে ধাপে নদী এলাকার তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরের ২২শে ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এমপি মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নিকট একটি চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়।
১১ই জুলাই বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত একই মঞ্চে একাধিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী বালাগঞ্জে নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণ হয়েছে এটি বাস্তবায়ন হতে অনেক প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ টিম সীমানা নির্ধারণ করা এলাকা পরিদর্শন করবেন। সীমানা নির্ধারণ করা এলাকায় নদীর খনন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এরপর আরো কয়েক দফা পরিদর্শন ও সার্ভে করার পর প্রকল্প হাতে নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮২২ সালে আসামে চা-শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে চালু করা হয় আসাম-কলকাতা নৌরুট। কলকাতা-করিমগঞ্জ ভায়া প্রায় ১২৮৫ কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত কুশিয়ারা নৌপথে ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে স্টিমার ও জাহাজ নোঙর করতো। এর মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ স্টিমার ঘাটে যাত্রা বিরতি ছিল অধিকতর বেশি। তৎকালীন সময়ে কুশিয়ারা নদী দিয়ে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস পরিচালিত হতো। সেগুলো হলো ফেঞ্চুগঞ্চ-করিমগঞ্জ ডেইলি ফিডার সার্ভিস, ফেঞ্চুগঞ্জ- মৌলভীবাজার ভায়া মনুমুখ ফিডার সার্ভিস ও ফেঞ্চুগঞ্জ-মার্কুলী ফিডার সার্ভিস। এ ছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন লঞ্চ ও নৌ সার্ভিস তো ছিলই। যা ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়া পর্যন্ত চালু ছিল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status